জীবনী মুবারক
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
বিলাদত শরীফ: ৫৯১ খৃ: বিছাল শরীফ: ৩৩ হিজরী (৬৫৩ খৃ:) বয়স মুবারক: ৬৩ বছর
, ৭ই শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১০ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২৪ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরবর্তী সময়ে:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশিত হওয়ার পর দীর্ঘদিন যাবত তিনি তা’লীম ব্যতিত অন্যান্য সকল কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকেন। তবে খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারককালে হিজরী ১৫ সনে তিনি জিহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ইয়ারমুকের জিহাদে বেরিয়ে পড়েন এবং বীরত্বের সাথে জিহাদ করেন। হিজরী ২০ সনে (৬৪০ খৃ:) খলীফা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে কূফার কাজী হিসেবে নিয়োগ করেন। কাজীর দায়িত্ব ছাড়াও বাইতুল মাল, মুসলমানদের দ্বীনি শিক্ষা এবং কূফার প্রশাসকের মন্ত্রীত্বের দায়িত্বও উনার উপর ন্যস্ত করা হয়। তিনি পরিপূর্ণ সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে পূর্ণ ১০ বছর স্বীয় কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করেন। উনার বিরূদ্ধে কেউ কখনই কোন অভিযোগ করেনি।
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারকের শেষের দিকে যখন গোলযোগ ও ষড়যন্ত্র প্রবল হয়ে উঠে তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে সঙ্গী সাথী ও পরিবার পরিজনসহ কূফা থেকে হিজাযের দিকে রওয়ানা হন।
হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জানাযা ও দাফন:
হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন ‘রাবযা’ নামক স্থানে পৌঁছেন তখন পথের মধ্যে একজন উদ্বিগ্ন ও উৎকন্ঠিত মহিলাকে দেখতে পেয়ে উনার দুশ্চিন্তার কারণ অনুসন্ধান করেন। মহিলা বললেন, একজন মুসলমানের কাফন-দাফন করুন। তিনি জিজ্ঞাসা করেন; কার? মহিলা বললেন, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার। “আমার মাতা-পিতা উনার উপর কুরবান হোক” এই বলে তিনি সঙ্গীদের সাথে নেমে পড়েন। হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন একজন উচ্চ স্তরের অত্যন্ত সৎ ও নিবেদিত প্রাণ ছাহাবী। দারুল খিলাফতের ক্রম বর্ধমান সভ্যতা-সমৃদ্ধির সোনালী যুগে তিনি ‘রাবযা’র নির্জন অরণ্যে চলে আসেন এবং সে স্থানেই বাস করতে থাকেন। হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার নিকট পৌঁছে উনাকে অন্তিম শয্যায় দেখতে পান। হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বীয় কাফন-দাফন সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওছীয়ত মুতাবিক জানাযার নামায পড়িয়ে হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দাফন করেন।
পবিত্র মদীনা শরীফে প্রত্যাবর্তন ও বিছাল শরীফ:
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে পৌঁছে খলীফা উনাকে হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিছাল (ওফাত) শরীফের সংবাদ দেন এবং উমরাহ সম্পন্ন করত: বাকী জীবন নির্জনে মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদতে কাটাবার মানসে পবিত্র মদীনা শরীফে আগমন করেন। উনার বয়স ষাট বছর অতিক্রম করলে তিনি বার্ধক্যে উপনীত হন। অন্তিম সময়ে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে দেখতে যান। তখন উনাদের মধ্যে নিম্নোক্ত শিক্ষাপ্রদ কথোপকথন হয়:
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম --- আপনার অসুখটা কি?
হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু --- (বিনয় প্রকাশ করে) আমার পাপসমূহ-ই আমার অসুখ।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম --- আপনার বাসনা কি?
হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু --- আমার পালনকর্তার রহমত কামনা করি।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম --- আমি আপনার জন্য কোন চিকিৎসক ডাকবো কি?
হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু --- চিকিৎসকই আমাকে রোগাক্রান্ত করেছেন। অর্থাৎ পরকালীন চিন্তায় চিন্তিত।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম --- আমি আপনার জন্য সরকারী বাইতুল মাল হতে কোন উপঢৌকন পাঠিয়ে দিবো কি?
হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু --- উনার কোন প্রয়োজন নেই।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম --- উপঢৌকন গ্রহণ করুন। তা আপনার পরে আপনার মেয়েদের উপকারে আসবে।
হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু --- আপনি চিন্তা করেছেন যে, আমার মেয়েরা দারিদ্র ও উপবাসে পতিত হবে। কিন্তু আমি উক্তরূপ চিন্তা করি না। কারণ আমি মেয়েদেরকে জোর নির্দেশ দিয়ে রেখেছি যে, উনারা যেন প্রতি রাত্রে “সূরা ওয়াকিয়া” পাঠ করেন। আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রতি রাত্রে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করে সে কখনও উপবাস থাকবে না।
হিজরী ৩৩ সনে ও ৬৫৩ খৃ: সনে ৬৩ বছর বয়স মুবারকে তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার জানাযার নামায পড়ান এবং হযরত উছমান ইবনে মাজউন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পাশেই উনাকে দাফন করেন। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












