জীবনী মুবারক
১৩ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, মুজাহিদে মিল্লাত, শহীদে বালাকোট, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৪)
বিলাদত শরীফ: ১২০১ হিজরী বিছাল শরীফ: ১২৪৬ হিজরী বয়স মুবারক: ৪৫ বছর
, ২৯ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৫ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৪ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ০৯ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বালাকোটের জিহাদ ও হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শাহাদাত মুবারক:
স্মরণ থাকা জরুরী যে, সিদুঁর যুদ্ধে এই মুনাফিক সর্দারদের মধ্যে ইয়ার মুহম্মদ খানের প্ররোচনাতেই হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খাদ্যে বিষ মিশ্রিত করা হয়েছিলো। তাদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে সেখানে শত শত মুজাহিদদের অকাতরে প্রাণ দিতে হয়েছিলো। তারও একমাত্র কারণ ছিলো এই পাঠান মুনাফিক সর্দারগণ। আর ধোঁকাবাজ সুলতান নজফ খানের কারসাজিতেই শের সিংহ তার বাহিনীসহ বালাকোটে এসে পৌঁছে। নতুবা কোন অবস্থাতেই বালাকোটে মুজাহিদদের ঘাটি সম্পর্কে তার জানা সম্ভব ছিলো না।
বালাকোটের পশ্চিমে মাটিকোট টিলার পাশাপাশি শের সিংহ তার বাহিনী নিয়ে যুদ্ধের ছাউনি তৈরী করলো। লাহোরের শিখ সর্দার রনজিৎ সিং এর তরফ থেকে কড়া নির্দেশ ছিলো যাতে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুজাহিদ বাহিনীর সাথে শের সিং এর সৈন্যরা মরণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যায়। ফলে বিশেষভাবে বালাকোটে শিখ সৈন্যদের মাশোহারা বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। একদিকে ইংরেজ অপরদিকে এই সীমান্তবর্তী মুনাফিক পাঠান সর্দার যারা প্রত্যেকেই ছিলো আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর চরিত্রে চরিত্র দুষ্ট। তারাও শিখদের সাথে একত্র হয়ে মুজাহিদের বিপক্ষ অবলম্বন করে। শিখদের মাটিকোট টিলায় আগমনের সংবাদ শুনে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মুজাহিদ বাহিনীদের বিভিন্ন সারিতে বিভক্ত করেন এবং প্রত্যেক দলের সাথে একজন আমীর নিয়োগ করে উনাদের নির্দিষ্ট জায়গা অনুযায়ী মোতায়েন করে রাখেন।
হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তরফ থেকে ফরমান ছিলো শিখ সৈন্যরা যতক্ষণ পর্যন্ত মাটিকোট টিলা অতিক্রম করে সমতল ভূমিতে এগিয়ে না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত মুজাহিদদের তরফ থেকে কোন প্রকার যেন গোলাগুলি ছোড়া না হয়। অবশেষে শিখদের তরফ থেকেই প্রথম আক্রমণ করা হয়। কিন্তু সেটা ছিলো অতর্কিত এবং মুনাফিক পাঠান মুসলমান সর্দারদের সহযোগিতায় অত্যন্ত কূট চালে এ পরিকল্পনা করা হয়।
দিনের প্রথম পর্বে বা ভাগে মুজাহিদগণ প্রত্যেকেই উনাদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত ছিলেন। যেমন, এ সময় কেউ বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, কেউ ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন, কেউ কেউ খাদ্য পাকাচ্ছিলেন, কেউবা জরুরতবশতঃ নিজের নির্দিষ্ট স্থান ত্যাগ করে অনত্র গিয়েছিলেন- অর্থাৎ শিখদের অতর্কিত আক্রমণের সময় মুজাহিদগণ সম্পূর্ণভাবে অপ্রস্তুত ছিলেন। উনাদের মধ্যে যারা প্রহরী সৈন্য হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন ছিলেন উনারাও হঠাৎ করে এই ধরণের হামলার কথা কল্পনাও করতে পারেননি। ফলে পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই তাড়াহুড়া করে মুসলিম মুজাহিদগণ একত্রিত হয়ে পাল্টা আক্রমণ করার পূর্বেই শিখ সৈন্যরা শাহীন, রাইফেল, মীনজানিকের সাহায্যে উনাদের উপর গোলাবারুদ নিক্ষেপ করতে থাকে। কার্তুজের ধোঁয়ায় মাটিকোট টিলা, বালাকোটের বস্তিগুলো এবং আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। এ সময়ে মুজাহিদগণ জনে জনে শহীদ হতে লাগলেন। উনারা একে অপরের সাহায্য-সহযোগিতা করারও সময়-সুযোগ পেলেন না।
অবশেষে খলীফাতুল্লাহ, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রাণপণে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বহু শিখ সৈন্যদের জাহান্নামে পাঠিয়ে নিজেও শাহাদাতের শারাবান তাহুরা পান করলেন। এ যুদ্ধে শত শত মুজাহিদ বাহিনী শহীদ হয়েছেন। এটা ছিলো ১২৪৬ হিজরীর ২৪শে যিলক্বদ মোতাবেক ইংরেজী ১৮৩১ সালের ৬ই মে ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফের ঘটনা।
মূলতঃ বালাকোটের প্রান্তরে মুসলিম মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যদি ইংরেজ ও মুনাফিক পাঠান সর্দারগণ সীমান্তে সহযোগিতা না করতো তবে মুজাহিদদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শিখ সৈন্যরা কোন অবস্থাতেই মুসলমানদের সাথে মোকাবিলা করার সাহস পেতো না। কারণ তারা ভালো করেই জানতো যে, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অল্প সংখ্যক জানবাজ মুজাহিদদের সাথে তাদের বিশাল ‘খালসা বাহিনী’ পেরে উঠবে না। মুজাহিদগণ মহান আল্লাহ পাক উনার রাহের পথিক। মৃত্যু উনাদের নিকট শীতল ঠান্ডা পানির চেয়েও অধিক প্রিয়। রাত্রির অন্ধকারে উনারা সারারাত মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে রুকু-সিজদায় পড়ে থাকেন। অথচ দিনের বেলায় যুদ্ধের ময়দানে উনাদের চেহারা-ছূরত অন্যরূপ ধারণ করে। যুদ্ধের ময়দানে উনারা একেকজন মুজাহিদ সিংহের চেয়েও বেশী গর্জনশীল ও অধিক শক্তিশালী। তাই তারা মুজাহিদদের দমন করার জন্য ইংরেজ সরকারের সাহায্য নেয় ও সীমান্তবর্তী পাঠান মুনাফিক সর্দারদের বিপুল পরিমাণ উৎকোচ বা ঘুষ দিয়ে তাদেরকে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিলো। নাঊযুবিল্লাহ! (সমাপ্ত)
-মুহাদ্দিস আহমদ হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












