সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৩০)
, ১৫ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৬ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
জালিয়াতী ও কারচুপিমূলক বিকৃতি ইবারতের দলীল ভিত্তিক সঠিক জাওয়াব:
আল-মা’রূফের উল্লেখ করা (১) নম্বর ধোকাবাজীমূলক ইবারত ও তার মিথ্যা অনুবাদ নিম্নরূপ:
اذا ثبت الهلال فى بلد لزم سائر الناس
যে কোনো একটি দেশে নতুন চাঁদ উদয় প্রমাণিত হলে বিশ্বের সকল মানুষের উপর তার অনুসরণ করা জরুরী হয়ে পড়ে। ’ নাঊযুবিল্লাহ!
অত্র কারচুপিমূলক ও জোড়াতালিযুক্ত ইবারতটির প্রমাণস্বরূপ সে ‘আল-মুখতার, ফতহুল ক্বদীর, মারাকিউল ফালাহ ও আল-বাহরুর রায়িক’ এই ৪টি ফিক্হ ও ফতওয়ার কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো: উক্ত ইবারত হুবহু ঐভাবে প্রথম তিনটি কিতাবের কোথাও নেই। এবং তার চাইতে আশ্চর্যের বিষয় হলো: চতুর্থ কিতাব ‘আল-বাহরুর রায়িক’-এ উক্ত ইবারতখানা মোটেও উল্লেখ নাই। ধারাবাহিকভাবে তার প্রমাণসহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
* ১ম কিতাব (আল-মুখতার):
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাহমূদ বিন মাওদূদ আবুল ফযল মূছিলী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত: ৬৮৩ হিজরী) তিনি স্বীয় ‘আল-মুখতার’ নামক মশহূর ও গ্রহণযোগ্য ফিক্হ উনার কিতাবের রোযা অধ্যায়ে লিখেন-
فاذا ثبت فى بلد لزم جميعَ الناس
সঠিক অর্থ: ‘কোনো শহর বা অঞ্চলে নতুন চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে, সে শহর বা অঞ্চলের সকল লোকের জন্য তার অনুসরণ করা ওয়াজিব হবে। ’
আল-মা’রূফ লিখেছে-
اذا ثبت الهلال فى بلد لزم سائر الناس
যে কোনো একটি দেশে নতুন চাঁদ উদয় প্রমাণিত হলে বিশ্বের সকল মানুষের উপর তার অনুসরণ করা জরুরী হয়ে পড়ে। ’ নাঊযুবিল্লাহ!
আমাদের পর্যালোচনা ও জাওয়াব:
১. উক্ত কিতাবের মধ্যে ثبت শব্দের পর الهلال শব্দটি উল্লেখ নেই, কিন্তু আল-মা’রূফ এ শব্দটি অতিরিক্ত সংযুক্ত করেছে। এছাড়াও কিতাবে لزم শব্দের পর جميع শব্দ উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু আল-মারূফ جميع শব্দকে বাদ দিয়ে سائر শব্দ জুড়ে দিয়েছে। অতএব প্রমাণিত হলো যে, আল-মা’রূফ একজন ইবারত হেরফেরকারী, ইবারতচোর ও জালিয়াত।
২. আব্দুল্লাহ আল-মা’রূফ جميعَ الناس বাক্যাংশের অনুবাদ করেছে ‘বিশ্বের সকল মানুষের উপর’। যা চরম মিথ্যাচার। কেননা ইবারতের শুরুতে
فاذا ثبت فى بلد
কোনো শহর বা অঞ্চলে নতুন চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে’ উক্ত বাক্যাংশটি উল্লেখ আছে। যা প্রমাণ করে যে-
যে শহর বা অঞ্চলে খালি চোখে নতুন চাঁদ দেখা যাবে সে শহর বা অঞ্চলের অধিবাসীরা নিজস্ব মাত্বলা’ অনুযায়ী সেই চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে পবিত্র রোযা, পবিত্র ঈদাঈন ও চাঁদ সংশ্লিষ্ট ইবাদতসমূহ পালন করবেন।
৩। এছাড়াও উক্ত ইবারতের ভিতরে বিশ্ব বা পৃথিবী অর্থপ্রকাশক কোনো আরবী শব্দ উল্লেখ নেই। তা সত্ত্বেও “বিশ্বের সকল মানুষের উপর” এই বাক্যের মধ্যে বিশে^র কথাটি সে অতিরিক্ত সংযুক্ত করেছে। যার কারণে প্রমাণিত হলো সে অর্থচোর ও প্রতারক।
৪. মা’রুফ উল্লেখিত ইবারতে بلد শব্দের অর্থ করেছে দেশ। বালা¬দ শব্দের একাধিক অর্থের মধ্যে কিতাবের সকল মুছান্নিফগণ এবং শরাহকারীগণ উনারা بلد শব্দটিকে শহর অর্থেই ব্যবহার করেছেন। কিন্তু মা’রুফ এবং তার সমগোত্রীয় বিদয়াতীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে দেশ অর্থ করে মানুষকে ধোকা দেয়ার চেষ্টা করেছে।
মূলত: চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে بلد শব্দটি শুধুমাত্র শহর অর্থেই ব্যবহার করা হয়েছে, তার অকাট্য প্রমাণ হলো পবিত্র হাদীছে কুরাইব, যাতে শাম শহর এবং পবিত্র মদীনা শরীফ উনার শহর এর চাঁদ দেখার ভিন্নতা বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা, পবিত্র মদীনা শরীফ এবং শাম শহর তখন একই খিলাফত উনার অধীনেই ছিল, আলাদা কোন দেশ ছিল না। তাছাড়া হযরত ইমাম মুজতাহিদগণ উনারা পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণিত হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার এক অঞ্চল থেকে অন্য দূরবর্তী অঞ্চলের সফরের দূরত্ব নির্ণয় করেছেন ৫৪০ মাইল। যা এক মাসের পথের সমান। সুতরাং উল্লেখিত ইবারত গুলিতে বালাদ শব্দের অর্থ দেশ নয় বরং বালাদ অর্থ হলো শহর বা অঞ্চল। চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত আব্বাদ ইবনে বিশর ইবনে ওয়াকাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (১)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর (২)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বেপর্দা সর্বপ্রকার অনিষ্ট ও ফিতনা-ফাসাদের মূল
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে মুসলমান যে বিজাতীয় সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখবে, তাদের সাথেই তার হাশর নশর হবে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করার অপরিসীম ফযীলত
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দুরূদ শরীফ দৈনিক বাদ ইশা ও বাদ ফজর ১০০ বার করে পাঠ করা সকলের জন্য আবশ্যক
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৫)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত- প্রাণীর ছবি হারাম
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












