১০০ টি চমৎকার ঘটনা
মুসলমান উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য
ঘটনা-৫৭
, ০২ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
![মুসলমান উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য](https://www.al-ihsan.net/uploads/1702672918_ ঘটনা.png)
খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সেই যুবককে এই সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। যুবক বললো যে, ‘তাদের দাবী সম্পূর্ণ সত্য। আমি ক্লান্তির কারণে বিশ্রামের জন্য এক খেজুর গাছের ছায়ায় বসেছিলাম। ক্লান্ত শরীরে অল্প সময়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার একমাত্র পছন্দের বাহন, আমার উটটি, আমার পাশে নেই। খুঁজতে খুঁজতে কিছু দূর গিয়ে উটটিকে পেলাম, তবে তা ছিল মৃত। পাশেই এই দুই ভাইয়ের বাবা ছিল; আমার উটটি তাদের বাগানে প্রবেশ করেছিল, এই জন্য সে পাথর দিয়ে আঘাত করে উটটিকে মেরে ফেলেছিল। আমিও রাগান্বিত হয়ে তাদের বাবার সাথে তর্কাতর্কি করতে করতে এক পর্যায়ে তাদের বাবার মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করি; ফলে সে সেখানেই মারা যায় যা সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষতভাবে হয়েছে, আমি কখনোই চাইনি তাকে হত্যা করতে। এর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’
কিন্তু বাদী দুই ভাই যুবকটিকে ক্ষমা করতে নারাজ ছিল। তারা বললো, ‘আমরা এই যুবকের মৃত্যুদ- চাই।’
তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘একটা উট হত্যার বদলে একটা উট নিলেই হতো। কিন্তু তুমি এদের পিতাকে হত্যা করেছো। হত্যার বদলে হত্যা; তাই এখন তোমাকে মৃত্যুদ- দেয়া হবে। তোমার কোনো শেষ ইচ্ছা থাকলে বলতে পারো।’
যুবক বললো, ‘আমাকে তিনদিন সময় দিন, আমার বাবা ইন্তেকাল করেছেন। তিনি আমার জন্য এবং আমার ছোট ভাইয়ের জন্য যে সম্পদ রেখে গিয়েছেন, আমার ইন্তেকালের পর আমার ভাই এ সকল সম্পদের মালিক হবে। তাই আমি বাড়ি গিয়ে আমার ছোট ভাইকে তার সম্পদগুলো বুঝিয়ে দিয়ে আসতে চাচ্ছি।’
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম বললেন, ‘তোমাকে আমি এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। যদি তোমার পক্ষ থেকে কাউকে জিম্মাদার রেখে যেতে পারো, তবে তোমাকে সাময়িক মুক্তি দিতে পারি।’
যুবকটি তার চারপাশে জমায়েত মানুষদের দিকে তাকালো। কিন্তু কেউই তার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসলো না, যেহেতু কেউ তাকে চিনতো না। নিরাশ হয়ে যুবকটি বললো, ‘এখানে আমার পরিচিত কেউ নেই, যে জিম্মাদার হবে।’
হঠাৎ মজলিসে উপস্থিত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন ছাহাবী, হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমি হবো জিম্মাদার।’
হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এই জবাবে সবাই হতবাক হয়ে গেলেন। কারণ একেতো যুবক একজন মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামী, তার উপর অপরিচিত ব্যক্তি। এমন ব্যক্তির তিনি জিম্মাদার হবেন!
খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম ফরমান জানালেন, ‘আগামী জুমুআহ শরীফের নামায পর্যন্ত এই যুবককে মুক্তি দেয়া হলো। জুমুআর নামাযের পূর্বে সে পবিত্র মদীনা শরীফে না আসলে, তার বদলে হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে মৃত্যুদ- দেয়া হবে।’
মুক্তি পেয়ে যুবক ছুটলো মাইলের পর মাইল দূরে তার বাড়ির দিকে। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি চলে গেলেন উনার নিজের বাড়িতে। দেখতে দেখতে জুমুআহ শরীফ এসে গেল, কিন্তু যুবকের কোনো খবর নেই।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একজন পত্রবাহক পাঠিয়ে দিলেন হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে। পত্রে লিখা, ‘আজ জুমুআর নামাযের পর দ-িত যুবক যদি না আসে, তাহলে আইন মুতাবিক হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হবে। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যেন সময় মত জুমুআর প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে নববী শরীফে হাযির হন।’
খবর শুনে সারা মদীনা শরীফে থমথমে অবস্থা। জুমুআর পর মদীনা শরীফের সবাই মসজিদে নববী শরীফের সামনে হাযির। সবার চেহারায় উৎকণ্ঠা। জল্লাদ প্রস্তুত। জীবনে কতজনের মৃত্যুদ- কার্যকর করেছে, তার হিসাব নেই; কিন্তু আজ কিছুতেই চোখের পানি আটকাতে পারছে না। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মত একজন ছাহাবী সম্পূর্ণ বিনা দোষে মৃত্যুদ-ে দ-িত হবেন, এটা মদীনা শরীফের কেউ মেনে নিতে পারছেন না। তবুও আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, তা পরিবর্তন করা সম্ভব না। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শান্তভাবে অপেক্ষা করছেন; নেই কোনো উদ্বেগ বা অস্থিরতা।
এমন সময় দেখা গেল মরুভূমিতে ধূলার ঝড় উঠিয়ে কে যেন অত্যন্ত দ্রুতবেগে ঘোড়া ছুটিয়ে আসছে। এ সেই দ-িত যুবক; একটানা পথচলায় পরিশ্রান্ত, সারা শরীর ধূলায় ধূসরিত। কিন্তু কাছে এসেই লাফ দিয়ে ঘোড়া থেকে নামলো, ছুটলো আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কাছে। দ্রুত বললো, ‘হুযূর! বেয়াদবি মাফ করবেন। রাস্তায় যদি অনাকাক্সিক্ষত কারণে দেরি না হতো, তবে সঠিক সময়েই আসতে পারতাম। বাড়িতে আমি একটুও দেরী করিনি। বাড়ি পৌঁছে গচ্ছিত আমানত ও ঋণ পরিশোধ করে ভাই, মা এবং নববধূর কাছে সব খুলে বলে চিরবিদায় নিয়ে মদীনা শরীফের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। দয়া করে হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে মুক্তি দিয়ে আমাকে মৃত্যুদ- দিন।’
চারিদিক স্তব্ধ, সবাই হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীরবতা ভেঙ্গে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যুবককে বললেন, ‘তুমি জানো তোমাকে মৃত্যুদ- দেয়া হবে। আমি তোমাকে পাকড়াও করার জন্য কাউকে প্রেরণও করিনি। তারপরেও কেন তুমি ফিরে এলে?’
উত্তরে যুবক বললো, ‘আমি ফিরে এসেছি; কারণ আমি চাইনি যে কেউ বলুক, একজন মুসলমান ওয়াদা করেছিল, কিন্তু সে তার ওয়াদা রক্ষা করেনি।’ সুবহানাল্লাহ!
এবার হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি এই যুবকটিকে চিনতেন না। তাছাড়া সে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামী। তবু কেন তার জামিনদার হলেন?’
উত্তরে হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘আমি তার জামিনদার হয়েছি; কারণ আমি চাইনি যে কেউ বলুক, একজন মুসলমান বিপদে পড়েছিল, কিন্তু অন্য মুসলমান তাকে সাহায্য করেনি।’ সুবহানাল্লাহ!
উভয়ের এমন উত্তর শুনে, মামলার বাদী দুই ভাই বলে উঠলো, ‘হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি এই যুবককে মুক্ত করে দিন। আমরা তার উপর করা অভিযোগ তুলে নিলাম। কারণ আমরাও চাই না যে কেউ বলুক, একজন মুসলমান ক্ষমা চেয়েছিল, কিন্তু অন্য মুসলমান তাকে ক্ষমা করেনি।’ সুবহানাল্লাহ!
মূলতঃ এগুলোই হলো মু’মিন মুসলমানগণের বৈশিষ্ট্য। একজন মুসলমান যখন কোনো ওয়াদা করে, তখন যেকোনো মূল্যে সে তার ওয়াদা রক্ষা করে। কোনো মুসলমান যখন বিপদে পড়ে, তখন অন্য মুসলমান তাকে সাহায্য করে। কোনো মুসলমান যখন ভুল করে ক্ষমা চায়, তখন অন্য মুসলমান তাকে ক্ষমা করে। মুসলিম ভাতৃত্ববোধ ধরে রাখার জন্য সমস্ত মুসলমানগণেরই এইসব গুণাবলী অর্জন করা উচিত। আমীন।
ইনশাআল্লাহ চলবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা এবং কারো ঘরে উঁকি দেয়া
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহিলাদের সুন্নতী লিবাস, অলংকার ও সাজ-সজ্জা (১৬)
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া জায়িয নয়
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া জায়িয নয়
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য (৭)
২৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সুওয়াল: যার জাররা পরিমাণ ঈমান আছে সেও একদিন জান্নাতে যাবে। ইহা পবিত্র হাদীছ শরীফ কি-না? যদি পবিত্র হাদীছ শরীফ হয় তাহলে জাররা পরিমাণ বলতে কি বুঝানো হয়েছে?
১৩ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুওয়াল: মৃত ব্যক্তির লাশের কাছে কান্নাকাটি করা, দোয়া-কালাম পড়া, কথাবার্তা বলা হয়। এগুলো মৃত ব্যক্তি শুনতে পায় কি না? বুঝতে পারে কি না?
১৩ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাইয়ূছ জান্নাতে প্রবেশ করবে না
১৩ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র আশুরা সম্পর্কিত সুওয়াল জাওয়াব
১২ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র আশুরা সম্পর্কিত সুওয়াল জাওয়াব
১১ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে ব্যক্তিত্ব বা আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে (৪)
১০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হাসপাতালে নারীর নিরাপত্তা এবং শরয়ী পর্দাভিত্তিক আল মুতমাইন্নাহ মা ও শিশু হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা
০৯ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)