সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল,
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (২২)
, ০১ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৮ আউওয়াল, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৭ জুন, ২০২৫ খ্রি:, ১৩ আষাঢ়, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইলমে তাছাউফ
বিছাল শরীফ:
وصال (বিছাল) অর্থ মিলিত হওয়া, সাক্ষাত করা। হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা মারা যান না। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
ان اولياء الله لا يموتون بل ينتقلون من دار الفناء الى دار البقاء
অর্থ: নিশ্চয়ই আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা মৃত্যুবরণ করেন না। বরং উনারা অস্থায়ী আবাস থেকে স্থায়ী আবাসের দিকে ফিরে যান। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ উনাদের সাথে দায়িমী ও হাক্বীক্বী সাক্ষাত মুবারকে মিলিত হন। এজন্য উনাদের ইন্তিকালকে বিছাল শরীফ বলা হয়।
আর হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের তা’যীম বা সম্মানার্থে শরীফ কিংবা মুবারক শব্দটি সংযুক্ত করা হয়। যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মুসলমানরা যতক্ষণ পর্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি বা বিষয়ের যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা বিজয় বেশে কামিয়াবী লাভ করবে। আর যখন সম্মান ইজ্জত প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকবে তখন হালাক বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
كل نفس ذائقة الـموت. ثم الينا ترجعون
অর্থ: “প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর আমার কাছে ফিরে আসবে। (পবিত্র সূরা আনকাবুত: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭)
আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, এই প্রত্যাবর্তন সকলের জন্য সমান নয়। হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু। উনাদের বিদায় বা বিছাল শরীফ বিশ্ববাসীর জন্য ইবরত-নছীহতপূর্ণ। যা বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়েতের কারণ।
গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র জীবনী মুবারকে তার যথার্থ প্রতিফলন ঘটেছে। উনার বিলাদত শরীফের দিনটি যেমন বিশ্ববাসীর হিদায়েত তথা সঠিক পথের দিক নির্দেশক ছিলো। তেমনি বিছাল শরীফ উনার দিনটিও ছিলো বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়েতের কারণ।
যখন হযরত গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিছাল শরীফ উনার সময় নিকটবর্তী হয়ে গেলো তখন উনার ইস্তিঞ্জা মুবারক উনার রাস্তা দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগলো। শুধু তাই নয়, ইস্তিঞ্জা মুবারক থেকে আতর গোলাপের ঘ্রাণ বের হচ্ছিলো এবং তার মধ্য থেকে যিকিরও হচ্ছিলো সুবহানাল্লাহ!
উনার মুরীদ মুতাক্বিদ যারা ছিলেন উনারা বললেন, হুযূর! আপনার শরীরিক অসুস্থতা; আপনাকে চিকিৎসা করানো দরকার। হযরত গাউছুল আ’যম বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথমে বললেন, দেখো, চিকিৎসা করে কি হবে, যিনি সমস্ত চিকিৎসকের চিকিৎসক, সমস্ত হাকীমগণের হাকীম সেই মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আমাকে অসুখ দিয়েছেন। কাজেই আমার এই অসুখ সারা দুরূহ ব্যাপার। আমার হায়াত শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি থাকতে পারবো না এখানে।
তথাপিও মুরীদদের আশা উনারা বললেন, হুযূর! আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমরা চিকিৎসা করি। তিনি চিন্তা করলেন সত্যিই চিকিৎসা করাতো সুন্নত, অসুবিধা নেই ঠিক আছে চিকিৎসা করাও।
মুবারক অনুমতি সাপেক্ষে গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইস্তিঞ্জা মুবারক একটি পাত্র করে এক বিধর্মী ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। সম্মানিত ইসলাম সম্বন্ধে সেই ডাক্তারের তেমন জানাশোনা নেই, হয়তো সামান্য কিছু জানে। যখন গাউছুল আ’যম, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইস্তিঞ্জা মুবারক সেই বিধর্মী ডাক্তারের কাছে পেশ করা হলো, ডাক্তার আশ্চর্য হয়ে মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো। সে প্রথমে বুঝতেই পারলো না এটা কারো ইস্তিঞ্জা। ডাক্তার জিজ্ঞেস করলো, আপনারা এটা কি নিয়ে এসেছেন, এত আতর-গোলাপের সুঘ্রাণ বের হচ্ছে এবং মনে হচ্ছে তার থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির হচ্ছে।
তখন গাউছুল আ’যম, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ মু’তাক্বিদগণ বললেন, মূলতঃ এটা গাউছুল আ’যম, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইস্তিঞ্জা মুবারক। শুনে ডাক্তার আশ্চর্য হয়ে বললো, চিকিৎসা পরে হবে। তার আগে আমাদেরকে তওবা করান। প্রথমে মুসলমান করান। সেই মহল্লায় ছিলো চারশত বিধর্মী লোক। তারা সকলেই তওবা করে মুসলমান হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৬)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৪)
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৩) শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যখন যা আদেশ করবেন তখন তা পালন করাই মুরীদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের কারণ
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর:
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












