অমুসলিম মহিলাদের দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঈমানদীপ্ত ঘটনা:
মুসলিম বন্ধুর উত্তম আচরণে মুগ্ধ হয়ে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন মার্কিন তরুণী মারিয়া
, ০৭ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২০ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৫ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
মারিয়া তার জীবনের এই পটপরিবর্তন নিয়ে অনইসলাম ডটকমকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আমি মারিয়া। ২০১৪ সালে আমি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমার জন্ম কলোরাডোর বোল্ডার শহরে। এখানেই আমি আমার স্কুল জীবন কাটিয়েছি। আমার বাবা-মা দু’জনেই দক্ষিণ আফ্রিকান। তারা এখানে অভিবাসী। তাদের দু’জনেরই ধর্মে বিশ্বাস নেই। তারা উভয়েই নাস্তিক। সঙ্গত কারণেই মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি তাদের কোন বিশ্বাস নেই। আমার একমাত্র ভাই যে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গীত বিষয়ে অধ্যয়নরত একজন ক্যাথলিক ছিল। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের আগে বাবা-মার মত আমারও মহান আল্লাহ পাক উনার উপর বিশ্বাস ছিল না। আমারও কোনো ধর্ম ছিল না এবং ধর্মের প্রতি কোনো বিশ্বাসও ছিল না। আমার বাবা-মা আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছে তাই শিখে বড় হয়েছি। ধর্ম বলে যে কোনো কিছু আছে তা মোটেই বিশ্বাস করতাম না।
মনে পড়ে, আমাদের পরিবারে যদি ধর্ম নিয়ে কোনো আলোচনা হতো, তবে প্রায় এর নেতিবাচক দিকগুলো নিয়েই আলোচনা হতো। ধর্ম যে প্রকৃতই ভাল কিছু, আগে তা বুঝতে পারিনি। আমি ভাবতাম, এটি সেই জিনিস যা অনেক সমস্যার কারণ। এটিকে পৃথিবীর সকল যুদ্ধ এবং যুদ্ধের উপাদান বলে মনে করতাম। এক কথায় এটিকে পুরোপুরি নেতিবাচক হিসেবে দেখতাম। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সাথে পরিচয়ের দু’ থেকে তিন বছর আগে প্রথম সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সর্ম্পকে জানতে পারি। পাকিস্তানি এক তরুণের সাথে আমার পরিচয় হয়। তার সাথে এবং আরো অন্যান্য লোকের সাথে কথা বলার পর আমি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠি।
এ সম্পর্কে নানাবিধ তথ্য সংগ্রহ করতে থাকি। আমি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একটি ইংরেজি কপি কিনে এটি পড়তে শুরু করি। যখন আমি আমার বাগদত্তা পাকিস্তানি যুবকের সাথে কথা বলতাম, ততই আমি উপলব্ধি করতে পারি যে, তার মধ্যে থাকা গুণাবলী কেবলমাত্র সম্মানিত দ্বীন ইসলাম কিংবা একজন মুসলিম হওয়ার কারণেই। কারণ তিনি ছিলেন একজন খাঁটি মুসলিম। এরপর তার সাথে আমার বাগদান হয়।
একদিন তিনি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। এটি ছিল মৃত্যুর সঙ্গে আমার প্রথম বাস্তব অভিজ্ঞতা। তার এই মৃত্যুর ঘটনাই আমাকে অনুপ্রাণিত করে আরো বেশি করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে জানার জন্য। কারণ আমি তার সর্ম্পকে যতটুকু জানতাম, তার মাঝে এর চেয়েও বেশি কিছু ছিল। আমি পবিত্র কুরআন শরীফ এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সর্ম্পকিত একাধিক বই পড়েছি। এ সম্পর্কে অনেক লোকের সাথে কথা বলেছি। যত দূর মনে পড়ে, তিনি মারা যাওয়ার ২ মাস পর একদিন আমি পবিত্র কুরআন শরীফ পড়ছিলাম এবং পড়ার পর আমার কাছে সবকিছু পরিষ্কার হতে থাকে। আমি বুঝতে পারি যে, সবকিছুই সৃষ্টি হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক। পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করার পর মুহূর্তেই আমার সামনে অনেক কিছু উন্মোচিত হয়ে পড়ে।
আমি বুঝতে পারি যা আমি দেখেছি, তার সর্ম্পকে যা কিছু জেনেছি এবং যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে তার সবকিছু সম্পর্কে। এরপর আমি একটি সিদ্ধান্তে আসি, এই মহাপবিত্র আসমানী কিতাব উনার থেকে যা জানলাম তার সবটাই সঠিক। আমার মনে আছে, প্রথমবার আমার পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করার সময় আমি একাকিই পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করেছিলাম। কেননা ঐ সময়ে আমি অনুভব করতে পারি যে, সবকিছুই তৈরি হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক। পরে বিষয়টি নিয়ে আমি আমার কয়েকজন মুসলিম বন্ধুর সাথে কথা বলি। তারা আমাকে ডেনভারের এক শায়েখের কাছে যেতে উৎসাহিত করে। এরপর আমি সেখানে যাই এবং উনার সাথে কথা বলি। আমি উনার সাথে কথা বলার পর পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করতে চাইলাম। কিন্তু তিনি একটি বিষয় নিশ্চিত হতে চাইলেন যে, আমি এটি কারো জন্য করছি কি-না। আমি উনাকে নিশ্চিত করলাম, ‘হ্যাঁ, এটি আমার জন্যই।’ এরপর আমার দু’জন বন্ধুকে সাক্ষী রেখে, আমি উনার সাথে পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করলাম।
আমার পিতা-মাতা এক রমাদ্বান শরীফে তারা বুঝতে পারে যে, আমি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সর্ম্পকে কতটা সিরিয়াস এবং আমি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার প্রতিটি রোযাই পালন করেছি। এটি ছিল আমার প্রথম রোযা পালন এবং যে কারণে এটি আমার জন্যে একটু কঠিন ছিল। তবে কষ্ট হলেও আমি সবগুলোই পালন করেছি।
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আমি বিভিন্ন পার্টিতে যেতাম এবং পার্টিতে সাধারণত যা হয় তাই করতাম। মুসলিম হওয়ার পূর্বে যে খারাপ কাজগুলো আমি করেছি তা অনুভব করতে পারি। একসময় আমার মা-বাবা ও বন্ধুরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর আমার পরিচিত অনেককেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পথে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমার বন্ধুদের অধিকাংশই এখন মুসলিম।
আমার বাবা-মা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর আমার আচরণে খুবই খুশি। আমাকে নিয়ে এখন আর তাদের খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না, কারণ তারা জানে আমি খারাপ কিছু করছি না। প্রথম যখন আমি হিজাব পরিধান করি, স্পষ্টভাবেই এটি আমার জন্য খুবই কঠিন ছিল। বিশেষ করে ক্লাসে। ক্লাসের সবাই আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে থাকত। এখানে হিজাব পরা আরো অন্যান্য মেয়েরাও ছিল। তবে তাদের মধ্যে আমিই ছিলাম সেখানে হিজাব পরা একমাত্র আমেরিকান মেয়ে। এটি পরিধান করে এখন আমি প্রতি মুহূর্তেই গর্ববোধ করি। আমি হিজাব পরে স্বস্তিবোধ করি। আমি মনে করি এটি এখন আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হিজাব পরিধান করলে নিজেকে অনেক বেশি নিরাপদ মনে হয়। হিজাব পরে যখন আমি মা-বাবার সাথে বাইরে বের হই, আমার মনে হয় না তারা এ নিয়ে বিব্রত হয়। আমার বিশ্বাস তারা বরং এটি নিয়ে গর্বিত। প্রকৃতপক্ষে হিজাব পরিধান উত্তম রুচির পরিচয় বহন করে এবং এটি নিজের ব্যক্তিত্বকেও ফুটিয়ে তোলে।
-উম্মু রাহাত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইমামুল হুদা, ইমামু আহলিল ইয়াক্বীন, সুলালাতুন নুবুওওয়াহ, সিরাজুল মিল্লাহ, আল ইমামুল খমিস, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম বাক্বির আলাইহিস সালাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত ক্বওল শরীফ
২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাই সত্যের মাপকাঠি (১)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৫)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত রজব মাস হলেন মহান আল্লাহ পাক উনার মাস
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












