শুধু ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেই নয় তথাকথিত দুনিয়াবী মানদন্ডেই নতুন শিক্ষাক্রমের দুর্বলতা বরদাশতের বাইরে
, ০১ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৩ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১২ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২৮ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মন্তব্য কলাম
শুধু তা-ই নয়, পুরো রূপরেখায় বেশ জটিল ভাষায় ভাষান্তর করে ফেলছে, যা পড়ে সহজেই কেউ বুঝতে সক্ষম হবে বলে মনে হয় না। যেমন ভাষাভিত্তিক পাঠ্যক্রমে ঠিক কী থাকছে, তা বোঝাতে গিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম বলছে, বাংলা ভাষা শিক্ষার্থীদের জন্য ছয়টি প্রয়োগের স্থান নির্ধারণ করেছে।
এইগুলোকে বলা হচ্ছে, ভাষিক যোগাযোগ, বাচনিক উৎকর্ষ, শিখন-শেখানো কার্যক্রম, প্রায়োগিক ও পেশাগত যোগাযোগ, মানবিক চিন্তন, সৃষ্টিশীল ও মননশীল প্রকাশ। অথচ এগুলোকে ইংরেজি ভাষা থেকে রূপান্তর না করে সহজভাবে বলা যেত, ভাষার মাধ্যমে কীভাবে যোগাযোগ, ভাবের আদান-প্রদান, পাঠদান কার্যক্রম, জীবন-জীবিকা কীভাবে মানবিক ও সৃষ্টিশীলতার মধ্যে অবদান রাখছে, তা সুন্দরভাবে তুলে ধরা যেত। শুধু এই বিষয়গুলো নয়, পুরো রূপরেখায় ধরনের ট্রান্সলেটরের প্রভাব লক্ষ করার মতো।
বলা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের বোঝা কমানো হবে। অথচ আগের শিক্ষাক্রমের চেয়ে অনেকটাই বেশি পাঠ্যপুস্তক পেতে যাচ্ছে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমে। প্রাথমিক ৮টি আর মাধ্যমিকে ১০টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ এর আগের শিক্ষাক্রমে কম ছিল। সুতরাং কেউ যদি বলে, শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের বোঝা কমিয়ে ফেলার লক্ষ্য নতুন শিক্ষাক্রম আসছে, তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ মিথ্যা।
শিক্ষাক্রমে বলা হচ্ছে, বিজ্ঞানের ভৌতবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান এবং পৃথিবী ও মহাকাশবিজ্ঞান-এই তিনটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। যেখানে রসায়নের মৌলিক বিষয়গুলো উপেক্ষিত। প্রাণী ও উদ্ভিদের সমন্বয়ে যদি জীববিজ্ঞান আলোচিত হয়, সেই ক্ষেত্রে সমস্যা নেই, তবে সবার জন্য বিজ্ঞান বই তৈরি করতে গিয়ে আমাদের বাচ্চারা অন্যান্য দেশের বাচ্চাদের চেয়ে পিছিয়ে গেলেই সমস্যা প্রকটতর হয়ে উঠবে।
ভৌতবিজ্ঞানে কেবল বস্তু কণার গঠন আচরণ, মিথস্ক্রিয়া নিয়ে আলোচনার কথা বললেও জীববিজ্ঞানে কেবল সজীব উপাদানের গঠন আচরণ, মিথস্ক্রিয়া আর আর্থ সায়েন্স পৃথিবী থেকে শুরু করে সমগ্র মহাবিশ্বের গঠন এবং প্রকৃতি সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণের কথা বলা হচ্ছে। সেই দৃষ্টিতে এই বিজ্ঞান পাঠ কখনোই সুখকর হয়ে উঠবে না।
জাপানের একটি শিশু যদি অষ্টম শ্রেণির মধ্যেই ভৌতবিজ্ঞানে বিদ্যুৎ চলাচল ও তার ব্যবহার, গতি ও শক্তি, রাসায়নিক অণু ও পরমাণুর পরিবর্তন নিয়ে প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত জ্ঞান অর্জন করে, আলো ও শব্দ, লেন্সবিষয়ক পাঠোদ্ধার করে, তাপ, চাপ আর গ্যাসীয় বস্তু নিয়ে বিস্তারিত পড়ার সুযোগ পায়, সেখানে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমে কেবল বস্তু কণার গঠন আচরণ, মিথস্ক্রিয়া, স্থিতি নিয়ে আলোচনা বড়ই বেমানান।
কেবল সজিব উপাদানের গঠন নিয়ে আলোচনায় সীমাবদ্ধ নয়, বিজ্ঞানকে পূর্ণভাবে জানতে উদ্ভিদ, প্রাণীর দেহবিষয়ক বিস্তারিত জানাও জরুরি। কোষের বিভাজন, প্রজনন, জিনের নিয়ন্ত্রণ, রোগবালাই বিষয়ের জ্ঞান যেমন প্রয়োজন তেমনি রসায়নের মৌলিক ধাপ সম্মুখ আলোচনা দরকার।
সব মিলিয়ে বিজ্ঞানকে পোক্ত করার জন্য আরও বেশি আলোচনার প্রয়োজন, যা নতুন শিক্ষাক্রমে উপেক্ষিত হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমে ‘কৃষি শিক্ষা’ অন্তর্ভুক্ত ছিল। অথচ প্রস্তাবিত শিক্ষাব্যবস্থায় কৃষিকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। জীবন ও জীবিকাবিষয়ক অধ্যয়নের সুযোগ থাকলেও কৃষিকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
খোদ শিক্ষাক্রমে বলা হচ্ছে, এটি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্তসংখ্যক দক্ষ, পেশাদার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক। নতুন শিক্ষাক্রমের আগে অতীতে আমাদের দেশে সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা সচল ছিল।
পত্রপত্রিকায় হামেশাই খবর বের হতো, ১০ বছর পরও এই পদ্ধতিটি দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের কাছেই বোধগম্য ছিল না। এমন একটি জনগোষ্ঠীর কাঁধে দেশের যে শিক্ষাব্যবস্থা উঠতে যাচ্ছে, তা আরও বেশি জটিল ও কণ্টকময়।
বাণিজ্যবিষয়ক জ্ঞানের সুযোগ প্রস্তাবিত রূপরেখা নাই। ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ও বাজারব্যবস্থার সঙ্গে নিজেকে তৈরি করতে বাণিজ্যবিষয়ক পাঠ আবশ্যিক হয়ে উঠেছে, সেই বিষয়টি আমাদের শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন।
শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে শিক্ষকদের বৈষম্য যেমন পরিলক্ষিত, তেমনি শিক্ষার আনুষঙ্গিক কাঠামোতে থাকে ভিন্নতা। শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে স্বজনপ্রীতি বা সুবিধাভোগী। শ্রেণিশিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের ফলাফলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব ফেলে। এমন মানসিকতার শিক্ষকদের কাঁধে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের সুযোগ ঠিক কতটা নিরপেক্ষ থাকবে তা বলা কঠিন।
ইউনেসকোর সহায়তায় আরও কয়েকটি দেশ জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন এনেছে। তবে সেগুলো উন্নত বিশ্বের কোনো দেশে এখনো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।
বিদ্যমান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এবং নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী পেশাদার শিক্ষক নিয়োগ করে এ পরিবর্তন করার কথা বললেও বাস্তবতায় ঠিক কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে, তা ভাবতে হবে। শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানিয়ে শিক্ষকদের কাঁধে মূল্যায়নের মতো জটিল বিষয়গুলোর সমাধান আগে না হলে এমন শিক্ষাক্রমের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হবে, মুখ থুবড়ে পড়বে আমাদের শিক্ষার পথ। এখন সরকারই নিজেকে প্রশ্ন করুক যে তারা যে শিক্ষাক্রম করতে যাচ্ছে, তাতে শিক্ষক সমাজ ঠিক কতটা গলাধঃকরণ করতে পেরেছে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
৪৮ বৎসর আগে ১৯৭৬ সালের ১৬ই মে ভাষানী ফারাক্কার বিরুদ্ধে ভারত অভিমুখে অগ্রযাত্রা করেছিলো সে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ জনগণও নেই, সরকারও নেই চুক্তি অনুযায়ী এ বছর বাংলাদেশ পানি পেয়েছে সবচেয়ে কম। বিভিন্ন বাধ, ব্যারেজ আর ড্যাম তৈরী করে বাংলাদেশকে পানিশুন্য করার জোরদার পায়তারা করছে ভারত।
১৯ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মেগা প্রকল্পে শুধু মেগা দুর্নীতিই নয় নির্ধারিত সময়ের পরে অতিরিক্ত মেগা সময়ও ব্যায় হয় এই স্বেচ্ছাচারিতার জবাবদিহীতা নাই কেন?
১৮ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পানিবায়ু তহবিল: জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগই শেষ কথা না বরং আই.এম.এফ এবং চীনা ঋণের ফাঁদের মতই এটা এক মহা প্রতারণাযুক্ত ফাঁদ এ সম্পর্কে চাই জোরদার সচেতনতা
১৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
চলচ্চিত্র নামক জাহান্নামী সংস্কৃতির ফাঁদে মুসলিম উম্মাহ। নাটক-সিনেমার মাধ্যমে মুসলিম প্রজন্মকে দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সিনেমার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিস্তার ঘটছে ইসলামোফোবিয়ার। পরকালের কথা স্মরণ করে মুসলিম উম্মাহকে বিধর্মীদের এসব ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
১৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কুরিয়ার সার্ভিসে নজরদারি নেই। সেবার নামে গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ছে কুরিয়ার সার্ভিসে। মাদক পাচার ও অবৈধ কর্মকা-ে কুরিয়ার সার্ভিসের যথেচ্ছা ব্যবহার।
১৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সারাদেশে চলছে ভুয়া প্রকল্প ও ভুয়া বিলের ছড়াছড়ি তথা সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হাজার রকমের দুর্নীতি (৪৪৬)
১৪ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মুসলমানকে ‘মুসলমানিত্ব’ বুঝতে হবে। ‘আশহাদু আন্না মুহম্মাদার রসূলুল্লাহ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাক্বীক্বীভাবে বলতে হবে ও আমলে আনতে হবে।
১৩ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও অবমূল্যায়নের কারণে দেশ ছাড়ছে মেধাবী বিজ্ঞানীরা। অথচ তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়নে বাংলাদেশ হতে পারে তথ্য-প্রযুক্তিসহ সকল খাতে এশিয়ার সুপার পাওয়ার। দেশের গবেষক-বিজ্ঞানীদের মূল্যায়ন না করলে দেশ কোনোসময়ই উন্নত হবেনা, আর উন্নয়নের দাবীও করা যাবেনা।
১২ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে না অনলাইন জুয়া-বেটিং-ক্যাসিনো মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন জুয়া কাজে আসছে না বিটিআরসির কলা-কৌশল নিয়ন্ত্রণ প্রায় অসম্ভব, বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসলামী মূল্যবোধের উজ্জীবনেই জুয়া বন্ধ সম্ভব (৩)
১১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নিয়ন্ত্রণ প্রায় অসম্ভব, বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসলামী মূল্যবোধের উজ্জীবনেই জুয়া বন্ধ সম্ভব (পর্ব-২)
১০ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নিয়ন্ত্রণ প্রায় অসম্ভব, বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসলামী মূল্যবোধের উজ্জীবনেই জুয়া বন্ধ সম্ভব (পর্ব-১)
০৯ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মালয়েশিয়া, ব্রুনাই ইত্যাদি মুসলিম দেশে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার থাকলেও সেদিকে নজর দিচ্ছে না দেশের প্রবাসী মন্ত্রনালয় ১৬৮ দেশে কর্মী পাঠানোর দাবি করলেও শ্রমবাজার মূলত ১০-১১টি দেশে সীমাবদ্ধ নতুন শ্রমবাজার তৈরির চেষ্টা শুধুই মুখে মুখে।
০৮ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)