রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ একটি জাল বর্ণনা রয়েছে বুখারী শরীফে, যা পরিতাজ্য (২)
, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ নাম শুনলে পৃথিবীবাসীর কাছে আর যেন কোন দলীলই প্রয়োজন হয় না। এখানে যা আছে চোখ বুজে মানুষ মেনেও নেয়। যেহেতু হাদীছ শরীফ উনার কিতাব সেহেতু মেনে নিবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আক্বীদার ক্ষেত্রে উছূল হচ্ছে যখন এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যাবে, যা সম্মানিত আক্বীদা ও শান মান উনার খিলাফ তখন উক্ত বর্ণনা নিয়ে চিন্তা ফিকির করতেই হবে।
ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি হাদীছ শরীফ উনার প্রসিদ্ধ কিতাব আবু দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ উনার মধ্যে এমন রেওয়ায়েত আছে যেখানে উল্লেখ আছে- আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি শরাব পান করে নামায পড়েছেন এবং নামাযে তিলাওয়াত ভুল করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! কিন্তু তাহকীক বা অনুসন্ধান করতে গিয়ে বের হয়ে এসেছিলো সেই বর্ণনা ছিলো খারেজীদের দ্বারা বানানো মিথ্যা জাল বর্ণনা। সুনানে আবু দাঊদ বা তিরমিযী শরীফে বর্ণনা আছে বলেই উক্ত বর্ণনা সঠিক হয়ে যায়নি। তদ্রুপ বুখারী শরীফেও এমন বর্ণনা রয়েছে।
(ধারাবাহিক)
রদ্দু শুবহাত হাওলু ওয়া ইছমাতু লি’ন্নাবীয়্যি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিতাবের ৩০৭ পৃষ্ঠায় আরো বলা হয়েছে,
وعلى ذلك فلا سند يعتمد عليه
অর্থ: নির্ভর করা যায় এর এমন কোন সনদ নেই।
বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ইরশাদুস সারী শরহে সহীহুল বুখারী” ১০ম খন্ড ১২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ইমাম হযরত কাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
وَقَوْلُ مَعْمَرٍ فِي فَتْرَةِ الْوَحْيِ : فَحَزِنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- فيما بلغنا حزنا غدا منه مرارا كي يتردّى من شواهق الجبال..
ولا يَقْدَحُ فِي هَذَا الْأَصْلِ لِقَوْلِ مَعْمَرٍ عَنْهُ- فِيمَا بَلَغَنَا- وَلَمْ يُسْنِدْهُ وَلَا ذَكَرَ رُوَاتَهُ، وَلَا مَنْ حَدَّثَ بِهِ، وَلَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَهُ، وَلَا يُعْرَفُ مِثْلُ هَذَا إِلَّا مِنْ جِهَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “ইমাম হযরত মা'মার রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে ‘ওহি বন্ধ থাকাকালীন সময়' এর বর্ণনায় একটা উক্তি পাওয়া যায়, যেখানে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এত বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েন যে, কয়েকবার পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সেখান থেকে নিজেকে ফেলে দিতে চান (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক) । ...মা'মারের এই উক্তিটি আমার কাছে পৌঁছেছে। কিন্তু এর না আছে কোনো সনদ, না এটা কারো কাছ থেকে বর্ণিত হয়েছে, না মা'মার এটা বলেছেন যে উনি অমুকের কাছ থেকে শুনেছেন আর না এটা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে। (শিফা লি কাযি আ’য়ায ২/২৪৪, ইমতা আসমা’য়া লিল মাকরীযি ১১/১৯৮)
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারক হাফিজুল হাদীছ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত বর্ণনা সম্পর্কে বলেন,
ومعنى الكلام أن في جملة ما وصل إلينا من خَبَرَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ في هذه القصة هو من بلاغات الزهري وليس موصولا"
অর্থ: উপরোক্ত ঘটনাটি যা সম্পৃক্ত করা হয় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে এ বর্ণনাটি উনার থেকে প্রমাণিত না। এটা ইমাম যুহরীর নিজের কথা যার কোন ভিত্তি নাই। (ফতহুল বারী ১২/৩৫৯)
অর্থাৎ ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এটা সনদ বিহীনভাবে বর্ণনা করেছেন। ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহির মুরসাল সম্পর্কে রেজাল শাস্ত্রের ইমামগণ বলেন,
فعن يحيى بن سعيد القطان قال : مرسل الزهرى شر من مرسل غيره،
অর্থ: এ সম্পর্কে হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল কাত্তান রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইমাম যুহরীর মুরসাল অন্যদের মুরসালের চাইতে নি¤œমানের। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ৫/৩৩৮)
وقال يحيى بن معين: مراسيل الزهري ليس بشيء
অর্থ: হযরত ইয়াহিয়া ইবনে মঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইমাম যুহরীর মুরসাল কোন কিছুই না। (আল মারাসিল লি ইবনে আবি হাতিম ৩ পৃষ্ঠা)
وقال الشافعي: إرسال الزهري عندنا ليس بشيء،
অর্থ: ইমাম হযরত শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইমাম যুহরীর মুরসাল আমাদের কাছে কিছুই না। [অর্থাৎ ইমাম যুহরীর মুরসাল কোন দলীল হওয়ার উপযুক্তই না] (সিয়ারু আলামিন নুবালা ৫/৩৩৯)
এই বর্ধিত অংশ যা বুখারী শরীফ উনার এই অংশ ছাড়া আর কেউ বর্ণনা করেননি। পরবর্তী অনেক মুহাদ্দিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি منقطع مرسل বলে উল্লেখ করেছেন। সনদের ব্যাপক বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। এমন নিঃসঙ্গ ও বিচ্ছিন্ন বর্ণনা যা স্পষ্ট পবিত্র শান উনার খিলাফ তা কখনোই গ্রহণীয় হতে পারে না। বরং এটি একটি মাওজু বর্ণনা।
প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামে আ’যম, হাকীমুল হাদীছ, হুজ্জাতুল ইসলাম, জামিউল ইলিম ওয়াল হিকাম, জামিউল আলক্বাব, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সকল বদ আক্বীদা থেকে দুনিয়াবাসীকে হিফাজত করছেন। সেই সাথে বিশুদ্ধতম আক্বীদা হাদীয়া করছেন। দুনিয়ার সকলের জন্য ফরয হচ্ছে নিজের ঈমান আমল হিফাজত করতে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার নুরুদ দারাজাত মুবারকে নিজেকে বিলীন করে দেয়া।
(অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুহম্মদ নূরউদ্দীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












