ই’জায শরীফ
‘মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, এর চেয়ে মিষ্ট ও সুস্বাদু পানীয় আমি জীবনে কখনও পান করিনি। ’
, ০৫ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০১ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ৩০ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ১৫ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
শাইখুশ শুয়ূখ হযরত শাকীক বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পবিত্র হজ্জের ছফর কালে আমি কাদেসিয়া এলাকায় গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে আমি একজন সুশ্রী ও দীর্ঘদেহী যুবককে দেখলাম। উনার পরনে ছিল শাল। কাঁধে পাগড়ির প্রান্ত এবং পদযুগলে সেন্ডেল মুবারক। তিনি অনেক ভিড়ের মধ্য থেকে বের হয়ে একাকিই এক জায়গায় বসে গেলেন। আমি ভাবলাম, এই যুবক ছূফী শ্রেণীভুক্ত মনে হয়। সম্ভবতঃ তিনি এ ছফরে মুসলমানদের উপর বোঝা হয়ে যেতে চান। কাজেই উনাকে এ থেকে বিরত রাখার জন্যে বলা উচিত।
আমি উনার কাছে যেতেই তিনি বললেন, হে শাকীক! ধারণা করা থেকে বেঁচে থাক। কেননা, অধিকাংশ ধারণা সরাসরি পাপ। এ কথা বলে তিনি চলে গেলেন।
আমি মনে মনে বললাম, আশ্চর্যজনক কথা, তিনি আমার নাম মুবারক এবং মনের কথা বলে দিয়েছেন! নিঃসন্দেহে তিনি কোন কামিল ব্যক্তি হবেন। আমার উচিত উনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা।
আমি যতই দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করলাম কিন্তু উনাকে ধরতে পারলাম না। দ্বিতীয় মনযিলে পৌঁছে আমি উনাকে নামাযরত অবস্থায় দেখলাম। উনার পবিত্র শরীর মুবারকে ছিল কম্পন এবং চোখ মুবারকে অশ্রুর ধারা। আমি পুনরায় উনার কাছে ক্ষমা চাওয়ার ইচ্ছা করলাম। কয়েক মিনিট বিরতির পর আমি উনার দিকে তাকালাম তখন তিনি পাঠ করছিলেন এ পবিত্র আয়াত শরীফ-
مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللهُ غَفُورًا رَحِيمًا
“যারা তওবা করে, ঈমান দুরস্ত করে, সৎকর্ম করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের গুনাহসমূহ নেকীতে পবিবর্তন করে দেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যন্ত ক্ষমাকারী, পরম দয়ালু। ” (পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭০)
এ কথা বলার পর তিনি আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। আমি মনে করলাম, এই যুবক আবদালগণের একজন হবেন, যিনি দ্বিতীয়বার আমার মনের কথা বলে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
অন্য এক স্থানে পৌঁছে আমি উনাকে এক কূপের পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখলাম। উনার হাত মুবারকে ছিল একটি চামড়ার বালতি, যা দ্বারা তিনি কূপ থেকে পানি তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু বালতিটি হাত থেকে খসে কূপে পড়ে গেল। তিনি আকাশের দিকে মুখ করে অস্পষ্ট ভাষায় একটি দোয়া পাঠ করছিলেন।
মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি পানিকে উপরে উঠে আসতে দেখলাম। তিনি হাত বাড়িয়ে পানির উপর থেকে বালতি তুলে নিলেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর অজু করতঃ চার রাকাআত নামায আদায় করলেন। এরপর তিনি বালু নেয়ার জন্য গেলেন। তিনি সামান্য বালুকণা হাতে নিয়ে বালতিতে ফেলে দিলেন এবং পানির সাথে মিশিয়ে পান করে নিলেন। এটা দেখে আমি উনার কাছে গিয়ে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বললাম। আমি আরো বললাম, আমাকেও আহার করান। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে অনেক নিয়ামত দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
তিনি বললেন, হে শাকীক! মহান আল্লাহ পাক উনার যাহির-বাতিন বা বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন নিয়ামতসমূহ আমি সর্বদাই পাই। তাই আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্পর্কে হুসনে যন বা সুধারণা রাখবেন। এরপর তিনি আমাকে সেই বালতি দিলেন। এতে ছাতু ও চিনি ছিল। আমি তা পান করলাম। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, এর চেয়ে মিষ্ট ও সুস্বাদু পানীয় আমি জীবনে কখনও পান করিনি। সুবহানাল্লাহ! আমি তৃপ্ত ও সিক্ত হয়ে গেলাম। এমনকি, কয়েকদিন পর্যন্ত আমার পানাহারের কোন প্রয়োজন ছিল না। এরপর আমি উনাকে আর দেখলাম না।
পবিত্র মক্কা শরীফ পৌঁছার পর একদিন আমি উনাকে তাহাজ্জুদ নামাযে রত অবস্থায় দেখলাম। তিনি অত্যধিক বিনয়-নম্রতা সহকারে নামায আদায় করছিলেন। তখন উনার চোখ দিয়ে অশ্রু মুবারক ঝরছিল। সারা রাত এ কর্মধারা অব্যাহত রইল। ভোর হলে ফজরের নামায শেষ করে তিনি তাওয়াফে লেগে গেলেন। তাওয়াফ শেষে বাইরে চলে গেলেন। আমিও উনার পিছনে রওয়ানা হলাম। আমি দেখলাম, এখন উনার কাছে একাধিক গোলাম ও খাদিম। লোকজন উনাকে ঘিরে রেখেছিলেন এবং বলছিলেন, আসসালামু আলাইকা ইয়া ইবনা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আমি জিজ্ঞাসা করে জানলাম যে, তিনি হচ্ছেন আওলাদে রসূল হযরত আবুল হাসান মূসা ইবনে জা’ফর ছাদিক্ব ইবনে মুহম্মদ ইবনে আলী আওসাত ইবনে হুসাইন ইবনে ইমামুল আউওয়াল আলী আলাইহিমুস সালাম।
আমি স্বতঃস্ফুর্তভাবে বলে উঠলাম, সম্মানিত ‘সাইয়্যিদ’ উনার কাছ থেকে এ ধরনের অত্যাশ্চর্য বিষয়াদি প্রকাশ পাওয়া কোন বিস্ময়কর ব্যাপার নয়। উনাদের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার অজস্র কুদরত মুবারক যাহির করেন। আর হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অসংখ্য মু’জিযা শরীফ যাহির বা প্রকাশ হয়। সুবহানাল্লাহ! (শাওয়াহিদুন নুবুওয়াত-২৫৭, মিরয়াতুল আসরার-২৫১)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












