আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র কারামত মুবারক
, ২২ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৭ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২১ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ইয়া সারিয়া! আল-জাবাল। ইয়া সারিয়া! আল জাবাল। পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার জুমুয়ার খুতবা মুবারক পাঠ করা অবস্থায় আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হঠাৎ করে এরূপ অপ্রাসঙ্গিক বাক্য মুবারক উচ্চারণ করায় উপস্থিত সবাই অবাক বিস্মিত। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যথারীতি উনার পবিত্র খুতবা মুবারক পাঠ করতে থাকেন।
পবিত্র খুতবা উনার মাঝে হঠাৎ আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার অপ্রাসঙ্গিক বাক্য উচ্চারণ কেন, কারো সাহস হচ্ছে না উনাকে জিজ্ঞাসা করতে। পবিত্র খুতবা ও নামায শেষে মসজিদে উপস্থিত অনেকের মধ্যে বিষয়টি গুঞ্জন করতে থাকে। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার। তিনি অসংকোচে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আজ আপনি পবিত্র খুতবা উনার মধ্যে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ইয়া সারিয়া! আল জাবাল (দুই কিংবা তিনবার) উচ্চারণ করলেন- কেন? জবাবে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একটি সৈন্য বাহিনীর কথা উল্লেখ করলেন। যারা নাহাওয়ান্দে পবিত্র জিহাদে লিপ্ত, এ বাহিনীর সেনাপতি হযরত সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি বলেন, আমি দেখেছি সারিয়া একটি পর্বতের পাশে লড়ছেন। অথচ তিনি জানেন না যে, সম্মুখ এবং পেছন থেকে অগ্রসর হয়ে শত্রু বাহিনী তাকে ঘিরে ফেলার উপক্রম করেছে। এ শোচনীয় অবস্থা দেখে আমি বিচলিত হয়ে পড়ি, আমি স্থির থাকতে না পেরে আওয়াজ দিতে থাকি হে সারিয়া পর্বতের সাথে মিলে যাও। হে সারিয়া পর্বতের সাথে মিলে যাও।
নাহাওয়ান্দের রণক্ষেত্র থেকে বেশ কিছুদিন পর হযরত কাসেদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে আগমন করেন এবং পবিত্র জিহাদ উনার বিবরণ দিতে থাকেন এবং পূর্ণ ঘটনা ব্যক্ত করেন। হযরত কাসেদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জানান, আমরা যখন পবিত্র জিহাদে লিপ্ত তখন হঠাৎ একটি অদৃশ্য কণ্ঠ শোনা গেল, ইয়া সারিয়া! আল জাবাল। আওয়াজটি শ্রবণ করা মাত্র আমরা পর্বতের সাথে মিলে যাই এবং আমাদের বিজয় সূচিত হয়। সুবহানাল্লাহ! (তারিখুল খোলাফা- ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ)
(২)
একদা দুর্ভিক্ষের সময় সর্বত্র খরা কবলিত মানুষের মধ্যে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। কোথাও বৃষ্টির নামগন্ধ নেই। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র খিলাফতকাল। তিনি দুর্ভিক্ষ ও খরা কবলিত দেশের এ চরম সঙ্কট অবস্থা দেখে পানির জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে দোয়া করলেন এবং বৃষ্টি হলো, মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হতে লাগলো।
কিছুদিন পর কতিপয় আরব বেদুইন লোক বাহির থেকে আসে এবং তারা আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে জানায় যে, তারা অমুক দিন অমুক জঙ্গলে ছিলো। হঠাৎ আকাশে মেঘ দেখতে পায় এবং মেঘ হতে একটি আওয়াজ ভেসে আসে এবং আমরা শুনতে পাই ‘ইন্নাকাল গাওসু আবা হাফছিন’ অর্থাৎ হে আবু হাফছ! (সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কুনিয়াত ডাকনাম মুবারক) আপনার জন্য বৃষ্টি নামছে। সুবহানাল্লাহ!
(৩)
একদা একটি পর্বতের গর্ত হতে অগ্নি নির্গত হতো এবং এ আগুন যতটুকু বিস্তার লাভ করতো সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিতো। বহুকাল এ আগুনের ধ্বংসলীলা চলে আসছিলো এবং আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার আমলেও তা অব্যাহত ছিলো। তিনি খবর পেয়ে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবু মুসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অথবা হযরত তামীম দারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে নির্দেশ মুবারক দিলেন সেখানে গিয়ে আগুনকে তার গর্তের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে আসতে। নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী উনারা সেখানে গমন করেন এবং আগুনকে উনাদের চাদর দ্বারা হাকাতে শুরু করেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন গর্তের অভ্যন্তরে চলে যায় এবং আর কখনো প্রকাশ পায়নি। এটি ছিল আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নির্দেশ মুবারক উনার প্রভাব।
(৪)
একদা এক আজমী অনারব ব্যক্তি পবিত্র মদীনা শরীফ আসে এবং আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খোঁজ-খবর নিতে থাকে। কেউ বলে দেয় যে, তিনি হয়তো কোথাও শুয়ে আছেন। আগত লোকটি কিছুদূর গিয়ে দেখতে পায় আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এক গাছের ছায়ায় তলোয়ারটি মস্তকের নিচে দিয়ে মাটিতে শুয়ে আছেন। সে মনে মনে ভাবতে থাকে, এই লোকটির জন্য সারা দুনিয়ায় ফিতনা হচ্ছে- উনাকে শহীদ করাটা সহজ একথা ভেবে সে তরবারী বের করে। হঠাৎ দেখতে পায় দুটি সিংহ তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আজমী চিৎকার করতে থাকে। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি জাগ্রত হয়ে যান এবং আজমী পুরো ঘটনা বর্ণনা করে এবং সে সেখানেই মুসলমান হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
(৫)
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র খিলাফত আমলে একবার ভূমিকম্প হয় এবং পুনঃ পুনঃ প্রকম্পিত হতে থাকে। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হামদ শরীফ ও পবিত্র ছানা শরীফ পাঠ করার পর যমীনে দোররা মারেন এবং বলেন স্থিত হয়ে যাও। আমি কি তোমার প্রতি ইনসাফ করিনি? একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকম্প বন্ধ হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
(৬)
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যেদিন পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন, সেদিন গায়েবী থেকে দুটি কবিতা শরীফ শ্রুত হয়। কিন্তু কবিতা শরীফ আবৃত্তিকারীকে দেখা যায়নি। কবিতা শরীফ দুটির মর্ম হচ্ছে এই, “পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার উপর কেউ ক্রন্দন করতে চাইলে সে ক্রন্দন করুক, বেশি সময় অতিবাহিত হয়নি লোকেরা ধ্বংসের পানে উপনীত হয়েছে। দুনিয়া হতে কল্যাণ দূরে সরে গিয়েছে এবং ভালো লোকেরা দুনিয়ায় দুঃখ-দুর্দশায় পতিত হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে কাছীর, আল-বিদায়া)
-মুহম্মদ ইবনে ইসহাক।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












