সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (২১)
হযরত কা’ব বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার একটি ঈমানদীপ্ত পরীক্ষা
, ১৫ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৬ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত কা’ব বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, ‘আমরা তিনজন যারা তাবুকের জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারিনি, আমাদের সাথে মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে দিলেন। যার ফলে সকলেই আমাদেরকে এড়িয়ে চলতে লাগলেন। উনাদের চাল-চলন, আচার-ব্যবহার যেন সম্পূর্ণ পাল্টে গেল।
পবিত্র মদীনা শরীফের যমীন আমাদের কাছে অপরিচিত মনে হলো। মনে হচ্ছিলো, এটাতো সেই যমীন নয় যেই যমীনকে আমরা চিনতাম, জানতাম। গোটা পৃথিবী সুবিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও আমাদের জন্য যেন সংকুচিত হয়ে গেলো। তখন আমি আমার চাচাতো ভাই হযরত আবূ কাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, যাঁর সাথে আমার খুবই ঘনিষ্ঠতা ছিল। একবার উনার বাগিচার প্রাচীর টপকে ভিতরে প্রবেশ করে উনাকে সালাম করলাম। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তিনি আমার সালামের জবাবটা পর্যন্ত দিলেন না।
আমি উনাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি বিশ্বাস করেন না যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আমার গভীর মুহব্বত আছে? তিনি এ কথারও কোন জবাব দিলেন না। আমি দ্বিতীয়বার কসম দিয়ে জানতে চাইলে তিনি তখনও চুপ রইলেন। আমি তৃতীয়বার কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সর্বোত্তম জানেন। এটা শুনে আমি অশ্রু সংবরণ করতে পারলাম না এবং সেখান হতে ব্যর্থ মনে ফিরে আসলাম।
এ সময় একবার আমি মদীনা শরীফের বাজারে যাচ্ছিলাম। সিরিয়ার এক কৃষক যে মদীনা শরীফে শাক-সবজি বিক্রি করতে এসেছিল। সে বললো, আমাকে কি কেউ হযরত কা’ব বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সন্ধান দিতে পারেন? লোকেরা তখন ইঙ্গিতে বললেন, ইনিইতো হযরত কা’ব বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। লোকটি আমাকে গাসসানের শাসকের দূত পরিচয় দিয়ে শাসকের একটি পত্র হস্তান্তর করলো। পত্রে শাসক আমাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছে- ‘যেভাবেই হোক আমি জানতে পারলাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার থেকে পৃথক হয়ে গেছেন; মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আপনাকে এমন অপমানজনক জায়গায় না রাখেন এবং আপনাকে যেন ধ্বংস না করেন। আপনি আমার কাছে চলে আসুন। আমি আপনার ব্যাথা বিপদের অংশীদার হবো। আপনাকে সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা করবো। ’
পত্রটি পড়ে আমি সাথে সাথে ‘ইন্না লিল্লাহ’ পড়লাম এবং মনে করলাম এটাও আমার একটা পরীক্ষা। তাই আমি শাসকের পত্রটি চুলার মধ্যে ফেলে আগুনে জ্বালিয়ে দিলাম। সুবহানাল্লাহ!
ঈমানদীপ্ত ইবরত:
উপরোক্ত ঘটনা থেকে যে বিষয়টি সহজেই প্রতিভাত হয় তা হলো, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নিষেধ ও আনুগত্যের এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যার নজীর মানব ইতিহাসে মিলা অসম্ভব ও দুষ্কর।
হযরত কা’ব বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিসহ তাবুকের জিহাদে যেতে না পারা অপর দু’জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে কথাবার্তা বন্ধ রাখার যে নিষেধাজ্ঞা তা সাথে সাথেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। কেউ গোপনে কিংবা নির্জনেও উনাদের সাথে কথা বলেননি। কারো অলক্ষ্যে উনাদের সাথে কেউ কোন সাক্ষাতও করেননি। যা একাধারে প্রায় ৫০ দিন বহাল ছিল অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক না করেছিলেন।
এছাড়া উক্ত ঘটনায় হযরত কা’ব বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ইশক, মুহব্বত, আনুগত্যের ঈমানদীপ্ত ইস্তিকামত থাকার বিষয়টিও ফুটে উঠেছে; চরম প্রতিকূল অবস্থায় একজন শাসকের বন্ধুত্বের নিরাপত্তার আহবানকে আগুনে জ্বালিয়ে তিনি ভস্ম করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
কারণ হযরত কা’ব বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিসহ সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের জীবনের একমাত্র চূড়ান্ত লক্ষ্যই ছিল সর্বাবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চিরস্থায়ী রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারকের নজরানা; যা কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক উম্মতে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে জাগরুক থাকা সর্বাবস্থায় অপরিহার্য দায়িত্ব-কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত।
যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি সে অবস্থায় দায়িম-ক্বায়িম থাকতে আমাদেরকে এমনকি গোটা উম্মাহকে মদদ করুন।
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












