১০০ টি চমৎকার ঘটনা
হক্কানী শায়েখ উনার উসীলায় ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ
ঘটনা-৭৯
, ২৯ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৪ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ১২ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৮ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা
হযরত নাজীবুদ্দীন কুবরা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার নাম কি? তিনি বললেন, আমার নাম ফখরুদ্দীন। হযরত নাজীবুদ্দীন কুবরা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, কোন ফখরুদ্দীন? যিনি মানতিকের ইমাম? তিনি জবাব দিলেন, জী হুযূর! আমি সেই ফখরুদ্দীন। হযরত নাজীবুদ্দীন কুবরা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বাইয়াত করালেন। অতঃপর সবক্ব দিয়ে বললেন, আপনার ভিতর মানতিকের ইলম পরিপূর্ণ। কাজেই, আপনি আগামী এক বছর যাহিরী কোনো পড়া-শুনা না করে নিরিবিলি অবস্থান করে ইলমে তাসাউফ বা তরীক্বতের সবক আদায় করতে থাকেন। শায়েখ উনার নির্দেশ মুতাবিক তিনি নিরিবিলি অবস্থান করে তরীক্বতের সবক্ব আদায় করতে লাগলেন।
এরপর তিনি মনে মনে চিন্তা করলেন শায়েখ তো পড়তে নিষেধ করেছেন। কিন্তু লিখতে তো নিষেধ করেননি। এ চিন্তা করে তিনি তরীক্বতের সবক্ব আদায়ের ফাঁকে ফাঁকে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তাফসীর লিখতে শুরু করলেন এবং বেশকিছু অংশের তাফসীর লিখলেন। যা ‘তাফসীরে কবীর’ হিসেবে আজ সারাবিশ্বে মশহূর। বছর শেষে তিনি যখন উনার শায়েখ হযরত নাজীবুদ্দীন কুবরা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফে উপস্থিত হলেন; শায়েখ উনাকে দেখেই বললেন, আপনার তো ইলমে মানতিক আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বললেন, আপনার ভিতরে ইলমে তাসাউফ প্রবেশ করাতে হলে ইলমে মানতিক কমাতে হবে। এটা বলে তিনি ইলমে মানতিক কমানোর জন্য ফায়িয নিক্ষেপ করলেন। এতে হযরত ফখরুদ্দীন রাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ভিতরে করকর শব্দ হতে লাগলো। তিনি শায়েখ উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হুযূর! আমার ভিতরে কিসের শব্দ হচ্ছে। শায়েখ বললেন, আপনার ভিতরে মানতিকের যে অতিরিক্ত ইলম আছে, সেটা কমিয়ে দিচ্ছি। তিনি বললেন, ‘হুযূর! বেয়াদবি মাফ করবেন, ফখরুদ্দীনের ফখরই তো ইলমে মানতিক।’ এটা না কমানোর জন্য তিনি আরজু পেশ করলেন এবং শায়েখ উনার সবক্ব নিয়ে নিজের এলাকায় চলে আসলেন। শায়েখ উনার ইজাযত নিয়ে তিনি স্বীয় এলাকায় তা’লীম-তালক্বীন, দর্স-তাদরীসের কাজ করতে লাগলেন। তিনি জানেন শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। সাধারণ মুসলমান তো বটে, যারা আলিম-উলামা, পীর-মাশায়িখ, ছুফী-দরবেশ দাবীদার তাদেরকেও শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে এবং অনেককে বিভ্রান্ত করেও ফেলে। এমনকি ইন্তিকালের মুহূর্তেও শয়তান ধোঁকা দিয়ে ঈমানহারা করার চেষ্টা করে থাকে। সেজন্য মানতিকের ইমাম হযরত ফখরুদ্দীন রাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুখতালিফ রিওয়ায়েত মুতাবিক একশ থেকে এক হাজার দলীল প্রস্তুত করে রাখলেন যাতে ইন্তিকালের সময় উনাকে শয়তান ধোঁকা দিয়ে ঈমানহারা করতে না পারে।
উনার অন্তিম সময়ে শয়তান যথারীতি উপস্থিত হলো। সে এসে দাবি করলো মহান আল্লাহ পাক তিনি একক নন। ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সে কথা অস্বীকার করলেন। উভয়ের মধ্যে বাহাস শুরু হলো। ইবলীসের বাতিল যুক্তি খন্ডন করে হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি দলীল পেশ করতে লাগলেন।
শয়তান একসময় ছিল সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের শিক্ষক। অন্যদিকে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করলেও, ইলমে তাসাউফ (অন্তর পরিশুদ্ধকারী ইলম) পরিপূর্ণভাবে হাছিল করেননি। ফলে তিনি যতই দলীল পেশ করতে লাগলেন, শয়তান তার সবই খন্ডন করে ফেলতে লাগলো। এক সময় উনার ১০০ থেকে ১০০০ দলীল শেষ হয়ে গেলো তথাপি ইবলীসের বাতিল যুক্তি খ-ন করা গেলো না। নাঊযুবিল্লাহ!
তখন ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ভয় পেয়ে গেলেন যে, মহান আল্লাহ পাক না করুন, তিনি হয়ত ঈমানহারা হয়েই চলে যাবেন। এ অবস্থায় উনার একমাত্র ভরসা ছিলেন উনার শায়েখ হযরত নাজীবুদ্দিন কুবরা রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি এদিক-সেদিক তাকাচ্ছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে উনার শায়েখ হযরত নাজীবুদ্দীন কুবরা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি যুহর নামাযের ওযূ করছিলেন। তিনি কাশফ অর্থাৎ অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখতে পেয়ে ওযূর পানি নিক্ষেপ করে বললেন, হে ফখরুদ্দীন! তুমি ইবলীসকে বলো, ‘বিনা দলীলে মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন’। বহু দূর থেকে যখন শায়েখ উনার নিক্ষিপ্ত ওযূর পানি এসে উনার চেহারার উপর পড়লো এবং শায়েখ উনার ক্বওল মুবারকের আওয়াজ উনার কানে এসে পৌঁছলো তিনি তখন ইবলীসকে জানিয়ে দিলেন, ‘হে ইবলীস! জেনে রাখ, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন। এটা আমি বিনা দলীলেই বিশ্বাস করি’। তখন ইবলীস বললো, হে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি! আপনি আজকে আপনার শায়েখ উনার জন্য
বেঁচে গেলেন। অন্যথায় আমি আপনাকে ঈমানহারা করে মৃত্যুমুখে পতিত করে চলে যেতাম। নাঊযুবিল্লাহ!
এদিকে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হযরত নাজীবুদ্দীন কুবরা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে উনার খাদেম জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘হুযূর! আজ বহুদিন আপনার খিদমতে আছি, সবসময় এক বদনা দিয়েই আপনার ওযূ সম্পন্ন হতে দেখেছি। কিন্তু আজ তার ব্যতিক্রম দেখলাম। আপনি আরো যা করলেন, কখনও তো এমন দেখিনি!’ শায়েখ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ! ঠিক বলেছো। তখন আমি দেখছিলাম ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইবলীসের সাথে বাহাছ করে হেরে যাচ্ছিলো প্রায়। তাঁর ঈমানহারা হয়ে মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমতাবস্থায় তাঁকে ফায়েজ দিয়ে সে অবস্থা থেকে উদ্ধার করার জন্যই এমন করতে হলো।’ সুবহানাল্লাহ!
ইতিহাসের এ মশহূর ঘটনা দ্বারা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নিকট বাইয়াত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা ও উনাদের ফায়িয-তাওয়াজ্জুহর বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। অতএব, হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার উম্মত না হয়ে যেরূপ ইছলাহ ও নাজাত লাভ করা যায় না, তদ্রুপ কামিল শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত না হওয়া পর্যন্ত ইছলাহ বা পরিশুদ্ধতা ও নাজাত লাভ করা যায় না। বরং শয়তানী প্রবঞ্চনায় পড়ে গোমরাহীতে নিপতিত হওয়াই স্বাভাবিক। যেমন, হাজার দলীলেও কাজ হলো না ইবলীসের মুকাবিলায়। শেষপর্যন্ত, ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি নাজাত পেলেন উনার শায়েখের উসীলায়। সুবহানাল্লাহ!!!
ইনশাআল্লাহ চলবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












