পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
, ২৪ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৭ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০১ পৌষ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
তিন ভাবে দু‘আ কবুল করা হয়:
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي سَعِيدٍ رضي الله عنه أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَدْعُو بِدَعْوَةٍ لَيْسَ فِيهَا إِثْمٌ، وَلَا قَطِيعَةُ رَحِمٍ، إِلَّا أَعْطَاهُ اللهُ بِهَا إِحْدَى ثَلَاثٍ إِمَّا أَنْ يعَجَّلَ لَهُ دَعْوَتُهُ، وَإِمَّا أَنْ يَدَّخِرَهَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ، وَإِمَّا أَنْ يَصْرِفَ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا قَالُوا إِذنْ نُكْثِرُ، قَالَ اللهُ أَكْثَرُ
অর্থ: “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন কোন মুসলমান কোন দু‘আ করে আর তার দু‘আর মধ্যে গুনাহ-খাতা করার কথা উল্লেখ না থাকে কিংবা আত্মীয়তার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার কথাও উল্লেখ না থাকে তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি এই দু‘আ তিন প্রকারের যে কোন প্রকারে কবুল করবেন প্রথমত; সে যা চায় তা সরাসরি দিয়ে দিবেন। (এতে করে বান্দা-বান্দী বুঝতে পারে তাদের দু‘আ কবুল করা হয়েছে।)
দ্বিতীয়ত; মহান আল্লাহ পাক তিনি দু‘আর কোন বদলা দুনিয়াতে দেন না; বরং সেটা পরকালের জন্য জমা করে রাখেন। (এতে করে বান্দা-বান্দী বুঝতে পারে না যে তার দু‘আ কবুল হলো কি হলো না। যার কারণে তারা মনে করে হয়তবা মহান আল্লাহ পাক তিনি তার দু‘আ কবুল করেননি। মূলত তার দু‘আ কবুল করা হয়েছে আর সেটা পরকালের মুছীবত থেকে উদ্ধারের জন্য রেখে দেয়া হয়েছে)। তৃতীয়ত; বান্দা-বান্দী যা চেয়ে থাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটা না দিয়ে তার চেয়ে বড় যে মুছীবত রয়েছে যে মুছীবত সম্পর্কে বান্দা নিজেও জানে না; সেটা দূর করে দেন। (এটাও বান্দারা বুঝতে পারে না যে তাদের দু‘আ কবুল করা হয়েছে নাকি হয়নি) এই বিষয়টি শুনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে তো আমরা অনেক নিয়ামত মুবারক লাভ করবো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন আপনারা যা কিছু চান মহান আল্লাহ পাক তিনি তার থেকে অনেক বেশী দিয়ে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ!
কাজেই যতই বিষয়ই থাকুক না কেন সব বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজু করতে হবে। আর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি সকল দু‘আ, সকল চাওয়া পাওয়া কবুল করছেন।
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে তিন পদ্ধতির যে কোন এক পদ্ধতিতে দু‘আ কবুল করার বিষয়টি স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। আর যেটা পরকালে দেয়া হবে এর ব্যাখ্যায় অপর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে-
“হাশরের ময়দানে কোটি কোটি বান্দা-বান্দী একত্রিত হবে। যখন তাদের নেকী ও বদী ওজন করা হবে দেখা যাবে তাদের নেক আমল কম, বদ আমল বেশী। তাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়েছে। তখন তারা আরজু করতে থাকবে, আয় মহান আল্লাহ পাক! আমাদের তো নেক আমল কম, বদ আমল বেশী। আমরা বাঁচবো কি করে, আমাদের জন্য তো জাহান্নাম ওয়াজিব। আপনি দয়া করে কুদরতীভাবে আমাদের একটা ব্যবস্থা করে দিন। তখন রহমান, রহীম, গফফার, সাত্তার, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, তোমরা অমুক স্থানে যাও; সেখানে দেখো পাহাড়-পাহাড় নেকী রাখা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তোমাদের নেকীর পাল্লায় উঠিয়ে দাও। তখন বান্দারা সে দিকে দৌড় দিবে, সেখানে গিয়ে দেখবে তাদের জন্য আলাদা পাহাড়-পাহাড় নেকী জমা করে রাখা হয়েছে। তখন বান্দারা আরজু করবে আয় মহান আল্লাহ পাক! আমরা তো দুনিয়াতে এত নেক কাজ করিনি। তাহলে এতো নেকী কিভাবে আসলো? তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, তোমরা নেক কাজ করোনি এটা সত্য। তবে তোমরা আমার নিকট অনেক দু‘আ করেছিলে, অনেক আরজু করেছিলে সেই দু‘আ গুলো সব আমি যমীনে দেইনি। আজকের কঠিন দিনের জন্য জমা করে রেখেছি। কাজেই, এগুলো তোমাদেরই দু‘আর ফলাফল। অতএব তোমরা এগুলো নিয়ে তোমাদের নেকীর পাল্লায় উঠিয়ে দাও। তখন তারা এই পাহাড়-পাহাড় নেকী নিয়ে তাদের নেকীর পাল্লায় তুলে দিবে; দেখা যাবে কিছুক্ষণ পূর্বেও যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব ছিলো তাদের জন্য এখন পবিত্র জান্নাত ওয়াজিব হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ!
কাজেই কোন দু‘আই বিফলে যায় না। সব দু‘আই কবুল করা হয়। ৩ প্রকারের যে কোন এক প্রকারে দু‘আ কবুল করা হয় এবং তার জন্য বদলাও দেয়া হয়। সুতরাং আমাদের উচিত বেশী বেশী দু‘আ করা, আরজু করা।
দু‘আ বা মুনাজাত একা বা সম্মিলিতভাবে করার হুকুম-
দু‘আ-মুনাজাত একা একা করা যায়, আবার কয়েকজন একত্রে সমবেত হয়ে কোনো একজনকে আমীর করে উনার সাথে সম্মিলিত মুনাজাতও করা যায় (অর্থাৎ একজন সকলের পক্ষ থেকে আমীর হয়ে সকলের পক্ষ থেকে দু‘আ করবেন আর বাকিরা সবাই উনার সাথে সাথে উচ্চস্বরে আমীন আমীন বলবেন) হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা ফিহরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কোনো জামায়াত এক জায়গায় সমবেত হয়ে তাদের মধ্যে একজন দু‘আ করে আর অন্যরা আমীন আমীন বলতে থাকে, তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের দু‘আ অবশ্যই কবুল করেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসতাদরাকে হাকীম- ৩/৩৪৭)
কাজেই, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা যেন আমাদের সকলকে হাক্বীক্বীভাবে উনাদের নিকট বেশী বেশী দু‘আ করার তাওফীক্ব দান করেন। আমীন! (সমাপ্ত)
-মুহম্মদ হুসাইন নাফে’।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পুরুষের জন্য কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












