যুদ্ধবন্দীদের সাথে ছাহিবু হুসনিল খুলুক্ব, আফদ্বালুল কায়িনাত, উসওয়ায়ে হাসানাহ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সদাচরণ (১)
, ১০ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১০ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ০৯ মে, ২০২৫ খ্রি:, ২৬ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ
অর্থ: “অতএব মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ রহমত যে, আপনি তাদের প্রতি কোমল চিত্ত। ” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান: আয়াত শরীফ ১৫৯)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্তর নিহিত দয়া-দান, ইহসান সমগ্র বিশ্ববাসীর উপর ছড়িয়ে রয়েছে। যেমন হুজরা শরীফে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও বাঁদীদের প্রতি, তেমনি সমাজে সহচর-অনুচর, অসহায়-দুঃখী ও আগন্তুক-অভ্যাগতগণের প্রতি আবার তেমনি সমরক্ষেত্রে শত্রু-মিত্রের প্রতি সমভাবে উনার ইহসান মুবারক প্রকাশিত হয়েছেন।
তাই স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধবন্দীদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক-
اِسْتَوْصُوْا بِهِمْ خَيْرًا
“তাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবেন” সে কারণে, বদরের যুদ্ধ বন্দীদেরকে সাওয়ারীতে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা গিয়েছিলেন পায়ে হেঁটে।
এক যুদ্ধবন্দীর বর্ণনা, “উনারা যখন আমাকে বন্দী করে নিয়ে এলেন তখন জনৈক আনছারীর ঘরে আমার জায়গা মিললো। উনারা আমাকে দু’বেলা রুটি খেতে দিতেন আর নিজেরা খেজুর খেয়ে থাকতেন। এ ছিলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপদেশ ও নির্দেশ মুবারকেরই ফল। কেউ কোথাও থেকে এক টুকরা রুটি পেলেও তা আমাকে এনে দিতেন। আমার লজ্জা লাগতো গ্রহণ করতে, তাই আমি তা ফিরিয়ে দিতাম। কিন্তু উনারা আমাকে জোর করে দিতেন এবং নিজেরা তা হাত দিয়েও ধরতেন না। ”
বদরের যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনিসহ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্যান্য নিকট আত্মীয়-স্বজনও ছিলেন। কিন্তু উনাদের সাথে যে ব্যবহার করা হয়েছিলো সাধারণ যুদ্ধবন্দীদের সাথেও সে ব্যবহারই করা হয়। বণী হানীফার সর্দার সুমামা ইবনে আসালকে বন্দী অবস্থায় মসজিদের একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এদিক দিয়ে অতিক্রম করলে তাকে সম্বোধন করে বলেন, “সুমামা! তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?” সুমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, “আয় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদি আপনি আমাকে হত্যা করেন তবে এমন একজনকে হত্যা করবেন যার ঘাড়ে রক্ত আছে। যদি আমার সাথে সদয় ব্যবহার করেন তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ও সদয় ব্যবহারের স্বীকৃতি প্রদানকারীর সঙ্গে সদয় ব্যবহার করবেন। আর আপনি যদি ধন-দৌলত চান তাহলে তা আপনি বলুন, আপনি যা চাইবেন তা পাবেন। “এ কথা শুনে তিনি এগিয়ে গেলেন। এ রকম তিনবার ঘটলো। তৃতীয়বার তাকে মুক্তি দেয়া হলো। অনন্তর সুমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদের নিকটবর্তী খেজুর বাগানে গিয়ে গোসল করলেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাজির হয়ে দ্বীন ইসলাম কবুল করলেন এবং আরজ করলেন, “ মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! এক সময় ছিলো যখন আপনার চেয়ে অধিক অপছন্দের আমার কেউ ছিলো না। কিন্তু আজ আপনার নূরানী চেহারা মুবারক আমার কাছে দুনিয়ার যাবতীয় জিনিষের মুকাবিলায় অধিকতর প্রিয়। ” মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আপনার দ্বীনের চাইতে বেশি হিংসা-বিদ্বেষ আর কোন ধর্মের প্রতি আমি পোষণ করতাম না। কিন্তু আজ আপনার দ্বীন-দুনিয়ার তাবৎ ধর্ম ও মাযহাবের তুলনায় আমার কাছে অধিক মুহব্বতের। ” তিনি ইয়ামামার অধিবাসী ছিলেন। যেখান থেকে মক্কা শরীফের প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য আসতো। তিনি সেই খাদ্যের যোগান বন্ধ করে দেন, ফলে কুরাইশদের না খেয়ে মরবার উপক্রম হয়। অবশেষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আবেদন পেশ করলে তিনি তা কবুল করেন এবং আবার খাদ্যের সরবরাহ চালু হয়। হাতেম তাঈয়ের কন্যা সাফ্ফানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এক যুদ্ধে বন্দী হয়ে আসলে, তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে মুক্তির আবেদন জানান। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। উপরন্তু বাহন, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও জামা কাপড় দিয়ে উনার ভাই জলীলুর ক্বদর ছাহাবী হযরত আদি ইবনে হাতীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। এরই ফলশ্রুতিতে আদি ইবনে হাতিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং বণী তাঈ হিদায়েত প্রাপ্ত হয়।
প্রকৃতপক্ষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষমা, বদান্যতা, উদারতা, করুণার বর্ণনা দেয়া এক অসম্ভব ব্যাপার। মূলত পরাজিত বাহিনী ও যুদ্ধ বন্দীদের প্রতি উনার কোমল আচরণ ও বদান্যতা নজীর বিহীন। (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কোনো ব্যক্তির উপর সূর্য উদিত হয়নি, যে ব্যক্তি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে উত্তম
২৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে ব্যক্তি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে মুহব্বত করলো সে যেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই মুহব্বত করলো
২৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ক্বিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল সম্মানিত শান মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক
২৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার তরফ থেকে নীলনদের প্রতি সম্মানিত ফরমান মুবারক
২৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (১)
২৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক উনার ঘোষণা সংক্রান্ত একখানা মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ
২৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হামিলু লিওয়ায়িল হামদ, আকরামুল আউওয়ালীন ওয়াল আখিরীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুল মাগফিরাত মুবারক তথা হাত মুবারক উনার স্পর্শ মুবারকে খাদ্যদ্রব্যে অভাবনীয় বরকত (১ম পর্ব)
২১ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রায় সাড়ে ১৪০০ বছর পর আহলু বাইতি রসূলল্লিাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়মি মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্ললি আলামীন মামদূহ র্মুশদি ক্ববিলা সাইয়্যদিুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহসি সালাম উনার মহাসম্মানতি ও মহাপবত্রি নূরুস সালাম মুবারক-এ মহাসম্মানতি ও মহাপবত্রি কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে র্বণতি اِسْتَـوٰى (ইস্তাওয়া) শব্দ মুবারক উনার হাক্বীক্বত মুবারক প্রকাশ (৫)
২১ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
২১ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রায় সাড়ে ১৪০০ বছর পর আহলু বাইতি রসূলল্লিাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়মি মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্ললি আলামীন মামদূহ র্মুশদি ক্ববিলা সাইয়্যদিুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহসি সালাম উনার মহাসম্মানতি ও মহাপবত্রি নূরুস সালাম মুবারক-এ মহাসম্মানতি ও মহাপবত্রি কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে র্বণতি اِسْتَـوٰى (ইস্তাওয়া) শব্দ মুবারক উনার হাক্বীক্বত মুবারক প্রকাশ (৪)
২০ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
২০ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রায় সাড়ে ১৪০০ বছর পর আহলু বাইতি রসূলল্লিাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়মি মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্ললি আলামীন মামদূহ র্মুশদি ক্ববিলা সাইয়্যদিুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহসি সালাম উনার মহাসম্মানতি ও মহাপবত্রি নূরুস সালাম মুবারক-এ মহাসম্মানতি ও মহাপবত্রি কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে র্বণতি اِسْتَـوٰى (ইস্তাওয়া) শব্দ মুবারক উনার হাক্বীক্বত মুবারক প্রকাশ (৩)
১৯ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)