জীবনী মুবারক
হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬)
বিলাদত শরীফ: ৭১৮ হিজরী (১৩১৮ খ্রিস্টাব্দ) বিছাল শরীফ: ৭৯১ হিজরী (১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দ) বয়স মুবারক: ৭৩ বছর
, ২২ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
অন্যান্য বর্ণনা:
বর্ণিত আছে যে হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কোন দাস-দাসী ছিলো না। লোকেরা এ ব্যাপারে উনাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দেন যে, বন্দেগীর সঙ্গে খাজেগী ঠিক হয় না অর্থাৎ দাসত্বের সঙ্গে প্রভুত্ব ঠিক হয় না।
হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নফসকে দোষারোপ করতে থাকো; কেননা যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মেহেরবানীতে নিজের নফসকে মন্দ হিসাবে চিনে নেয় এবং এর চাতুরী ও ফেরেববাজী বুঝতে পারে, তার জন্য কাজ সহজ হয়ে যায়। এ রাস্তা অতিক্রমকারী এ ধরণের অনেক লোক অতীতে গুজরে গেছেন, যাঁরা অপরের গুণাহ নিজের মাথায় নিয়ে নিতেন এবং অপরের বোঝা নিজে উঠাতেন।
হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا آمِنُوْا بِا للهِ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ঈমান আনয়ন করো।
এই কথার প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, প্রতি মুহুর্তে এই নশ্বর স্বাভাবিক অস্তিত্বের সাথে “না সূচক” (নফী) আচরণ করতে হবে এবং সত্যিকারের অস্তিত্বের সঙ্গে “হ্যাঁ সূচক” (ইছবাত) আচরণ করতে হবে।
হযরত শায়েখ জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার জীবনে ৬০ সাল অতিবাহিত হওয়ার পর আমি সত্যিকারের ঈমান এনেছি।
হযরত বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নিজের অস্তিত্বের সঙ্গে “না সূচক” আচরণ আমার নিকট অতি নিকটবর্তী রাস্তা, কিন্তু খোদ-পছন্দ পরিত্যাগ এবং আমল করা ব্যতীত তা হাছিল হয় না। তিনি বলেন, এ পথে চলার জন্য অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক এক মহা প্রতিবন্ধক এবং পর্দা।
হযরত বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, হাক্বীক্বতের আলেমগণ (আহলে হাক্বীক্বত) ঈমানের পরিচিতি এভাবে দিয়ে থাকেন, ঈমান বলতে বুঝায় মনকে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে বন্দী করা এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত যাবতীয় বস্তু, তা যতই উপকারী বা অপকারী হোক না কেন, এবং এর প্রতি মন যতই আকৃষ্ট হোক না কেন, তা সমস্তই মন থেকে দূর করে দেয়া।
হযরত বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের তরীক্বা হচ্ছে পবিত্র ছোহবত মুবারক (সাহচর্য) এবং জনসমাগমে বসবাস। তবে শর্ত এই যে, একে অপরের পবিত্রতাকারী হবে এবং এরূপ হবে, যেমন কোন এক বুযূর্গ বলেছেন-
تَعَالْ نُؤْمِنْ سَاعَةً
অর্থ: “এসো, কিছুক্ষণের জন্য আমরা ঈমান আনবো। ”
ইহা এ কথার প্রতি ইঙ্গিত দেয় যে, যদি ত্বালিবদের একটি দল একে অপরের সঙ্গে মিলে কিছুক্ষণ বসে, তবে তাতে অনেক খায়ের-বরকত রয়েছে এবং আশা করা যায় যে, যদি এ কাজ সব সময় চালু রাখা হয়, তবে হাক্বীক্বী ঈমান পর্যন্ত পৌঁছা সম্ভব হবে।
হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের তরীক্বা হচ্ছে- عُرْوَةُ الْوُثْقَى (সুদৃঢ় রজ্জু) যার অর্থ হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র আঁচল মুবারক দৃঢ়ভাবে ধারণ করা এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রদর্শিত পথের অনুসরণ করা। এই তরীক্বায় অল্প আমল করে অনেক বেশী সফলতা হাছিল হয়, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণ করার জন্য ইহা এক অতি বড় বিষয়। যে ব্যক্তি এ তরীক্বা থেকে মুখ ফিরাবে তার দ্বীন (ধর্ম) বিপদসংকুল। (নাফাহাতুল উন্স)
হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহাসম্মানিত সুন্নতে নববী মুবারক উনার উপর চলা অনেক বড় আমল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুকরণ, এ দু’টি কাজ সংক্ষিপ্ত কিন্তু এর উপকার অনেক বেশী।
হযরত খাজা বাহাউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “লা ইলাহা” হচ্ছে, নিজের স্বভাবের “নফী” (না সূচক) অর্থাৎ নফসের বিরুদ্ধাচরণ এবং “ইল্লাল্লাহ” হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার “ইছবাত” (হাঁ সূচক) অর্থাৎ ফানা ফিল্লাহ বা মহান আল্লাহ পাক উনার মধ্যে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করে দেয়া এবং “মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)” উনার অর্থ হচ্ছে, নিজেকে فَاتَّبِعُوْنِىْ (আমাকে অনুসরণ করো)-এর মাক্বামের উপর নিয়ে আসা অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ মুবারক।
যিকিরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কালেমায়ে তাওহীদ উনার হাক্বীক্বত পর্যন্ত উপনীত হওয়া এবং হাক্বীক্বতে কালিমায়ে তাওহীদ হচ্ছে “মা ছেওয়া“ (গায়রুল্লাহ) অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্য কিছু সম্পূর্ণরূপে নফী করা অর্থাৎ অন্তর থেকে বিলোপ করা। (মিরাতুল আসরার) (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












