সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
মুরতাদ মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের প্রতিরোধে হযরত বারা’ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত ভূমিকা
, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতের প্রথম পর্যায়েই শুরু হয় ধর্মদ্রোহী মুরতাদদের উৎপাত। নুবুওওয়াতের ভ- দাবিদার মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের নেতৃত্বে শুরু হয় এই নয়া ফিতনা। খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ভ- নবী মুসায়লামা ও তার অনুসারীদের বিনাশ করতে অনেক জলীলুল ক্বদর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের নেতৃত্বে ভিন্ন ভিন্ন মুজাহিদ বাহিনী প্রেরণ করেন। বীর সেনাপতি হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে যে বাহিনী প্রেরিত হয়, তাতেই ছিলেন আছহাবে সুফ্ফার অন্যতম সদস্য হযরত বারা’ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
মুজাহিদ বাহিনীর সাথে মুসায়লামাতুল কাজ্জাব গংদের লড়াইয়ের এক পর্যায়ে একজন দাগী মুরতাদ যুদ্ধবাজ হযরত বারা’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নাগালে এসে পড়ে। সে ছিল খুবই মোটাসোটা ও লম্বাদেহী। লোকজন তাকে ‘ইয়ামামার গাধা’ বলে ডাকতো। হযরত বারা’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার পা বরাবর তরবারী দিয়ে হামলা চালালেন। এ সময় সে স্তম্ভিত হয়ে নিজের পা বাঁচাতে চাইলো, এতে ধপাস করে সে মাটিতে পড়ে গেলো। ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগলো। হযরত বারা’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুহূর্তের মধ্যে নিজের তরবারী কোষমুক্ত করে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে তার তরবারী ছিনিয়ে নিয়ে তার উপর এমন এক ঘা বসিয়ে দেন যে মুহূর্তেই মুরতাদ যুদ্ধাবাজের দেহ দু’টুকরা হয়ে ইহলীলা সাঙ্গ হয়ে গেল।
হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাহিনী প্রচ- যুদ্ধ করতে করতে এক পর্যায়ে মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের সন্নিকটে পৌঁছে যান। অবস্থা বেগতিক দেখে জান বাঁচাতে মুসায়লামাতুল কাজ্জাব তার সদস্যদেরকে নিয়ে একটি দুর্গসম বাগানে পলায়ন করে ভিতর থেকে সেটির শক্তিশালী ফটক বন্ধ করে দেয়। হযরত বারা’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাদেরকে ধাওয়া করতে করতে প্রাচীরের নিকট পৌঁছে রুদ্ধ ফটকের সামনে থমকে দাঁড়ান। মুহূর্তের মধ্যে তিনি সিংহের ন্যায় গর্জে উঠেন এবং হুঙ্কার ছেড়ে বলেন- ওহে মুজাহিদ বাহিনী! আমি বারা’ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আপনারা আমার দিকে আসুন, উনার সঙ্গী-সাথী মুজাহিদগণ এগিয়ে এলে তিনি তাদেরকে বলেন, আপনারা এক কাজ করুন, আমাকে উপরের দিকে তুলে দুর্গের ভিতর ছুড়ে মারুন। অতঃপর কয়েকজন মিলে উনাকে উঁচু করে ধরেন। এ সময় তিনি প্রাচীরের উপর দিয়ে একটু উঁকি মেরে মুরতাদ গংদের অবস্থান দেখে নেন এবং মুহূর্তের মধ্যেই তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়েন। ভিতরে ফটকের মুখেই তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। তিনি এক এক করে প্রায় দশজন মুরতাদকে খতম করে বাইরে অপেক্ষমাণ মুসলিম মুজাহিদ বাহিনীর জন্য দরজা খুলে দেন। বিদ্যুৎ বেগে মুসলিম মুজাহিদ বাহিনী দলে দলে একযোগে ঢুকে পড়েন। অভিশপ্ত ফিতনাবাজ মুসায়লামাতুল কাজ্জাব অবশেষে এখানেই নিহত হয়। এই দুঃসাহসিক অভিযানে হযরত বারা’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রায় সারা দেহ ঝাঁঝরা হয়ে যায়। তীর, বর্শা ও বল্লমের আশিটির বেশি আঘাত লাগে। বাহনের পিঠে উঠিয়ে উনাকে তাঁবুতে আনা হয়। প্রায় ১ মাসেরও বেশী সময় ধরে স্বয়ং হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজ তত্ত্বাবধানে উনার চিকিৎসা করে উনাকে সুস্থ করে তোলেন। সুবহানাল্লাহ!
ঈমানদীপ্ত ইবরত:
ধর্মদ্রোহী মুরতাদ গং ধনে বলে জনে যতই শক্তিশালী হোক না কেন ঈমানদারদের নিকট তাদের অবস্থান কাফিরের চেয়েও নিম্নে। মুসায়লামাতুল কাজ্জাব গংদের বিনাশে মুজাহিদ বাহিনীর অবিস্মরণীয় তৎপরতায় সেটাই ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে কতটুকু ঈমানী কুওওয়াতের অধিকারী হলে একাই মুরতাদ গংদের মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়ার হিম্মত হতে পারে সেটাই বাস্তবে দেখিয়ে দিয়েছেন হযরত বারা’ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। যুগে যুগে এমন ঈমানী কুওওয়তের অধিকারী মুসলমানদের তৎপরতা থাকলে বিভিন্ন ফিরকাধারী মুরতাদরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠার সাহস পেতো না।
বর্তমান যামানা তো মুরতাদীর সমস্ত তবকাই অতিক্রম করেছে। এদের প্রতিহত করতে যমীনে বিরাজ করছেন মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা। এখন প্রয়োজন শুধু হযরত বারা’ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ন্যায় ঈমানদীপ্ত মর্দে মুজাহিদ বাহিনী। যা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার খাছ ফয়েজী ইত্তেহাদীর মাধ্যমেই একমাত্র তৈরি করা সম্ভব।
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












