সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৩৮)
, ১৮ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৮ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৭ মে, ২০২৪ খ্রি:, ১৩ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফেৎনায় ফেলতে পারবে না।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
আল-মা’রুফ সে তার “আল-হেলাল” বইয়ের ৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছে, “রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন দেশ বা জাতিকে নির্দিষ্ট না করে আমভাবে (ব্যাপকভাবে) সম্বোধন করে বলেছেন; তোমরা নতুন চাঁদ দেখে রোযা রাখো আর নতুন চাঁদ দেখে ঈদ করো।”
এবং সে উক্ত বইয়ের ১১ পৃষ্ঠায় লিখেছে, “এ হাদীছ তো এককভাবে কোন একটি নির্দিষ্ট দিকের সীমাবদ্ধ বা খাছ করে না। বরং এটা মুসলমান মাত্রই যে কোন লোককে সম্বোধন করে।”
তদ্রুপ, সারাবিশে^ একই দিনে পবিত্র রোযা ও পবিত্র ঈদ পালন করার দাবিকারীদের আরেক দাজ্জাল গুরু তথা মিথ্যাবাদী, প্রতারক যার নাম হলো এ কে এম মাহবুবুর রহমান।
সে সারাবিশে^ একই দিনে পবিত্র রোযা ও পবিত্র ঈদ পালন করার প্রমাণ দিতে গিয়ে ৯০ পৃষ্ঠার একটি বই লিখেছে, যার নাম দিয়েছে সে- “চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদত একই তারিখ ও বারে পালন সম্পর্কিত ফতওয়া”
সে তার লিখিত বইয়ের ২৩ পৃষ্ঠায় লিখেছে, “উক্ত হাদীছ শরীফে “তোমরা” বলে সম্বোধন দেশ-মহাদেশের সীমানা পেরিয়ে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য ব্যাপক অর্থবোধক সম্বোধন।”
অনুরূপ, “আল বায়ানুল মাশরিক লি সববি ছিয়ামিল মাগরীব বি রু’ইয়াতিল মাশরিক” নামক কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
فإذا ثبت في مصر لزم الناس جميعاً وذلك لعموم الخطاب في قوله صلى الله عليه وعلى آله وصحبه وسلم (صُومُوا)
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বওল শরীফ উনাতে “তোমরা রোযা রাখো” উক্ত আম তথা শর্তহীন সম্বোধন উনার কারণে যখন কোন শহরে নতুন চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে সকল মানুষের উপর রোযা ফরয হয়ে যাবে।
জাওয়াব:
আম নির্দেশ হওয়ার কারণে যদি পবিত্র ঈদ ও রোযা একই দিনে শুরু করতে হয়। তাহলে, তাদের তিনটি বিষয় জেনে রাখা উচিত। তা হলো-
১। শরীয়তে আম নির্দেশমূলক অনেক ইবাদত রয়েছে, সেগুলিকে একই দিনে পালন না করে, শুধুমাত্র পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা নিয়ে একই দিনে পালন করার দাবি করা, এটা মুসলমানদের পবিত্র ঈদ ও রোযাকে নষ্ট করার জন্য একটি নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্র।
আম বা শর্তহীন নির্দেশমূলক অনেক ইবাদত উনার মধ্যে কয়েকটি হলো;
১। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পবিত্র সাহরী (অর্থাৎ ছুবহে কাযিব থেকে ছুবহে ছাদিক তথা ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত) খাওয়া ও পান করা এবং রাত পর্যন্ত পবিত্র রোযা পূর্ণ করা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
كُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ
অর্থ: ছুবহে কাযিব থেকে ছুবহে ছাদিক অর্থাৎ ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত খাও ও পান করো। অতঃপর রাত পর্যন্ত পবিত্র রোযা পূর্ণ করো। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১৮৭)
উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফে আম বা শর্তহীন দুটি নির্দেশ দেয়া হয়েছে- একটি হলো:
كُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ
অর্থ: ছুবহে কাযিব থেকে ছুবহে ছাদিক অর্থাৎ ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত খাও ও পান করো।
অপরটি হলো:
أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ.
অর্থ: অতঃপর রাত পর্যন্ত পবিত্র রোযা পূর্ণ করো।
উল্লেখিত আয়াত শরীফে كُلُوا وَاشْرَبُوا এবং أَتِمُّوا এই শব্দগুলি আম নির্দেশ। তাদের কথা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোন দেশ বা অঞ্চলকে সম্বোধন করে উক্ত সাহরী-ইফতারী করতে বলা হয়নি। তাই তাদের দাবি অনুযায়ী তারা তো সারাবিশে^ একই সময়ে বা একই দিনে পবিত্র সাহরী ও ইফতারী শুরু করে না বা শেষও করে না। বরং তাদের স্থানীয় সময়ের অনুসরণ করে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ইফতারী করে মুনাফিকীর প্রমাণ করতেছে। কেননা, প্রত্যেক দূরবর্তী অঞ্চল বা দেশে ইফতারের সময় হওয়ার সাথে সাথে আরেকটি নতুন দিন, বার ও তারিখের শুরু হয়ে যায়। পাঁচ মিনিটের ব্যবধান হলেও নিকটবর্তী অঞ্চলসমূহের সাথে একই দিনে ইফতার শুরু করতে পারছে না। অর্থাৎ তারা আম নির্দেশকে মানার কথা বলে, নিজেরাই সর্বদা আম নির্দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে মহান আল্লাহ পাক উনার বিরোধিতায় লিপ্ত রয়েছে। চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যে নিজে পর্দা করে না ও অধীনস্থদের পর্দা করায় না সে দাইয়ূছ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাক্বীক্বী মৃত্যুকে স্মরণ করার মধ্যেই শহীদী দরজা মিলে
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন রোগই ছোঁয়াচে নয়, ছোঁয়াচে বিশ্বাস করা কুফরী
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত আব্বাদ ইবনে বিশর ইবনে ওয়াকাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৩)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা কবীরা গুনাহ ও অসন্তুষ্টির কারণ
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বক্ষেত্রে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে নেয়াই ঈমানদারের পরিচয়
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












