‘গরুর গোস্তে রোগ আছে’ এই সংক্রান্ত বাতিল হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব
, ০৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

(ধারাবাহিক পর্ব- ০৩)
হযরত ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
سيف بن مسكين السلمي البصري يروي عن سعيد بن أبي عروبة قال الدارقطني ليس بالقوي وقال ابن حبان يأتي بالمقلوبات والأشياء الموضوعات لا يحل الاحتجاج به لمخالفته الأثبات
অর্থ: সাঈফ ইবন মিসকীন আস সুলামী আল বছরী। তিনি সাঈদ ইবনে আবী আরূবাহ উনার থেকে বর্ণনা করতেন। হযরত দারা কুত্বনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি শক্তিশালী নয়। হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি হাদীছ শরীফ পরিবর্তন করে বর্ণনা করতেন এবং বানোয়াট জাল হাদীছ বর্ণনা করতেন। প্রমাণের বিপরীতে উনার বর্ণনাকে দলীল হিসেবে পেশ করা জায়িয নেই। (আদ দুআফা ওয়াল মাতরূকীন ২/৩৫)
হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
سيف بْن مِسْكين السّلمِيّ شيخ من أهل الْبَصْرَة يروي عَن سَعِيد بْن أَبِي عرُوبَة وَمعمر بْن يَزِيد عَن قَتَادَة يَأْتِي بالمقلوبات والأشياء الموضعات لَا يحل الِاحْتِجَاج بِهِ لمُخَالفَته الْأَثْبَات فِي الرِّوَايَات عَلَى قلتهَا
অর্থ: সাঈফ ইবনে মিসকীন আস সুলামী। যিনি ছিলেন বছরার শায়েখ। তিনি সাঈদ ইবনে আবী আরূবাহ এবং মা’মার ইবনে ইয়াযীদ উনাদের মাধ্যমে হযরত কাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করতেন। তিনি হাদীছ শরীফ পরিবর্তন করে বর্ণনা করতেন এবং বানোয়াট জাল হাদীছ বর্ণনা করতেন। কাজেই প্রমাণিত বিষয়ের বৈপরীত্যের কারণে উনার বর্ণনা দিয়ে দলিল পেশ করা জায়িয নেই। (আল মাজরূহীন ১/৩৪৭)
হযরত আবুল ফযল মুহম্মদ ইবনে ত্বাহির শায়বানী যিনি ইবনে ক্বায়সারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন-
وَسَيْفٌ هَذَا كَانَ يَرْوِي الْمَوْضُوعَاتِ عَلَى الثِّقَاتِ لا يَحِلُّ الاحْتِجَاجُ بِهِ
অর্থ: সাঈফ ইবনে মিসকীন এমন একজন রাবী যিনি নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের বিপরীতে বানোয়াট জাল হাদীছ বর্ণনা করতেন। উনার বর্ণনা দিয়ে দলীল পেশ করা জায়িয নেই। (তাযকিরাতুল হুফফায ৭৫ পৃষ্ঠা)
হযরত ইমাম সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত হাদীছ শরীফ উনার সনদ সম্পর্কে বলেন-
قلت بل سنده ضعيف والمسعودي اختلط والحديث منقطع
অর্থ: আমি বলি, বরং এর সনদ দুর্বল। আর মাসঊদী (এই সনদের আরেকজন রাবী) তিনি বর্ণনার ক্ষেত্রে তালগোল পাকিয়ে ফেলতেন। এই হাদীছটা মুনক্বাতী। (আল আজউইবাতুল মারদ্বিয়াহ ১/২৩)
হযরত যারকাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই হাদীছ পর্যালোচনা করতে যেয়ে বলেন-
قلت بل هو منقطع وفي صحته نظر فإن في الصحيح ان النبي صلى الله عليه وسلم ضحى عن نسائه بالبقر وهو لا يتقرب بالداء
অর্থ: আমি বলি, বরং এটা মুনক্বাতী হাদীছ। ছহীহ হওয়ার বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেননা পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেছেন। কাজেই তিনি এমন কিছুর মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য মুবারক হাছিল করেননি, যার মধ্যে রোগ রয়েছে। অর্থাৎ গরুর গোশতে রোগ নেই এটাই প্রমাণিত। (আত তাযকিরাহ ফিল আহাদীছিল মুশতাহিরাহ ১৪৮ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টই প্রমাণিত হলো, এই সনদের দুইজন রাবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, একজন শক্তিশালী নন, হাদীছ শরীফ পরিবর্তন করে বর্ণনা করতেন, জাল হাদীছ বর্ণনা করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে, তিনি একজন ভিত্তিহীন রাবী। উনার বর্ণিত হাদীছ দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। আরেকজন হাদীছ শরীফ বর্ণনার ক্ষেত্রে তালগোল পাকিয়ে ফেলতেন। উক্ত হাদীছের বিপরীতে ছহীহ ও মুত্তাছিল হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। যার কারণে উক্ত বর্ণনা পরিত্যজ্য এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তৃতীয় বর্ণনা:
এটা বর্ণনা করেছেন হযরত ইবনে আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি-
حَدَّثَنَا عَبد اللَّهِ بْنُ مُحَمد بْنِ يَاسِينَ، حَدَّثَنا مُحَمد بْنُ مُعَاوِيَةَ الأنماطي، حَدَّثَنا مُحَمد بْنُ زِيَادٍ الطَّحَانُ عَنْ مَيْمُونٍ، عنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله تعالى عنه قَال قَال رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمْنُ الْبَقَرِ وَأَلْبَانُهَا شفاء ولحومها داء.
অর্থ: (হযরত ইবনে আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইয়াসীন, তিনি বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন, মুহম্মদ ইবনে মুআবিয়াহ আনমাত্বী, তিনি বলেন, আমাদের নিকট মুহম্মদ ইবনে যিয়াদ আত্ব তহহান তিনি মায়মূন থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, গরুর ঘি ও দুধে রয়েছে শেফা আর গোশতে রোগ রয়েছে। (আল কামিল ফী দুআফায়ির রিজাল ৭/৩০০) (চলবে)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খালি চোখে চাঁদ দেখে মাস শুরু করা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার নির্দেশ মুবারক
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পূর্ব গণনাকৃত বর্ষপঞ্জী দিয়ে মাস শুরু করা শরীয়তসম্মত নয়
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে গরুর গোস্ত শি‘আরুল ইসলাম (৬)
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশি বেশি মূর্তি তৈরী করতে বলেছে এবং বেশি বেশি পূঁজা করতে বলেছে তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (১)
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছহিবে নিসাব প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য পবিত্র কুরবানী দেয়া ওয়াজিব (১)
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কাফিরদের রচিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মুসলমানদের জন্য নয় (২)
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মীলাদ শরীফ বিষয়ে প্রথম দিকে যারা কিতাব রচনা করেছেন উনাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হাফিয হযরত আবুল খত্ত্বাব ইবনে দাহিয়্যাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি ছিলেন পবিত্র হাদীছ শাস্ত্রের অন্যতম গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)