ইলমে তাছাউফ
হযরত মুর্শিদ বা শায়েখ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানের জন্য পিতা-মাতা উনাদের এবং স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাধা গ্রহণযোগ্য নয়
, ২৬ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০২ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৫ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ইলমে তাছাউফ
প্রকাশ থাকে যে, পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই পবিত্র ইলমে ফিক্বাহ উনার শিক্ষার সাথে সাথে ইছলাহ বা আত্মশুদ্ধি হাছিল করার লক্ষ্যে পবিত্র ইলমে তাছাওউফ হাছিল করাও ফরয। আর পবিত্র ইলমে তাছাওউফ যেহেতু শায়েখ বা মুর্শিদ ব্যতীত অর্জন করা যায় না তাই পিতা হোক, মাতা হোক, ছেলে হোক, মেয়ে হোক, স্বামী হোক, স্ত্রী হোক সকলের জন্যই একজন কামিলে মুকাম্মিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয। তবে যে কোনো কাজ করার পূর্বে সন্তানের জন্য পিতা-মাতা আর স্ত্রীর জন্য স্বামীর অনুমতি নেয়া বরকতের কারণ। কিন্তু সেজন্য যে বিষয়ে পিতা-মাতা বা স্বামীর জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে তাদের নিষেধাজ্ঞা পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاِنْ جَاهَدَاكَ عَلٰى اَنْ تُشْرِكَ بِـىْ مَا لَيْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِى الدُّنْيَا مَعْرُوْفًا ۖ
অর্থ : যদি তারা তোমাকে শরীক (শিরক) করার জন্য আদেশ করে, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তবে তাদেরকে অনুসরণ করো না এবং দুনিয়ায় তাদের সাথে উত্তমভাবে বসবাস কর। (সূরা লুক্বমান শরীফ : আয়াত শরীফ ১৫)
আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ النَّوَّاسِ بْنِ سَـمْعَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوْقٍ فِىْ مَعْصِيَةِ الْـخَالِقِ.
অর্থ : হযরত নাওওয়াস ইবনে সামআন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোনো মাখলুকের অনুসরণ করতে গিয়ে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী তথা হুকুমের খিলাফ করা যাবে না। (বুখারী শরীফ, শরহুস সুন্নাহ শরীফ)
অর্থাৎ কোনো সন্তানকে যদি পিতা-মাতা এবং কোনো স্ত্রীকে যদি স্বামী শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হতে নিষেধ করে তবে সন্তান ও স্ত্রীর জন্য সে নিষেধ মান্য করা পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে জায়িয হবে না। কারণ তাদের উক্ত নিষেধ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হুকুম মুবারক উনার খিলাফ।
উপরোক্ত আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা এটাই প্রতিভাত যে, পিতা-মাতা সন্তানকে এবং স্বামী স্ত্রীকে কোনো আদেশ করলে তা যদি পবিত্র শরীয়ত সম্মত হয়, তাহলে তা মানা যাবে অর্থাৎ মানা শর্ত। আর যদি পবিত্র শরীয়ত উনার খিলাফ হয়, তাহলে তা মানা যাবে না অর্থাৎ মানা শর্ত নয়। তবে সর্বদাই সৎভাবে তাদের সাথে জীবন-যাপন করতে হবে।
সুতরাং, কোনো পিতা-মাতা যদি সন্তানকে এবং কোনো স্বামী যদি স্ত্রীকে বাইয়াত হতে নিষেধ করে তবে তা পবিত্র শরীয়ত উনার নির্দেশ অনুযায়ী মানা যাবে না অর্থাৎ গ্রহনযোগ্য নয়। তবে বরকতের জন্য উনাদেরকে জানানো যেতে পারে।
আর যদি কারো পিতা-মাতা বা স্বামী পীর, বুযুর্গ, ওলীআল্লাহ অথবা হক্কানী আলিম হন, তাহলে উনাকে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে।
কারণ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَاسْأَلُوْا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ.
অর্থ : যদি তোমরা না জান, তবে আহলে যিকির বা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহওয়ালা উনাদেরকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও। (সূরা নহল শরীফ : আয়াত শরীফ ৪৩ ও সূরা আম্বিয়া শরীফ : আয়াত শরীফ ৭)
যার পিতা-মাতা বা স্বামীর ইলম-কালাম নেই, তাদের নিকট যদি শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করার অনুমতি চাওয়া হয়, আর তারা অনুমতি না দেন, তথাপিও তাকে শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হতে হবে। যেহেতু শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয।
অতএব, প্রত্যেক পিতা-মাতার কর্তব্য হলো- কোনো হক্কানী ওলী বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম গ্রহণ করে পবিত্র ইলমে তাছাওউফ শিক্ষা করা এবং তারা স্বীয় সন্তানদেরকে যেভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে থাকে, ঠিক সেভাবে কোনো হক্কানী ওলী বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার দরবার শরীফ নিয়ে পবিত্র ইলমে তাছাওউফ শিক্ষা করার জন্য পৌঁছিয়ে দেয়া।
বিশ্বখ্যাত ওলী ও ফার্সী কবি হযরত শায়েখ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “সন্তানের বুঝ পয়দা হওয়ার সাথে সাথেই কোনো হক্কানী ওলীআল্লাহ উনার ছোহবতে সোপর্দ করে দাও। হক্কানী ওলীআল্লাহ উনার ছোহবত মুবারক লাভের বদৌলতে সন্তান বড় ওলীআল্লাহ হতে না পারলেও অন্তত সে কখনো গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হবে না।
তিনি বলেন, তিনি বাল্যকাল থেকেই নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামায পড়তেন। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন যে, উনার আব্বা ছোটবেলা থেকেই উনাকে নিয়ে ওলীআল্লাহ উনাদের দরবার শরীফ-এ যাতায়াত করতেন। সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপ প্রত্যেক স্বামীর দায়িত্ব-কর্তব্য হলো নিজে হক্কানী ওলীআল্লাহ উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা এবং নিজ স্ত্রীকেও বাইয়াত করিয়ে দেয়া। কারণ স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্যেই ইছলাহ হাছিল করা ফরয।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (২)
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (১)
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩১)
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র দশ লতিফা উনাদের বিবরণ
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয (২)
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩১)
৩০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খিলাফত, খলীফা, পীর বা মুর্শিদ, গদীনশীন পীর বা মুর্শিদ পরিভাষার ব্যাখ্যা
২৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাওউফ উনাদের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
২৮ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয
২৬ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)