সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন ইনসাফগার বা ন্যায়বিচারক
, ১৩ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৭ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ২২ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে তাক্বওয়া সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বাধিক সম্মানিত যিনি সবচেয়ে বেশি মুত্তাকী বা তাক্বওয়া অবলম্বনকারী। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছু জানেন এবং সব বিষয়ে অবহিত।” (পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)
যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আদেশ নিষেধ মুবারকগুলো মেনে চলেন এবং কখনো মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে নাফরমানী করেন না।
আর ন্যায়বিচার প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَلاَ يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلاَّ تَعْدِلُواْ اعْدِلُواْ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ.
অর্থ: “নির্দিষ্ট কোনো সম্প্রদায়ের বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে তাদের প্রতি অবিচার করতে উদ্বুদ্ধ না করে। তোমরা সকলের প্রতি সুবিচার বা ন্যায়বিচার করবে। ইহা তাক্বওয়ার অধিক নিকটবর্তী অর্থাৎ ইহাই তাক্বওয়া এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছুই জানেন যা তোমরা করে থাকো।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)
অর্থাৎ ইনসাফ বা ন্যায়বিচার করাটা অবশ্যই তাক্বওয়ার অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি যত বেশি তাক্বওয়াধারী তিনি ততো বেশি ন্যায় বিচারক হবেন এটা পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের থেকে প্রমাণিত।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে কত বড় ইনসাফগার বা ন্যায়বিচারক তা আমরা একটা ওয়াকিয়া থেকেই স্পষ্ট বুঝতে পারবো। ওয়াকিয়াটি নিম্নরূপ:
তিনজন লোক পথ দিয়ে যাচ্ছিল। একজনের কাছে পাঁচটি রুটি এবং সেই পরিমাণ তরকারী, দ্বিতীয়জনের কাছে তিনটি রুটি এবং সেই অনুপাতে তরকারী ছিলো আর তৃতীয় ব্যক্তির নিকট কিছুই ছিলো না। খাওয়ার সময় তিনজন একসঙ্গে বসে খেয়েছে। তৃতীয় ব্যক্তি খাওয়ার সময় অপর দুইজনকে খাবারের দামস্বরূপ আট আনা পয়সা দিয়ে চলে গেলো। আট আনা পয়সা ভাগ করার সময় দুইজনের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হলো। প্রথম ব্যক্তিটির দাবি হলো আমার রুটি ছিলো পাঁচটি আর তোমার রুটি ছিলো ৩টি। সুতরাং তুমি তিন আনা পাবে আর আমি পাঁচ আনা। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তির দাবি আমার রুটি তিনটি এবং তোমার পাঁচটি- কথা ঠিকই বলেছো। কিন্তু খাওয়ার সময় আমরা সকলেই সমান খেয়েছি সুতরাং পয়সাও সমান সমান ভাগ হবে। অর্থাৎ আমি চার আনা আর তুমি চার আনা পাবে। কেউই নিজের দাবি ছেড়ে দিতে রাজি নন। শেষ পর্যন্ত তারা আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার খিদমত মুবারকে বিচার পেশ করলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উভয়ের কথা শ্রবণ করার পর দ্বিতীয় ব্যক্তি অর্থাৎ যার রুটি ৩টি ছিলো তাকে বললেন ‘আমি তোমাকে প্রথম ব্যক্তি অর্থাৎ যার রুটি পাঁচটি ছিলো তার প্রস্তাব গ্রহণ করার পরামর্শ দিচ্ছি। দ্বিতীয় ব্যক্তি বললো, হুযূর! আমি আপনার বিচার চাই। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যদি আমার বিচার চাও তাহলে তুমি পাবে এক আনা আর প্রথম ব্যক্তি পাবে সাত আনা। লোকটি হতভম্ভ হয়ে গেলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি তাকে বুঝিয়ে দিলেন কেন তিনি এই বিচার করেছেন। তিনি বললেন, ‘তোমার রুটি ছিলো তিনটা আর প্রথম ব্যক্তির রুটির সংখ্যা ছিলো পাঁচটি, মোট আটটি। তোমরা তিনজনে সমান ভাগ করে খেয়েছো। আটটি রুটি তিনজনের মধ্যে যেহেতু সমান ভাগ হয় না; তাই প্রত্যেকটি রুটিকে সমান তিনটি ভাগে ভাগ করা হলো। তোমার তিনটি রুটিতে মোট ৯ খ- হলো। আর সেটা থেকে তুমি নিজেই আট খ- খেয়েছো এবং মাত্র ১ খ- তৃতীয় ব্যক্তিকে দিয়েছো। আর প্রথম ব্যক্তির পাঁচ রুটিতে মোট পনেরটা টুকরা হয়েছিলো। সে নিজে আট খ- খেয়েছে এবং তৃতীয় ব্যক্তিকে সাত খ- দিয়ে দিয়েছে। তাই তুমি এক আনা পাবে এবং প্রথম ব্যক্তি পাবে সাত আনা। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত ঘটনা থেকে আমরা জানতে পারলাম এবং বুঝতে পারলাম যে- সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি কত বড় ন্যায় বিচারক ছিলেন। একমাত্র পরিপূর্ণ তাক্বওয়ার অধিকারী হওয়ার কারণেই এত সুবিচার করা সহজ এবং সম্ভব হয়েছে।
তাই আমাদের সকলের উচিত তাক্বওয়া অর্জন করা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য আমাদের সকলের জন্য আবশ্যক হচ্ছে- সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে অনুসরণ করা। মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি আমাদের সকলকে সেই তাওফীক দান করুন। (আমীন)
-শবনম আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হাকীকী মু’মিনা মুসলিমা হতে হলে বর্তমানে প্রচলিত এই সমস্ত ফিতনা হতে নারীদেরকে খালেছ তওবা করে দ্বীন ইসলামী আহকামে ফিরে আসতেই হবে
১৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহিলাদের সুন্নতী লিবাস, অলংকার ও সাজ-সজ্জা (১১)
১৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য (২)
১৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহিলা ছাহাবী উনাদের জীবনী মুবারক:
১৪ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়
১৩ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ নিয়ে গবেষণা করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন জাপানি নও-মুসলিম নারী
১২ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: কন্যা সন্তানকে পিতার সম্পত্তি বণ্টন
১২ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাংলাদেশে কখন ও কীভাবে শরীয়তবিরোধী যৌতুক প্রথার প্রচলন শুরু হয়
১১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কথিত সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে অশ্লীল সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নারী নির্যাতনের মূল কারণ
১০ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহিলাদের সুন্নতী লিবাস, অলংকার ও সাজ-সজ্জা (১০)
১০ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য (১)
০৯ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)