حكايات الابرار
হিকায়াতুল আবরার বা নছীহতমূলক ঘটনাসমূহ (১৩)
এডমিন, ২৬ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৯ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৯ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

হযরত আবুল খায়ের আকতা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “আকতা” লক্ববের হাক্বীক্বত
হযরত আবুল খায়ের আকতা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এক সময় লেবাননের পাহাড়ে থাকতেন। একদিন বাদশাহ এসে ওই পাহাড়ের সকল ফকীরকে একটি করে দীনার দিলেন। হযরত আবুল খায়ের আকতা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও দীনার গ্রহণ করলেন। কিন্তু তিনি সঙ্গে সঙ্গে উনার এক সঙ্গীর কোলে দীনারটি ফেলে দিলেন। অতঃপর তিনি উনার সঙ্গীসহ মাল-সামনা নিয়ে শহরের দিকে যাত্রা করলেন। ঘটনাক্রমে তাড়াহুড়ার মধ্যে তিনি বিনা ওযুতে পবিত্র কুরআন শরীফ উঠিয়ে নিজের সঙ্গে নিলেন। উনারা যখন এক বাজারে এলেন তখন দেখলেন যে, একদল লোক কিছু চোরের খোঁজ করছে। লোকজন সূফীদের দলকে দেখে, চোর ভেবে উনাদেরকেই গ্রেফতার করলো। তখন হযরত আবুল খায়ের আকতা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন যে, তিনিই সকলের সর্দার। কাজেই উনাকে রেখে যেন সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়। লোকজন তাই করলো। বিচারে তারা হযরত আবুল খায়ের আকতা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাত কেটে দিল। পরে তারা উনার সম্পর্কে জানতে পেরে খুবই অনুতপ্ত ও লজ্জিত হলো এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলো। তিনি এ অবস্থায় বাড়ী পৌঁছলে সকলে কান্নাকাটি শুরু করলো। তিনি বললেন, “খবরদার! চুপ থাক, এটা কান্নাকাটির সময় নয়। বরং মহান আল্লাহ পাক উনার শোকর আদায় করার সময় এবং আমাকে মুবারকবাদ দেয়ার সময়। কেননা, তারা আমার হাত না কাটলে আমার দিল কাটা যেত। কারন, এ হাত মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, বিনা ওযুতে পবিত্র কুরআন শরীফ স্পর্শ করেছে। আর বাদশার দান এ হাতই গ্রহণ করে সঙ্গীর কোলে ফেলে দিয়েছে।” এ জন্য উনাকে আকতা বলা হতো, যার অর্থ কাটা।
মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ভক্তি একজন ক্রীতদাসীর
হযরত আবু আব্দুল্লাহ মুহম্মদ ইবনুল হুসাইন তারুগান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার এক বাজারে গিয়েছিলেন। দেখলেন, এক বৃদ্ধ এক ক্রীতদাসীকে বিক্রী করবার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। ক্রীতদাসীর শরীরের রং ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, শরীর ভীষণ রোগা ও দূর্বল, কিন্তু চেহারা বেশ নূরানী। বৃদ্ধ লোকটি বলছে, সে বিশ দীনারের অধিক মূল্যে এই বাঁদীকে বিক্রী করবে এবং তার দোষ-ত্রুটির জন্য তাকে ফেরৎ দেয়া যাবেনা। তখন হযরত আবু আব্দুল্লাহ মুহম্মদ ইবনুল হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বৃদ্ধের কাছে গিয়ে বাঁদীর দোষ-ত্রুটি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। বৃদ্ধ বললো, “এ বাঁদী পাগলিনী, সব সময় চিন্তায় নিশ্চুপ হয়ে থাকে। সারা রাত্রি ইবাদত করে, দিনে রোযা রাখে, কিন্তু পানাহার করে না। সর্বদা একা একা থাকতে পছন্দ করে।” একথা শুনে আগ্রহ সহকারে তিনি বৃদ্ধের দাবীকৃত মূল্যে বাঁদীকে ক্রয় করে নিজের বাড়ীতে নিয়ে গেলেন। বাঁদী তখন বললো, “হে আমার ছোট প্রভূ! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার প্রতি রহম করুন। আপনি কোথাকার বাসিন্দা?” তিনি বললেন, “আমি ইরাকের বাসিন্দা”, সে জিজ্ঞেস করলো, “কোন ইরাক? বসরার ইরাক না কুফার ইরাক?” তিনি বললেন, “বসরার ইরাক।” তখন সে বললো, “আপনি সম্ভবতঃ বাগদাদের মদীনাতুস সালামে থাকেন?” তিনি স্বীকৃতিসূচক হ্যাঁ বললেন। বাঁদী তখন আনন্দিত হয়ে বললো, “বাহ! এ শহরটি তো যাহেদ এবং আবেদগণের শহর।” একথা শুনে হযরত ইবনুল হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং মনে মনে ভাবলেন বাঁদী তো অন্দরমহলের বাসিন্দা, সে কি করে যাহেদ এবং আবেদগণের খবর রাখে। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি বুজুর্গানে দ্বীনের মধ্যে কাকে কাকে চেন?” সে তখন হযরত মালেক ইবনে দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মারূফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুহম্মদ ইবনুল হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের এবং আরও কয়েকজনের নাম বললো। আরও কিছু আলাপের পর হযরত মুহম্মদ ইবনুল হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “হে বাঁদী! আমিই মুহম্মদ ইবনুল হুসাইন।” বাঁদী তখন বললো, “আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজু করেছিলাম, যেন মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার সাথে আমার সাক্ষাৎ করিয়ে দেন। আপনার যেই মধুর আওয়াজ দ্বারা মুরীদগণের দিল যিন্দা করতেন এবং শ্রোতাদের চোখে পানি ঝরাতেন, সেই মধুর আওয়াজ কই? আপনার খোদার কসম, আপনি আমাকে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে শুনান।” তিনি তখন শুধুমাত্র “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” পড়লেন। এ শুনেই বাঁদী চিৎকার করে বেহুঁশ হয়ে পড়লো। চোখে মুখে পানি ছিটা দেবার পর কিছুক্ষণের মধ্যে হুঁশ ফিরে এলে বাঁদী বললো, “হে আবু আব্দুল্লাহ! এ তো উনার নাম মাত্র। এ শুনেই আমি অজ্ঞান হলাম। আর যখন উনাকে আমি চিনতে পারব এবং বেহেশতে দেখতে পাব তখন আমার কি অবস্থা হবে?” এ বলে সে আরও কিছু তিলাওয়াতের জন্য অনুরোধ করলো। অতঃপর হযরত মুহম্মদ ইবনুল হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পাঠ করলেন, যার অর্থ- “যারা গুণাহের কাজ করছে, তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে ঈমানদার ও নেককারদের সমান করবো? তাদের জীবন ও মৃত্যু একইরূপ? (কখনোই না)। কাফেররা যা বলে, তা খুবই মন্দ।” বাঁদী বললো, “হে আবু আব্দুল্লাহ! আমি কোন মূর্তিকেও পূঁজা করিনি।