১০০ টি চমৎকার ঘটনা
, ১১ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৯ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১২ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
মু’মিন বান্দাদের কবরের জীবন
একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইন্তেকাল করলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জানাযা পড়ালেন। তারপর একদল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে মৃতদেহ দাফন করার জন্য কবরস্থানে আসলেন।
দুই জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা কবর খুঁড়তে শুরু করলেন। সবাই চুপচাপ মৃতদেহকে ঘিরে বসে আছেন। কবর খনন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গভীর মনোযোগ দিয়ে কবর খোঁড়া দেখছিলেন। একটু পরে সবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনারা কি জানেন, মানুষ মারা যাওয়ার পর, তার আত্মার কি হয়?’ সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আমাদেরকে বলুন।’
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রথমে কবরের দিকে তাকালেন, তারপর আকাশের দিকে তাকালেন। তারপর ইরশাদ মুবারক করলেন, “যখন মানুষ একেবারে মৃত্যুশয্যায় শায়িত থাকে, তখন সে মৃত্যুর ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু যে হাক্বীক্বী মু’মিন, তাকে মৃত্যুর ফেরেশতা আলাইহিস সালাম হাসি মুখে সালাম দেন, অভয় দেন এবং তার মাথার পাশে এসে বসেন। তারপর মৃতপ্রায় মানুষটির দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘হে পবিত্র আত্মা! আপনি আপনার পালনকর্তা উনার ক্ষমা ও মুহাব্বত গ্রহণ করুন এবং এই দেহ থেকে বের হয়ে আসুন।’ মু’মিনের আত্মা যখন বের হয়ে আসে তখন সে কোনো ধরণের ব্যথা-বেদনা অনুভব করে না।”
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিষয়টি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বললেন, “মনে করুন একটা পানির জগ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর, তা থেকে এক ফোঁটা পানি যেমন নিঃশব্দে নিচে গড়িয়ে নেমে আসে, ঠিক তেমনি নীরবে ও বিনা কষ্টে আত্মাটি তার দেহ থেকে বের হয়ে আসে। সেই সময় আরো দুই জন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম বেহেশত থেকে সুগন্ধি মাখানো একটা নরম সুতোর সাদা চাদর নিয়ে আসেন এবং আত্মাটিকে সেই চাদরে আবৃত করে আকাশের দিকে নিয়ে যান। উনারা যখন আকাশে পৌঁছেন তখন অন্যান্য ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ সেই আত্মাটিকে দেখার জন্য এগিয়ে আসেন। কাছে এসে সবাই বলেন, ‘সুবহানাল্লাহ!
কত সুন্দর আত্মা! কি সুন্দর তার ঘ্রাণ!’ তারপর সবাই জানতে চান, ‘এই আত্মাটি কার?’ উত্তরে আত্মা বহনকারী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ বলেন, ‘তিনি হলেন, ফুলান ইবনে ফুলান অর্থাৎ অমুকের সন্তান অমুক।’ তখন অন্যান্য ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ আত্মাটিকে সালাম দেন। তারপর আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘তিনি কি আমল করেছেন? উনার আত্মায় এতো সুঘ্রাণ কেন?’ আত্মা বহনকারী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ তখন বলেন, ‘আমরা শুনেছি মানুষজন নিচে বলাবলি করছে, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ভালো বান্দা ছিলেন, অনেক দয়ালু ছিলেন, মানুষের অনেক উপকার করেছেন।’
এতটুকু বলার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটু থামলেন। তারপর সবার দিকে দৃষ্টি মুবারক দিয়ে, কণ্ঠ মুবারক একটু বাড়িয়ে বললেন, ‘এই কারণেই বলছি, সাবধান! আপনারা কিন্তু মানুষের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করবেন না। আপনারা ইন্তেকাল করার পর মানুষ আপনাদের সম্পর্কে যা যা বলবে, আত্মা বহনকারী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণও আকাশে গিয়ে ঠিক একই কথা অন্যদেরকে বলবেন।’
তারপর তিনি আবার একটু চুপ করলেন; কবরটার দিকে দৃষ্টি মুবারক দিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন, “এই সময় মানুষ যখন পৃথিবীতে মৃতদেহকে কবর দেয়ার জন্য গোসল দিয়ে প্রস্তুত করবে, তখন মহান আল্লাহ তা’য়ালা আত্মা বহনকারী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণকে বলবেন, ‘আপনারা যান, এখন আবার এই আত্মাকে তার শরীরে রেখে আসুন।’ তারপর মৃতদেহকে কবরে রেখে যাওয়ার পর দুই জন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম আসবেন। উনাদের নাম মুনকার ও নাকির আলাইহিমাস সালাম। উনারা মৃত ব্যক্তিকে তার সৃষ্টিকর্তা, তার দ্বীন ও তার নবী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। তারপর চলে যাবেন।
উনারা চলে যাওয়ার পর, আত্মাটি আবার কবরে একাকী হয়ে যাবে। সে এক ধরণের অজানা আশংকায় অপেক্ষা করবে। এমন সময় সে দেখবে, খুব সুন্দর একজন তার কবরে তার সাথে দেখা করতে এসেছে। তাকে দেখার পর আত্মাটি ভীষণ মুগ্ধ হবে। এতো মায়াবী ও সুন্দর চেহারা সে জীবনে কোনদিন দেখেনি। আত্মাটি তাকে জিজ্ঞেস করবে, ‘আপনি কে?’ সেই সুন্দর ব্যক্তি বলবে, ‘আমি আপনার জন্য অনেক বড় সুসংবাদ নিয়ে এসেছি। আপনি দুনিয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আপনার জন্য মহান আল্লাহ তা’য়ালা জান্নাতের ব্যবস্থা করেছেন। আপনি কি সেটা একটু দেখতে চান?’ আত্মাটি ভীষণ খুশি হয়ে বলবে, ‘অবশ্যই আমি দেখতে চাই, আমাকে একটু জান্নাত দেখান।’ সুন্দর ব্যক্তি বলবে, ‘আপনার ডান দিকে তাকান।’ আত্মাটি ডানে তাকিয়ে দেখবে কবরের দেয়ালটি সেখানে আর নেই। সেই দেয়ালের দরজা দিয়ে অনেক দূরে সুন্দর বেহেশত দেখা যাচ্ছে। বেহেশতের এই রূপ দেখে আত্মাটি মুগ্ধ হবে ও প্রশান্তি লাভ করবে এবং সেখানে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে সুন্দর ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবে, ‘আমি সেখানে কখন যাবো? কিভাবে যাবো?’ সুন্দর ব্যক্তি মৃদু হেসে বলবে, ‘যখন সময় হবে, তখনই আপনি সেখানে যাবেন ও সেখানেই থাকবেন। আপাততঃ কিয়ামত পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। ভয় পাবেন না। আমি আপনার সাথেই আছি। আপনাকে আমি শেষ পর্যন্ত সঙ্গ দিবো।’ আত্মাটি তখন তাকে আবারো জিজ্ঞেস করবে, ‘কিন্তু আপনি কে?’ তখন সুন্দর ব্যক্তি বলবে, ‘আমি আপনার এতদিনের আমল। পৃথিবীতে আপনার সব ভালো কাজের, আপনার সব পুণ্যের রূপ আমি। আজ আপনি আমাকে একজন সঙ্গী রূপে দেখছেন। মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে পাঠিয়েছেন আপনাকে সঙ্গ দেয়ার জন্যই।’ এই কথা বলে, সে আত্মাটির উপর যতœ করে হাত বুলিয়ে দিবে এবং বলবে, ‘হে পবিত্র আত্মা! এখন আপনি শান্তিতে ঘুমান। নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নিন।’ তারপর আত্মাটি এক নযরে বেহেশতের দিকে তাকিয়ে থাকবে এবং একসময় এই তাকানো অবস্থায় গভীর প্রশান্তিতে ঘুমিয়ে পড়বে।”
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এতটুকু বলে থামলেন। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নিজেদের ভেজা চোখ মুছলেন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (২)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৯)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৩)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












