ইলমে তাছাওউফ
সম্মানিত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার অনুমতি মুবারক ব্যতীত উনার সামনে কোন নফল আমল করবে না
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪)
এডমিন, ০৩ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
.jpg)
বর্ণিত আছে যে, একদা সুলতান মাহমুদ বিশিষ্ট গনিত বিশারদ আল বেরুনীসহ উনার এক বাগানবাড়িতে হাটছিলেন। সুলতান মাহমুদ জানতেন যে, আল বেরুনী অংক শাস্ত্রে উনার অসাধারণ এবং অকল্পনীয় ক্ষমতাবলে অনেক কিছু বলে দিতে পারেন। তাই তাকে অপ্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে তিনি এমন এক বিষয়ের কথা বলতে বললেন, যা সাধারণ দৃষ্টিতে অংকের মাধ্যমে সম্ভব নয়। তিনি আল বেরুনীকে বললেন যে, তিনি আজ উক্ত বাগান বাড়ীর কোন দরজা দিয়ে বের হবেন তা অংক কষে কাগজে লিপিবদ্ধ করতে। আল বেরুনী যথারীতি অংক কষে কাগজে লিপিবদ্ধ করলেন। সুলতান মাহমুদ বললেন, আমি আজ কোন দরজা দিয়েই বের হবোনা। তিনি উত্তর দিকের দেয়াল ভাঙ্গার আদেশ দিলেন এবং সেখান দিয়ে বের হয়ে, আল বেরুনীর লিপিবদ্ধ কাগজটি পড়ার নির্দেশ দিলেন। দেখা গেল সেখানে লেখা রয়েছে, সুলতান মাহমুদ আজ কোন দরজা দিয়ে বের হবেন না। বরং উত্তর দিকের দেয়াল ভেঙ্গে বের হবেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুলতান মাহমুদ নির্দেশ করলেন, আল বেরুনীকে ছাদ হতে ফেলে দিতে। সুলতানের নির্দেশ মত তাকে ছাদ হতে ফেলে দেয়া হল। এদিকে পূর্ব থেকেই সুলতানের ছাদের নীচে বিশেষ কায়দার জাল বিছানো ছিল। ফলতঃ আল বেরুনী উনার জালে পতিত হলেন এবং উনার কিছুই হলো না। এ কথা সুলতানের কানে গেল। সুলতান তার কোষ্ঠিনামা দেখার নির্দেশ দিলেন, দেখা গেল সেখানে লেখা রয়েছে, অমুক তারিখে সুলতান মাহমুদ আমাকে ছাদ হতে মাটিতে ফেলে দিবেন, কিন্তু আমার কোন ক্ষতি হবেনা। এ লেখা দেখে সুলতানের গোস্বার আগুন বহুগুণে বৃদ্ধি পেলো। সুলতান আল বেরুনীকে চিরতরে বন্দী করে রাখার নির্দেশ দিয়ে আশ্বস্ত হলেন। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর একদা সুলতানের সভাষদগণ বললেন, হে আমাদের মহামান্য সুলতান! উনাকে এভাবে বন্দী করে না রেখে মুক্তি দিলে বেশী উপকার হবে। বাদশাহ এ উক্তি শুনে উনাকে মুক্ত করে বললেন, হে আল বেরুনী! আমি তোমাকে কেন বন্দী করেছি তা কি তুমি জানো? আমি তোমাকে হেস্তন্যাস্ত করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি কোন দিক হতে তা হচ্ছিলে না, তাই তোমাকে বন্দী করেছি। তবে জেনে রেখ- রাজা-বাদশাহ, আমীর-উমরাদের নিকট হতে কিছু হাছিল করতে হলে তাদের মতের সাথে মত মিলিয়ে দিতে হয়। তাদেরকে সর্বদা সন্তুষ্ট রাখার উদ্দেশ্যে নিজেকে ছোট হতে হয়, তা না হলে পূর্ণ লাভবান হওয়া সম্ভব নয়।
এখন ফিকিরের বিষয় হচ্ছে যে, নগণ্য তুচ্ছ দুনিয়াকে অর্জনের জন্য যখন রাজা-বাদশাহর মতে মত মিলিয়ে দিতে হয়, নিজকে নিচু ও ছোট হতে হয় এবং সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম আদবে বা শিষ্টতা প্রদর্শন করতে হয়, তাহলে وصول الى الله বা মহান আল্লাহ্ প্রাপ্তির জন্য কতটুকু আদব বজায় রাখা অর্থাৎ নিজেকে দীন-হীনরূপে জাহির করা আবশ্যক, তা সহজেই অনুমেয়।
-আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।