ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৭) কামিল শায়েখ উনার প্রতি সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করা মুরীদের জন্য কামিয়াবী হাছিলের কারণ
, ২৪ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০২ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ৩১ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ১৬ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ইলমে তাছাউফ

কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার জবান মুবারক নিঃসৃত কথা মুবারক, আমল মুবারক, আচার-ব্যবহার মুবারক ও আদেশ-নিষেধ মুবারক ইত্যাদির মধ্যে কোন না কোন হিকমত লুকায়িত থাকে যা সার্বিকভাবে মুরীদের জন্য ফায়দা লাভ করার কারণ। যদিও তাৎক্ষনিকভাবে মুরীদ-মুতাক্বিদরা সে সমস্ত বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে পারে না, তাই কামিল শায়েখ যদি এমন কোন কথা বলেন বা আমল করেন যা মুরীদ অনুধাবন করতে পারছে না তখন শায়েখ উনার প্রতি হুসনে যন বিশুদ্ধ রাখবে এবং জিজ্ঞাসা করে জেনে নিবে। তাতেও যদি বুঝে না আসে তাহলে নিজের আক্বল-সমঝের অভাব মনে করে চুপ থাকবে। এতেই মুরীদের কামিয়াবী।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়, এক ব্যক্তি হযরত আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে বাইয়াত হতে আসলো। সে একজন সাধারণ মানুষ, সে জেনেছে ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করার পাশাপাশি একজন কামিল শায়েখের নিকট বাইয়াত হতে হয়। যিকির-ফিকির করতে হয়, ছবক আদায় করতে হয়। এখন কার কাছে সে বাইয়াত হবে? সেজন্য সে একজন কামিল শায়েখ উনার সন্ধান করতে করতে উনার কাছে আসছে। সে ব্যক্তি হযরত আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে এসে বললো, হুযূর! আমাকে বাইয়াত করান। আমি তো শুনেছি একজন কামিল শায়েখের নিকট বাইয়াত হতে হয়, আমি বাইয়াত হতে আসছি। আপনি দয়া করে আমাকে বাইয়াত করান। তিনি তার ছিরত-ছুরত দেখে বুঝলেন সেতো রসম রেওয়াজ বাইয়াত হতে এসেছে। এভাবে বাইয়াত হলে তো হবে না। তখন তিনি তাকে বললেন- তুমি বাইয়াত হতে এসেছ খুব ভালো কথা; কিন্তু বাইয়াত গ্রহণ করে দায়িম-ক্বায়িম থাকা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। তুমি ফেরত যাও। তখন সে ব্যক্তি বললো, না হুযূর! আমাকে বাইয়াত করান। তিনি বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, বাইয়াত হবে তাহলে কালিমা শরীফ পাঠ করো। তখন সে ব্যক্তি পাঠ করলো-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
হযরত আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তোমার কালিমা শরীফ পাঠ শুদ্ধ হয়নি বরং তুমি পড়-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ اَبُو بَكْرٍ شِبْلِى رَسُوْلُ اللهِ
তখন লোকটি বললো, হুযূর! বেয়াদবী মাফ করবেন, আপনি বলেন কি! লোকটি আশ্চর্য হলো। তিনি বললেন, আমি তো আগেই বলেছিলাম, তুমি বাইয়াত হতে পারবে না। তুমি ফেরত যাও। লোকটি চলে গেল। কিছুদূর যাওয়ার পর চিন্তা করলো যে, হযরত আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তো এ যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল। অনেক বড় ওলীআল্লাহ। বিরাট আলেম ও বুযূর্গ ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনি তো কুফরী করতে পারেন না। নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোন হাক্বীক্বত রয়েছে। সে আবার ফিরে এলো। এসে বললো, হুযূর! আমাকে বাইয়াত করান। তিনি বললেন, তুমি পারবে না। সে বললো, আমি জেনেছি আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী। আমি আপনার নিকট বাইয়াত হতে এসেছি। আপনি দয়া করে আমাকে বাইয়াত করান।
হযরত আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তাহলে ঠিক আছে, তুমি কালিমা শরীফ পাঠ করো। তখন সে কালিমা শরীফ পাঠ করলো-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
হযরত আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তোমার কালিমা শরীফ পাঠ শুদ্ধ হয়নি বরং তুমি পড়-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ اَبُو بَكْرٍ شِبْلِى رَسُوْلُ اللهِ
অর্থাৎ “মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই। আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল। ”
সেই ব্যক্তি সেটাই পাঠ করলো, তখন হযরত আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, এখন তুমি তওবা-ইস্তেগফার করো এবং আবার কালিমা শরীফ পাঠ করো-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্য কোন মা’বুদ নেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সে কালিমা শরীফ শোধরায়ে পাঠ করলো।
হযরত আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাকে বললেন, হে ব্যক্তি! মূলত, তোমাকে কালিমা শরীফ পরিবর্তন করা আমার উদ্দেশ্য না। আমার দেখার বিষয়টা ছিল, আমার প্রতি তোমার হুসনে যন কি রকম? আক্বীদা বিশুদ্ধ কি-না? আমার কথায় তুমি চু-চেরা কীল-কাল করো কি-না? কেননা আমার প্রতি তোমার যদি আক্বীদা ও হুসনে যন বিশুদ্ধ না থাকে আর শায়েখের আদেশ পালন করতে গিয়ে যদি চু-চেরা কীল-কাল করো, তাহলে জীবনেও তুমি ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ লাভ করতে পারবে না।
কাজেই আমার আমল-আখলাক, ছিরত-ছুরত, আচার-ব্যবহার, চলা-ফেরা, কথা-বার্তা, আদেশ-নির্দেশ মুবারক ইত্যাদি দেখে যদি অন্তরে বদ ধারণা স্থান পায়, কোন প্রকার চু-চেরা, কীল-কাল করো, আদেশ-নিষেধের খিলাফ কাজ করো, তাহলে এই রসম রেওয়াজ বাইয়াত গ্রহণ করে কোন ফায়দা পাওয়া যাবে না। আমার ছোহবত ইখতিয়ার তোমার কোন কাজে আসবে না। হাক্বীক্বী বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে। যা আদেশ করা হবে তাই শুনতে হবে। তাহলেই কামিয়াবী। পরে তিনি তাকে বাইয়াত করালেন। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬)
২৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪)
২৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২)
২১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১)
২০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৬)
০৮ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৫)
০৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৪)
০৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩২)
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: ইলমে তাছাউফ উনার দৃষ্টিতে বাইয়াত হওয়া সম্পর্কে
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)