সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গওছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
, ২রা শাবান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৫ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ২৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ওলীআল্লাহগণ উনাদের সন্তান ওলীআল্লাহ হয়ে থাকেন এটাই স্বাভাবিক। উনাদের সন্তান-সন্ততির জন্য এটা সহজও বটে। বিপরীত হওয়াটা একেবারে নগণ্য। আর যা নগণ্য তা ধর্তব্য নয়।
মুজাদ্দিদে যামান, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, আওলাদে রসূল, মুহিউদ্দীন, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত আব্বা-আম্মা ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ ওলীআল্লাহ। যে তাক্বওয়া বা পরহেযগারিতা সবকিছুর মূল। উনারা সেই তাক্বওয়া বা পরহেযগারিতার যে চরম পরাকাষ্ঠা মুসলিম উম্মাহকে দেখিয়েছেন তা আগত-অনাগত সকল উম্মাহর জন্য অন্যতম আদর্শ।
উনার আব্বা-আম্মা উনারা ছিলেন সাইয়্যিদ পরিবারের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। উনার আব্বার মুবারক নাম হযরত আবূ ছালেহ মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি দ্বীনের প্রচার-প্রসারের জন্য অনেক জিহাদ (যুদ্ধ) করেছেন। জিহাদ ছিল উনার প্রিয় ও পছন্দনীয় অন্যতম আমল। যার কারণে তিনি জঙ্গী দোস্ত বা যুদ্ধপ্রিয় লক্ববে মাশহূর হয়েছেন। উনার বংশ মুবারক-এর ধারা সাইয়্যিদু আহলিল জান্নাহ, ইমামুল হুমাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু মুহম্মদ হাছান আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রক্ত মুবারক-এর সাথে মিলিত হয়েছে। উনার সম্মানিতা আম্মা তিনিও ছিলেন সাইয়্যিদ পরিবারের মহা সম্মানিতা ব্যক্তিত্ব। উনার রক্ত মুবারক-এর ধারা সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, ইমামুল হুমাম, সাইয়্যিদুনা ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রক্ত মুবারক-এর সাথে মিলিত হয়েছে। উনার মুবারক নাম হযরত ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা। তিনি আমাতুল জাব্বার ও উম্মুল খায়ের লক্বব মুবারক-এর দ্বারা সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। উনার সম্মানিতা নানা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ছাওমাই রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও ছিলেন যুগ শ্রেষ্ঠ আলিম-ওলীআল্লাহ।
উনার বুযুর্গ পিতা এবং মাতা রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের আমল আখলাক ও জীবন সম্পর্কে পর্যালোচনা করলে দেখতে পাবো যে, সত্যিই উনারা গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা-মাতা হবার উপযোগী। তিনি যখন যুবক ছিলেন, তখন একদিন তিনি ক্ষুধার্ত অবস্থায় দজলা নদীর তীর দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন দজলা নদীর মধ্যে একটি ছেব ফল ভাসমান অবস্থায় দেখে ক্ষুধার তাড়নায় খেয়ে ফেললেন। তিনি রাতে বিছানায় শুয়ে চিন্তা করতে লাগলেন ছেব ফল খাওয়া কতটুকু জায়িয হল। (যদিও শরীয়তের মাসয়ালা হল, কোন ব্যক্তি যদি ৩ দিন না খেয়ে থাকে তার জন্য জরুরত আন্দাজ হারাম খাওয়া মুবাহ) এথেকেই বুঝা যায় যে, উনারা হালাল খাবারের প্রতি কতটা দৃঢ় ও মজবুত ছিলেন। কেননা, এক পয়সা হারাম খেলে চল্লিশ দিন ইবাদত কবুল হয়না। কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন-
يايها الناس كلوا مما فى الارض حلالا طيبا ولا تتبعوا خطوات الشيطان انه لكم عدو مبين
অর্থ: “হে ইনসানেরা! তোমরা যমীনে হালাল খাদ্য খাও আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।”
অতঃপর হযরত আবু ছালেহ মূসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পরদিন সকালে দজলা নদীর তীর দিয়ে হাঁটতে লাগলেন, যেদিক থেকে ছেব ফলটি ভেসে আসছিল। কিছুদূর যাবার পর তিনি দেখলেন, নদীর কিনারায় একটি ছেব ফলের বাগান। বাগানের একটি গাছের একটি ডালা ফলসহ নদীর উপর ঝুলন্ত অবস্থায়। আর তার কিছুফল পানিতে ভেসে আছে। তখন তিনি নিশ্চিত হলেন যে, নিশ্চই আমি এই বাগানেরই ফল খেয়েছি। অতঃপর তিনি বাগানের মালিকের বাড়িতে গেলেন। বাড়িতে গিয়ে উনার সাথে বাগানের মালীর দেখা হয়। মালী উনাকে অপেক্ষা করার জন্য বলে বাগানের মালিককে সংবাদ দেয়। কিছুক্ষণ পর বাগানের মালিক আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ছাওমাই রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেখানে এসে উপস্থিত হলে আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত আবু ছালেহ মূসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হুযূর আমি না বলে আপনার বাগানের একটি ছেব ফল ক্ষুধার তাড়নায় নদীতে ভাসমান অবস্থায় পেয়ে খেয়ে ফেলেছি। এখন আমি তার মূল্য পরিশোধ করতে এসেছি। একথা শুনার পর আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ছাওমাই রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আশ্চর্য হলেন এবং মনে মনে ভাবলেন, কত লোকই তো আমার বাগানের কত ফল খেয়েছে কিন্তু কেউই এ পর্যন্ত দাম দিতে আসেনি। নিশ্চয়ই এ যুবক আল্লাহ পাক উনার একজন বিশিষ্ট ওলী হবেন। বাগানের মালিক জিজ্ঞেস করলেন, আপনার নিকট কত দিরহাম আছে। উত্তরে আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত আবু ছালেহ মূসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, দিরহাম থাকলেতো আপনার ফলই খেতাম না। পুণরায় জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কি দিয়ে মূল্য পরিশোধ করবেন? আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত আবু ছালেহ মূসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আপনার বাগানে কাজ করে ফলের মূল্য পরিশোধ করতে চাই। বাগানের মালিক আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ্ ছাওমাই রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, বেশ কাজ করতে থাকুন। (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












