সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৪)
, ১২ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৭ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আবার অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ يَزِيْدَ ابْنِ اَبِىْ سُـمَيَّةَ قَالَ سَـمـِعْتُ اِبْنُ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يَقُوْلُ مَا قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ وَسَلَّمَ فِى الْاِزَارِ فَهُوَ فِى الْقَمِيْصِ.
অর্থ: “হযরত ইয়াযীদ ইবনে আবূ সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইযার বা লুঙ্গির ব্যাপারে যা বলেছেন, তা ক্বমীছ বা কোর্তার ব্যাপারেও প্রযোজ্য। ” (আবূ দাউদ শরীফ, কিতাবুল লিবাস)
অনুরূপ বযলুল মাজহুদ, আউনুল মা’বুদ, শরহে বদরুদ্দীন আইনী কিতাবেও উল্লেখ আছে।
‘বুখারী শরীফ’ উনার বিশ্ববিখ্যাত শরাহ “শরহুল কিরমানী” উনার ‘লিবাস’ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
القدر الـمستحب فيما ينزل اليه طوف القميص والازار لنصف الساقين والـجانز بلا كواهة ما تـحته الى الكعبين وما نزل عنهما ان كان للخيلاء فهو مـمنوع منع تـحريـم.
অর্থ: “ক্বমীছ এবং লুঙ্গি প্রলম্বিত করার সুন্নত সীমা হচ্ছে নিছফুস সাক্ব। নিছফুস সাক্ব থেকে গিরার উপর পর্যন্ত স্থানে ঝুলানো মাকরূহ ছাড়াই জায়িয। আর অহংকারবশতঃ গিরার নিচে ঝুলানো নিষেধ তথা হারাম। ”
অনুরূপ শরহুন নববী, মিরকাত, শরহুত ত্বীবী, জামউল ওয়াসিল, শরহুল মানাবী, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মা’বূদ ইত্যাদি কিতাবে রয়েছে।
প্রমাণিত হলো যে, ক্বমীছ বা কোর্তা নিছফুস সাক্ব তথা হাটু ও গিরার মাঝামাঝি ঝুলানো খাছ সুন্নত। তবে নিছফুস সাক্ব থেকে গিরার উপর পর্যন্ত ঝুলানোও জায়িয। কিন্তু গিরা পার করে ঝুলানো হারাম বা নাজায়িয। মহিলাদের ক্বমীছ নিছফুস সাক্ব পর্যন্ত হওয়াও খাছ সুন্নত। তবে তাদের ইজার বা দোপাট্টা বা সেলোয়ার পায়ের পাতা পর্যন্ত ইসবাল বা ঝুলানো ফরয, যাতে পায়ের কোন অংশ দেখা না যায়।
কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী পরিধান করা নাজায়িয:
‘আবূ দাঊদ শরীফ’ উনার ‘ছলাত’ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَةْ مُـحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّمَنِ بْنِ اَبِىْ بَكْرٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ اَمَّنَا جَابِرُ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فِىْ قَمِيْصٍ لَيْسَ عَلَيْهِ رِدَاءٌ فَلَمَّا اِنْصَرَفَ قَالَ اِنِّىْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّىْ فِىْ قَمِيْصٍ.
অর্থ: “হযরত মুহম্মদ বিন আব্দুর রহমান বিন আবূ বকর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, একবার হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নামাযে এক ক্বমীছ পরিহিত অবস্থায় আমাদের ইমামতি করলেন, সে অবস্থায় উনার শরীর মুবারকে কোন চাদরও ছিলো না। যখন তিনি সালাম ফিরালেন, তখন বললেন, নিশ্চয়ই আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এক ক্বমীছ পরিহিত অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি। ”
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘বযলুল মাজহুদ ফী হল্লে আবী দাঊদ’ কিতাব মুবারক উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, “এক ক্বমীছে নামাযের ইমামতি করেছেন, যে অবস্থায় উনার শরীর মুবারকে কোন চাদরও ছিলো না। ” এর দ্বারা প্রকাশমান যে, উনার পরিধানে কোন ইযারও ছিলো না। ... নিশ্চয়ই হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এক ক্বমীছে নামায পড়েছেন। যাতে এক ক্বমীছ ছাড়া অন্য কোন কাপড় ছিলো না। এমনকি ইযার ও চাদরও ছিলো না। ”
‘আবূ দাউদ শরীফ’ উনার নির্ভরযোগ্য শরাহ ‘শরহে বদরুদ্দীন আইনী’ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, “এ হাদীছ শরীফ থেকে ফতওয়া হলো এক ক্বমীছে নামায পড়া জায়িয। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, অভাব বা সংকটের সময় এক ক্বমীছে নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই। এ হাদীছ শরীফ থেকে আমাদের আছহাবগণ ফায়সালা দিয়েছেন যে, ক্বমীছ যদি উপরে উঠে বা ছোট হয় বা কোনা ফাড়া হয় আর এতে শরীর (ছতর) দেখা যায়, তাহলে নামায শুদ্ধ হবে না।
উক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যে এক ক্বমীছে নামায পড়েছেন সে ক্বমীছ লম্বা, নিছফুস সাক্ব ও গোল তথা কোনা বন্ধ ছিল। কখনোই কোনা ফাঁড়া ছিলো না। কারণ, কোনা ফাঁড়া হলে ছতর প্রকাশ হওয়া অনিবার্য হয়। এছাড়া কোনা ফাঁড়া কোর্তা বা পাঞ্জাবী হচ্ছে হিন্দু-মুশরিকদের খাছ পোশাক। এর উৎপত্তি হয় ভারত উপমহাদেশে আকবরের শাসনামলে। তাই মুসলমানদের এ ধরনের পোশাক পরিধান করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা ফরয।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত আব্বাদ ইবনে বিশর ইবনে ওয়াকাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (১)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর (২)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বেপর্দা সর্বপ্রকার অনিষ্ট ও ফিতনা-ফাসাদের মূল
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে মুসলমান যে বিজাতীয় সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখবে, তাদের সাথেই তার হাশর নশর হবে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করার অপরিসীম ফযীলত
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দুরূদ শরীফ দৈনিক বাদ ইশা ও বাদ ফজর ১০০ বার করে পাঠ করা সকলের জন্য আবশ্যক
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৫)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত- প্রাণীর ছবি হারাম
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












