ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪২)
শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যখন যা আদেশ করবেন তখন তা পালন করাই মুরীদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের কারণ
, ০৬ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৪ আউওয়াল, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৩ জুন, ২০২৫ খ্রি:, ২১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইলমে তাছাউফ

(২০) মহান মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি যা আদেশ করবেন তা নির্দ্বিধায় পালন করবে। আর যে বিষয়ে নিষেধ করবেন নিসংকোচে তা থেকে বিরত থাকবে। যদিও মুরীদের কাছে তা শরীয়তের খেলাফ মনে হতে পারে; কিন্তু হাক্বীক্বতে তা খেলাফ নয় বরং তা মুরীদের জন্য ভালাই ও কামিয়াবীর কারণ। যা পালনের মাধ্যমে মুরীদের কাঙ্খিত সফলতা অর্জিত হবে।
মূলত: বিনা চূ-চেরায় দ্বিধাহীনচিত্তে শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আদেশ মুবারক পালন করার জন্য যেমন ইলিমের প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অন্তরের বিশুদ্ধতাও।
মহান আল্লাহ পাক উনাকে যেমন উনার বান্দাগণের মধ্যে আলিমগণই বেশী ভয় করেন, হাক্বীক্বীভাবে উনার আদেশ-নিষেধ পালন করেন। উনার পূর্ণ আনুগত্য করেন। ঠিক হাক্বীক্বী মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্যশীল বান্দা বা আল্লাহওয়ালা উনাদেরকে হক্কানী-রব্বানী আলিম বা কঠোর রিয়াজত-মাশাক্কাতকারী, যিকির-ফিকিরকারী মুরীদগণও চিনতে পারেন, ওলীআল্লাহ উনাদের হাক্বীক্বী মর্যাদা-মর্তবাও উনারা অনুধাবন করতে পারেন। যার কারণে উনারা পূর্ণ আনুগত্যশীল হয়ে দ্বিধাহীনচিত্তে শায়েখের আদেশ-নিষেধ পালন করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না।
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, একবার আমিরুল মু’মিনীন, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একজন মুরীদ বিষন্ন মনে উনার দরবার শরীফে উপস্থিত হলেন। তিনি যেমন ছিলেন ফক্বীহ, তেমনি ছূফী সম্প্রদায়ের। তিনি মুরীদকে বিষণœ বদনে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হয়েছে? তোমার এত অস্থির-পেরেশানীর কারণ কি? সেই মুরীদ শায়েখের নিকট আদবের সাথে নিজের পেরেশানীর কারণ বর্ণনা করলেন। বললেন, “হুযূর! আমি বিবাহ করেছি, আমার আহলিয়াকে (স্ত্রী) নিয়ে বাড়ীতে যাওয়ার পথে একদল ডাকাত এসে আমাদের সমস্ত মাল-সম্পদ লুট করে নেয়। আমার স্ত্রীকেও তারা নিয়ে গেছে। অনেক কোশেশ করেও কোন ফল হয়নি। অর্থাৎ সেদিন থেকে এ পর্যন্ত অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি কিন্তু তার কোন সন্ধান পাইনি। ”
মুরীদের কাছ থেকে ঘটনা সব শুনে আমিরুল মু’মিনীন, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শুরুতে কিছুই বললেন না। এদিকে মুরীদের অস্থিরতা ক্রমশঃ বেড়েই চললো। কিন্তু মুর্শিদ ক্বিবলার অনুমতি না পাওয়ায় কোথাও খোঁজ খবর নেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এমনিভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হলো।
উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক উনার কোন কাজই যেমন হিকমত থেকে খালি নয় তদ্রুপ আল্লাহওয়ালা অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবুব মকবুল বান্দাগণের কোন কাজও হিকমত শুন্য নয়।
বেশ কিছুক্ষণ পর আমিরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার জেব হতে একটি দশ টাকা বের করে সেই মুরীদকে দিয়ে পতিতালয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। মুর্শিদ ক্বিবলার নির্দেশ মুবারক শুনে মুরীদ প্রথমে কিছুটা হতভম্ব হলেন। হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সেই মুরীদ ছিলেন মোটামোটি দ্বীনদার, তাছাউফপন্থী। শায়েখের আদেশ মুবারককে অগ্রাধিকার দিতেন।
উক্ত মুরীদ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আদেশের প্রতি কোনরূপ চূ-চেরা, কীল ও কাল না করে মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নির্দেশনা মুতাবিক পতিতালয়ের দিকে রওয়ানা হলেন।
পতিতালয়টি ছিলো খুব মশহুর। ইতিমধ্যে সেখানে খবর ছড়িয়ে পড়েছে যে, এখানে একজন নতুন মেয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। যাকে এখন পর্যন্ত কেউ স্পর্শ করার সুযোগ পায়নি। সেই মুরীদ যখন পতিতালয়ে গেলেন উনাকে দেখে পতিতালয় সংশ্লিষ্ট লোকজন আশ্চর্য হলো। ছূফী সম্প্রদায়ের লোকজনতো এখানে আসার কথা না। কিন্তু পরক্ষণে এটা তাদের পেশা চিন্তা করে কিছু না বলে উনাকে প্রবেশের অনুমতি দিলো। তিনি তখন উনার শায়েখের দেয়া টাকা যথাস্থানে দিয়ে উদ্দেশ্য হাছিলের জন্য নির্ধারিত কক্ষের দিকে রওয়ানা হলেন।
আর উনাকে জানানো হলো যে, কয়েকদিন হলো, একজন নতুন মেয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এ পর্যন্ত কেউ তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। সেই মেয়ে খাওয়া-দাওয়া কিছুই করে না। সারাক্ষণ কান্না-কাটি করে। দরজা-জানালা সব বন্ধ করে ভিতরে থাকে। বাহিরে বের হয় না।
উক্ত মুরীদ এ সমস্ত কথা শুনে জিজ্ঞাসা করলেন কোথা থেকে, কিভাবে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে? সংশ্লিষ্ট লোকজন তা সবিস্তারে জানালো যে, কোথা থেকে কিভাবে কখন নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি তাদের এ সমস্ত বর্ণনা শুনে অবাক হলেন। কিন্তু তাদেরকে কিছু বললেন না এবং বুঝতেও দিলেন না। বিভিন্নভাবে হাকডাক করা হলো কিন্তু কিছুতেই কক্ষের দরজা খোলা গেলো না। একে একে সকলে শত কোশেশ করেও ব্যর্থ হলো। সেই ব্যক্তি সব কিছুই দেখতে থাকলেন। আর মনে মনে গভীরভাবে চিন্তা-ফিকির করতে লাগলেন। পরে উক্ত মুরীদ নিজে গিয়েই দরজার কড়া নেড়ে ডাকা-ডাকি করতে লাগলেন। তারপরও মেয়েটি দরজা খুলছে না।
পরিশেষে সেই ব্যক্তি তিনি নিজের বিস্তারিত পরিচয় দিয়ে মেয়েটিকে দরজা খুলতে বললেন। মেয়েটি নিজের আহাল বা স্বামীর কন্ঠস্বর মনে করে দরজা খুললো। দরজা খুলে সত্যিই দেখলো, তার সামনে তার আহাল বা স্বামী দাঁড়িয়ে।
অতঃপর সেই ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহমতের কথা স্মরণ করে শুকরিয়া আদায় করতঃ পতিতালয় থেকে তাকে মুক্ত করে আনার ব্যবস্থা করলেন। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে পবিত্র যিকির উনার গুরুত্ব ও ফযীলত (১)
১৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমাতে তাছাউফ চর্চা
১২ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র ইলমে ফিক্বাহ ও পবিত্র ইলমে তাছাউফ অর্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
০৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪১)
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪০)
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৯)
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৮)
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১৪)
২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুহলিকাত তথা বদ স্বভাবসমূহ
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মুনজিয়াত উনার বিবরণ
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবতে যাওয়া ব্যতীত কারো পক্ষে প্রকৃত মু’মিন-মুসলমান হওয়া সম্ভব নয়
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১২)
০৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)