১০০ টি চমৎকার ঘটনা
মৃত্যুর পরে দ্বিতীয় জানাজার ইতিহাস
ঘটনা-৪৮
, ১৮ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৪ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি প্রতিদিনই উনাকে দেখতে পেতেন। প্রতিদিনই উনার পাশে বসতেন। আর শুনতে পেতেন ছড়ার মতন কয়েকটা লাইন তিনি নিয়মিত পড়ছেন -
স্কার্ফের সেই দিনটি ছিল
মাওলার এক বিস্ময়কর ইহসানের নমুনা,
সেদিন আমায় তিনি বাঁচিয়েছিলেন
অবিশ্বাসের আঁধার থেকে করেন আলোর সূচনা।
প্রতিদিন এই একই আবৃত্তি শুনতে পেয়ে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি একদিন এর কারণ জানতে চাইলেন। তখন সেই মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন:
“আমি ছিলাম একজন আবিসিনিয়ান ক্রীতদাসী, কুচকুচে কালো বর্ণের খুবই হালকা পাতলা গড়নের কৃষ্ণাঙ্গ একটা ছোট্ট মেয়ে। একটা বেদুইন আরব গোত্রে আমি ছিলাম এক আবদ্ধ দাসী। আমার কোনো সঙ্গী-সাথী ছিল না। ছিল না কোনো পারিবারিক বন্ধন। আমি শুধু মনিবের পরিবারের কাজ করতাম। আর তাদের সাথে সাথে ঘুরতাম এক জনপদ থেকে আরেক জনপদে। একদিন আমার মনিবের মেয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে এলো। তার গলায় একটা স্কার্ফ ছিল। এটাকে বলে ‘উইশা’। উইশা হচ্ছে লাল রংয়ের চামড়ার একটা শাল যেটা গলায় বা কোমরে পেঁচিয়ে পরা যায়। সেটা ছিল স্বর্ণ ও মূল্যবান পাথর খচিত। সে ঐ মূল্যবান স্কার্ফটা মাথার কাছে রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। তখন উপর থেকে এসে বড় একটা পাখি সেটা লাল বর্ণ হওয়ায় গোশত পিন্ড ভেবে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল।
ঘুম ভাঙার পর প্রিয় স্কার্ফটা না পেয়ে সে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিল এবং তার বাবার কাছে বিচার দিল ঘুমন্ত অবস্থায় কেউ এটা চুরি করেছে। স্বভাবতই দাসী হিসেবে সবার সন্দেহের চোখ আমার দিকে। আমি বললাম, গোশত পিন্ড ভেবে একটা পাখি ছোঁ মেরে ওটা নিয়ে গিয়েছে। তারা আমার কথা বিশ্বাস করলো না। তাদের ধারণা ছিল আমি ওটা চুরি করে লুকিয়ে রেখেছি।
আমার কোনো কথাই তারা বিশ্বাস করলো না। মারতে আরম্ভ করলো। চাবুকের আঘাতে আমার ছোট্ট পুরোটা দেহ রক্তাক্ত হয়ে গেল। আমি একটা শীর্ণকায় ছোট্ট মেয়ে ব্যথায় চিৎকার করে কাঁদছি। কেউ একজন এগিয়ে এলো না আমার পাশে। শরীরের বিভিন্ন জায়গা চাবুকের আঘাতে কেটে রক্ত বেরিয়ে মরুভূমির বালি লাল হয়ে গিয়েছে। পুরোটা শরীর চাবুকের আঘাতে জখম। আমি তখন অসহ্য চিৎকারে আকাশের দিকে চেয়ে কাঁদছি। ঠিক তখনি পাখিটা নেমে এলো। স্কার্ফটা ফেলে দিয়ে গেল আমার আর মনিবের মাঝখানে।
চাবুক থেমে গেল। ভুল বুঝতে পেরে প্রচন্ড অনুশোচনায় মনিব আমাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে দিল।
আমি তখন মুক্ত, স্বাধীন। শুনতে পেলাম মদীনাতে একজন মহান রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্যের দিকে মানুষকে ডাকছেন এবং উনার বেশীর ভাগ অনুসারী দরিদ্র, দূর্বল, ক্রীতদাস আর নির্যাতিত, পিছিয়ে থাকা সব সাধারণ মানুষ।
আমি ছুটলাম মদীনার পথে। অনেক লম্বা মরুভূমির পথ পেরিয়ে পৌঁছলাম। চাবুকের আঘাত তখনও শুকায়নি। ছিন্ন বস্ত্র, শীর্ণ, ক্ষুধার্ত, কালো, সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত, এক খুব অসহায় ক্রীতদাসীকে চিনে নিতে কষ্ট হয়নি মহান রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার। আমি ঘোষণা দিলাম ‘লা-ইলা-হা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।’ আর মসজিদে নববী শরীফের ভিতরেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই অসহায়ের থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।” সুবহানাল্লাহ!
এই মহিলা ছাহাবী উনার নাম উম্মে মাহজান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। তিনি মসজিদে নববী শরীফ নিয়মিত ঝাড়ু দিতেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিয়মিত সে মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার খোঁজ খবর রাখতেন। একদিন সারাদিনেও উনাকে দেখতে না পেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন উনার কথা জিজ্ঞাসা করলেন তখন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জানালেন অসুস্থ হয়ে আগের রাতে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। রাত বেশী হওয়ায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ঘুম থেকে কেউ ডাকতে চায়নি। রাতেই দাফন করে দেয়া হয়েছে।
এটা জেনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুবই কষ্ট পেলেন। তখনই তিনি সে মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার কবরে গিয়ে বাকি ছাহাবীদের নিয়ে আবার জানাযা পড়লেন। সুবহানাল্লাহ! দ্বীন ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় জানাযা পড়ার ঘটনা এটাই প্রথম, যার সূচনা হয়েছিল একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার জন্য। সুবহানাল্লাহ! এটাই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম, যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের জন্য নিয়ে এসেছেন। সুবহানআল্লাহ।
ইনশাআল্লাহ চলবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্বাবস্থায় আজল বা তাড়াহুড়া না করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হাশরের ময়দানে যে ৫টি প্রশ্নের উত্তর প্রত্যেককেই দিতে হবে
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












