জীবনী মুবারক
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৬)
বিলাদত শরীফ: ৬১৯ খৃ: বিছাল শরীফ: ৬৮ হিজরী (৬৮৮ খৃ:) বয়স মুবারক: ৭০ বছর।
, ৩০ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৮ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ০৬ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ২২ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ফযীলত ও মর্যাদা:
জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে যখন তিনি কিছুটা আত্মতৃপ্তি অনুভব করলেন, তখন মানুষকে শিক্ষাদানের ব্রত কাঁধে তুলে নিলেন। আর তখন থেকেই উনার বাড়ীটি একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় অর্থাৎ দেশ বিদেশ থেকে আবালবৃদ্ধ-বনিতা সকল জ্ঞান পিপাসু শিক্ষার্থীরা উনার বাড়ীতে এসে শিক্ষা গ্রহণ করতেন।
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এক সঙ্গী বর্ণনা করেন, আমি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এমন একটি মাহফিল দেখেছি যা গোটা কুরাইশ গোত্রের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। দেখলাম উনার বাড়ীর সম্মুখের রাস্তাটি লোকে লোকারণ্য। আমি উনার কাছে উপস্থিত হয়ে বাড়ীর দরজায় মানুষের প্রচ- ভীড়ের কথা জানালাম। তিনি অযুর জন্য পানি আনালেন। অযু করলেন। তারপর বসে বললেন, তুমি বাইরে গিয়ে অপেক্ষমান লোকদের বলো, যারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও ক্বিরায়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে চাও, ভিতরে যাও। আমি বাইরে গিয়ে এ কথা লোকদেরকে বললাম। বলার পর এত বিপুল সংখ্যক লোক ভিতরে প্রবেশ করলো যে, কক্ষটি এমনকি সম্পূর্ণ বাড়ীটি পূর্ণ হয়ে গেল। তারা যা কিছু জানতে চাইলো, তিনি তাদেরকে অবহিত করলেন। তারপর বললেন, তোমাদের অপেক্ষমান ভাইদের জন্য পথ ছেড়ে দাও। তারা চলে গেল।
অতঃপর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে বললেন, বাইরে গিয়ে বলো, যারা পবিত্র কুরআন শরীফের তাফসীর ও তাবীল সম্পর্কে জানতে চাও, ভিতরে যাও। আমি বাইরে গিয়ে তাদেরকে এ কথা বললাম। বলার সাথে সাথে পূর্বের ন্যায় এবারো লোকে পুরো বাড়ীটি ভরে গেল। শিক্ষার্থীদের সব প্রশ্নেরই তিনি জবাব দিলেন এবং অতিরিক্ত অনেক কিছুই অবহিত করলেন। তারপর বললেন, তোমাদের অপেক্ষমান ভাইদের জন্য পথ ছেড়ে দাও। তারা বেরিয়ে গেল।
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে আবার বললেন, তুমি বাইরে গিয়ে যারা হালাল, হারাম ও ফিক্বাহ সম্পর্কে জানতে চায় তাদেরকে ভিতরে পাঠিয়ে দাও। আমি বাইরে গিয়ে তাদেরকে পাঠালাম। তাদের সংখ্যাও এত ছিলো যে হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পুরো বাড়ীটি সম্পূর্ণরূপে ভরে গেল। তাদের সকল জিজ্ঞাসার জবাব দানের পর তাদেরকে পরবর্তী লোকদের জন্য স্থান ছেড়ে দিতে বললেন। তারা চলে গেল।
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে আবার পাঠালেন এবং ফারায়েজ ও তৎসংক্রান্ত মাসয়ালা-মাসায়েল সম্পর্কে যারা জানতে চায় তাদেরকে আহবান জানালেন। এবারও পূর্বের ন্যায় বাড়ীটি পরিপূর্ণ হয়ে গেল। তাদের সকল জিজ্ঞাসার সন্তোষজনক জবাব দানের পর পরবর্তী লোকদের জন্য স্থান ছেড়ে দিতে বললেন। তারা চলে গেল।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে আবার পাঠিয়ে বললেন, যারা আরবী ভাষা, কবিতা এবং আরবদের বিস্ময়কর সাহিত্য সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাদেরকে পাঠিয়ে দাও। আমি তাদেরকে পাঠালাম। এবারও বাড়ীটি ভরে গেল। তিনি তাদের সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে তুষ্ট করে বিদায় দিলেন।
বর্ণনাকারী মন্তব্য করেন, সমগ্র কুরাইশ গোত্রের গৌরব ও গর্বের জন্য এই একটিমাত্র সমাবেশই যথেষ্ট। এমন ভীড়ের কারণেই হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পরবর্তীকালে এক একটি বিষয়ের জন্য সপ্তাহের একটি দিন নির্ধারণ করেছিলেন। ফিক্বাহ, মাগাযী, কবিতা, প্রাচীন আরবের ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন দিনে তিনি আলোচনা করতেন। উনার এসব আলোচনার মজলিসে যত বড় জ্ঞানীই উপস্থিত হতেন না কেন, তিনি পরিতৃপ্ত হয়ে ফিরতেন।
খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে পরবর্তী খলীফা উনারা সকলেই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পরামর্শক হিসেবে গ্রহণ করতেন। তিনি উনার অপরিসীম জ্ঞান ও চিন্তাশক্তির কল্যাণে অল্পবয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের মজলিসে শূরার সদস্য হওয়ার গৌরব লাভ করেছিলেন। খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কোন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে প্রবীন ও বিদ্বান ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আহবান করতেন। সেই সাথে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেও ডেকে পাঠাতেন। তিনি উপস্থিত হলে খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করে বলতেন, আমরা এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি, আপনি ও আপনার মত আর যারা আছেন আপনারা সমাধান বের করুন। (চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












