শাসক কর্তৃক শাসিতের প্রতি ইনসাফ প্রতিষ্ঠার এক অনুপম দৃষ্টান্ত!
, ২৯ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৮ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ১৭ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ০২ ভাদ্র শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার হায়াত মুবারকের শেষ দিকে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে গেলেন। এর কারণ ছিলো, সেসময় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিলো। তিনি সংবাদ নিতে বললেন যে, সাধারণ মানুষ এ দুর্ভিক্ষে কী ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। উনাকে জানানো হলো জয়তুনের তেল আর রুটি খাওয়ার কথা। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তাহলে তো আমাকেও একই খাবার খেতে হবে, যতক্ষণ না সবার জন্য সার্বিক ভালো কিছু ব্যবস্থা করতে পারি। তিনিও শুধুমাত্র রুটি ও জয়তুনের তেল খাদ্য হিসেবে খাওয়া আরম্ভ করলেন। ফলে উনার স্বাস্থ্য মুবারক একটু দুর্বল হয়ে গেলো। তিনি তো স্বাস্থ্যবান এবং লম্বা গড়নের ছিলেন।
এদিকে উনার খাদিম-খুদ্দাম ও নিকটতম সকলে চিন্তা করতে লাগলেন যে, খলীফা দুর্বল হলে তো শাসন কার্যে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু কে উনাকে বলবেন যে, আপনি আপনার খাবারটা স্বাভাবিক করুন? কারো তো সেই সাহস নেই। উনাদের কেউ কেউ চিন্তা করলেন যে, উনার সম্মানিত মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে বিষয়টি বলা যেতে পারে। একমাত্র তিনিই ব্যাপারটি উনাকে বলতে পারেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে বিষয়টি বলা হলে তিনিও একটু চিন্তা করলেন। তিনি বললেন, ঠিক আছে আমি বিষয়টি উনাকে বলবো কিন্তু তিনি তো সম্মানিত শরীয়ত উনার অনুমোদিত কোনো বিষয়ে যাই বলেন তাই করে থাকেন।
একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি খাবার খাচ্ছিলেন। খাবারে ছিলো শুধুমাত্র জয়তুনের তেল এবং রুটি। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি এমতাবস্থায় উনার নিকট তাশরীফ মুবারক নিলেন এবং কথার এক ফাঁকে বললেন, আব্বাজান! আপনার সাথে একটা ব্যাপারে কিছু কথা বলার ছিলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, কী কথা? সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আপনি তো খলীফাতুল মুসলিমীন। এখন আপনার যদি এদিক-সেদিক কিছু হয়ে যায় তাহলে সারা মুসলিম জাহানের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আপনি যদি দয়া করে আপনার খাবারটা স্বাভাবিক করতেন তাহলে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো হতো। এখন আপনি অনেক দুর্বল হয়ে গেছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি চুপ করে সব শুনলেন এবং বললেন, আপনি কি চাইবেন যে, আমি ইনসাফের খিলাফ কাজ করি? আমার অধীনস্ত মানুষেরা তাদের খাবারে যখন জয়তুনের তেল ও রুটি ছাড়া আর কিছুই পায় না তখন আমি খলীফা হয়ে কী করে এর ব্যতিক্রম করতে পারি? আমার ইনসাফটা কোথায় থাকবে? আমি তাদের খলীফা, আমার তো ইনসাফ আছে, আমার তো দায়িত্ব আছে। মানুষকে না খাওয়ায়ে রেখে আমি খাবো, এতে কি ইনসাফ বজায় থাকে? সুতরাং আমার শরীর-স্বাস্থ্য দুর্বল হয় হোক তবুও আমার খাবারে কোনো পরিবর্তন হবে না। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি চুপ হয়ে গেলেন এবং অশ্রুনয়নে সেখান থেকে ফিরে চলে আসলেন। সুবহানাল্লাহ!
এ ঘটনা মুবারকে প্রত্যেক শাসক শ্রেণী ও কর্তা ব্যক্তিদের জন্য ইবরত-নছীহত রয়েছে। রয়েছে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার বিরল দৃষ্টান্ত। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে সর্বাবস্থায় ইনসাফ বজায় রাখার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-মুহম্মদ সাঈদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৯)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৩)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












