সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪০)
, ২৬ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০২ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৫ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত সাফিয়্যা বিনতে আব্দিল মুত্তালিব আলাইহাস সালাম উনার ঈমানদীপ্ত বীরত্ব
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আপন ফুফু হযরত সাফিয়্যা আলাইহাস সালাম, যিনি একই সাথে হযরত উম্মু রসূলিনা (আমিনাহ) আলাইহাস সালাম উনার আপন বোনের মেয়ে। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ইজাযত পেয়ে যখন উহুদের ময়দানে আপন প্রিয় ভ্রাতা সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযাহ আলাইহিস সালাম উনার ঈমানদীপ্ত শাহাদাতী আত্মত্যাগের মর্মাস্পর্শী দৃশ্য অবলোকন করলেন তখন একটুও বিচলিত হননি। বরং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টির দিকে খেয়াল রেখে বলেছিলেন- ‘আমিতো আমার ভাইয়ের খবর আগেই জেনেছি। মহান আল্লাহ পাক উনার পথে এত সামান্য কুরবানী।’ সুবহানাল্লাহ!
হযরত সাফিয়্যা বিনতে আব্দিল মুত্তালিব আলাইহাস সালাম উহুদের ন্যায় খন্দকের জিহাদেও উনার ঈমানদীপ্ত জযবা দৃঢ়তার প্রমাণ রাখেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুজাহিদ বাহিনীকে নিয়ে জিহাদের ময়দানে যাওয়ার পূর্বে মহিলা শিশুদেরকে নিরাপত্তার জন্য ‘ফারে’ নামক সুরক্ষিত দুর্গে রেখে যান। উনাদের তদারকির জন্য নিযুক্ত হন একমাত্র পুরুষ ছাহাবী শায়িরু রসূলিল্লাহ হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। ইহুদী-মুশরিকরা যখন জানতে পারলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত পুরুষ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে জিহাদের ময়দানে ব্যস্ত, তখন তারা ফন্দি-ফিকির করলো ‘ফারে’ দুর্গ আক্রমণ করার। এক ইহুদী মতলববাজ দুর্গের ফটকের নিকট গিয়ে চোরের ন্যায় ঘুর ঘুর করতেছিল এবং আক্রমণের কৌশল আয়ত্ব করছিল। এমন সময় হযরত সাফিয়্যা আলাইহাস সালাম তিনি সেই ইহুদীকে দেখে ফেলেন। তিনি হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে খবর দিয়ে বললেন, এখনি যান, নেমে গিয়ে ইহুদীর বাচ্চাটাকে হত্যা করে ফেলুন, নতুবা আমাদের অবস্থানের সমস্ত চিত্র সে ফাঁস করে দিবে। হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অপারগতা প্রকাশ করলেন। যেহেতু তিনি ধ্যানে খেয়ালে অনুক্ষণ জবানী জিহাদের ফিকিরে রত ছিলেন। অগত্যা হযরত সাফিয়্যা আলাইহাস সালাম তিনি নিজেই তাবুর একটি খুঁটি ভেঙে নিয়ে নিচে নেমে আসলেন; অতঃপর ওই ইহুদীর উপর এমন অতর্কিত হামলা চালালেন সে মুহূর্তেই তার ইহলীলা সাঙ্গ হয়ে গেল। হযরত সাফিয়্যা আলাইহাস সালাম দ্রুত ফিরে আসলেন দুর্গে। তিনি হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, ‘তাকে খতম করে দিয়েছি, তার মাথা কেটে দুর্গের নিচে ইহুদীদের মাঝে ছুঁড়ে মারুন এবং তার সরঞ্জামগুলো নিয়ে আসুন।’ হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পূর্বের ন্যায় একইভাবে অপরাগতা প্রকাশ করলেন। অবশেষে হযরত সাফিয়্যা আলাইহাস সালাম তিনি নিজেই নীচে নেমে ইহুদীর মাথা কেটে নিলেন এবং সরঞ্জাম নিয়ে দুর্গে ফিরে আসলেন। তিনি ইহুদীর কর্তিত মাথাটি দুর্গের নিচে এমন সজোরে নিক্ষেপ করলেন তা দেখে ইহুদীরা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তারা আশঙ্কা করলো নিশ্চয়ই দুর্গের ভিতর মুসলমানদের শক্তিশালী কোন মুজাহিদ বাহিনী আছে; ভয়ে আতঙ্কে তারা দ্রুত দিকবিদিক ছুটে পালাতে লাগলো এবং ‘ফারে’ দুর্গ আক্রমণের কুচিন্তা পরিত্যাগ করলো।
ঈমানদীপ্ত ইবরত:
হযরত সাফিয়্যা বিনতে আব্দিল মুত্তালিব আলাইহাস সালাম উনার উপরোক্ত ঈমানদীপ্ত জযবামূলক ওয়াকিয়ায় সারা বিশ্বের মুসলিম পুরুষদের সাথে সাথে মুসলিম নারীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ইবরত। বর্তমানে দুনিয়াবী নানা অজুহাতে পুরুষরা দ্বীন ইসলামের তর্জ-তরীকা থেকে অনেক দূরে রয়েছে; যেমনটি অজুহাত নারীদের ক্ষেত্রে ততটা নেই। এরপরও পরিবার পরিজনের মাঝে দ্বীনি চেতনার কোন প্রকাশ নেই। অথচ বর্তমান যামানায় মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ওলী, আওলাদে রসূল, মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিতা যাওজাতুম মুর্কারমাহ সাইয়্যিদাতুন্ নিসা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার ঈমানদীপ্ত হিদায়েতী তালিম-তালক্বীন পেয়ে মহিলারাতো বটে তাদের আহাল বা স্বামী, সন্তান, পরিবার-পরিজন, এমনকি আত্মীয়-স্বজনও হিদায়েতের দিশা পেয়ে সুন্নতের রঙ্গে রঞ্জিত হচ্ছে; কুফরী, শিরিকী, বিদ্্য়াত নির্মূল করে সমাজের সর্বস্তরে দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জযবা পাচ্ছে। মূলতঃ এমন ঈমানদীপ্ত জযবার দৃষ্টান্তই প্রদর্শন করিয়েছেন হযরত সাফিয়্যা বিনতে আব্দিল মুত্তালিব আলাইহাস সালাম তিনি। যার পরিপূর্ণ মেছদাক হলেন- ক্বায়িম-মাক্বামে উম্মাহাতিল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম। সমস্ত নারীদের জন্য তাই উনার মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। (সমাপ্ত)
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












