ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৮)
(বিলাদাত শরীফ- ৮০ হিজরী, বিছাল শরীফ- ১৫০ হিজরী)
, ০৪ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৪ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ২৩ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পূর্ব প্রকাশিতের পর
কুফা শহরে এক ব্যক্তি ছিলো গোঁড়া শিয়া। সে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের তৃতীয় খলীফা, আমীরুল মু’মিনীন, আজওয়াদুন নাস, সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে ইহুদী বলে বেড়াতো। নাঊযুবিল্লাহ! ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন তাকে বললেন, “তোমার মেয়ের জন্য কি বর খুঁজছ? আমার সন্ধানে একজন ছেলে আছে। তিনি অত্যন্ত শরীফ বংশের ছেলে। অধিক ধনাঢ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হাফিয, খুবই পরহেযগার, মুত্তাক্বী, সারা রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির করেন। কর্তব্য পরায়ন, বড় দানশীল, খুবছূরত মুবারকের অধিকারী।
শিয়া লোকটি বললো- এমন সুযোগ্য ছেলে পাওয়া তো খুবই কঠিন। আপনি দয়া করে বিয়ের ব্যবস্থা করে দিন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখন বললেন, তবে ছেলেটির একটি মাত্র দোষ আছে। তাহলো তিনি ইহুদী। একথা শুনামাত্র শিয়া লোকটি রেগে গেলো। বললো, “আপনি কি আমাকে ইহুদীর সাথে মেয়ে বিয়ে দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন?
তিনি বললেন, “তোমার ধারণানুযায়ী যিনি ইহুদী উনার সাথে তো স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুজন বানাত আলাইহিমাস সালাম উনাদের শাদী মুবারক দিয়েছেন, তাহলে ইহুদীর সাথে তোমার মেয়ে বিয়ে দেয়াতে আপত্তি কোথায়?
একথা শুনে সেই গোঁড়া শিয়া লোকটির চেতনা ফিরে আসলো। সে তওবা করে নিজের ধারণা ও স্বভাব পরিবর্তন করলো। (সীরাতে নু’মান-৭০)
একবার খারিজী সম্প্রদায়ের অনেক লোক সংঘবদ্ধ হয়ে ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপর চড়াও হয়। তারা উনাকে উদ্দেশ্য করে বললো, “আপনি কুফরী থেকে তওবা করুন। ” সাইয়্যিদুনা ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি তোমাদের কুফরী থেকে তওবা করছি।
উল্লেখ্য যে, খারিজীদের ধারণা, মানুষ গোনাহ করলে কাফির হয়ে যায়। অর্থাৎ গোনাহ ও কুফরী একই বিষয়।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল, যে কাজকে তোমরা কুফরী মনে করো, আমি তা হতে তওবা করছি। কোন একজন লোক গিয়ে খারিজীদেরকে উস্কে দিয়ে বললো, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তো তোমাদেরকে বোকা বানিয়েছেন।
খারিজীরা এসে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললো, আপনি আমাদের সাথে চালাকি করলেন কেন? তিনি বললেন, তা তোমাদের নিশ্চিত বিশ্বাস নাকি ধারণা যে, আমি তোমাদের সাথে চালাকি করেছি?
তারা বললো, ধারণা। তিনি বললেন, তাহলে তোমাদেরই তো তওবা করা উচিত। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ان بعض الظن اثم
অর্থ: “নিশ্চয়ই কোন কোন ধারণা পাপ। ” (পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১২)
একথা শুনে তারা সবাই লা-জাওয়াব হয়ে ফিরে গেলো। (সীরাতে নু’মান-৬৯)
একদিন ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র মসজিদে বসা ছিলেন। সেখানে উনার অনেক মুরীদ-মু’তাকিদ, ত্বালিবুল ইলিম ছিলেন। হঠাৎ একদল খারিজী সেই মসজিদে প্রবেশ করলো। সবাই সেখান থেকে চলে গেলো। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি অবিচলভাবে সেখানে বসে রইলেন। আর মুরীদ-মু’তাকিদ সবাইকে নির্ভয়ে বসে থাকতে বললেন।
খারিজী নেতা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললো, আপনি কোন্ লোক? তিনি বললেন, আমি মুসতাজীর তথা আশ্রয়প্রার্থী। মহান আল্লাহ পাক তিনি যার সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
وان احد من الـمشركين استجارك فاجره حتى يسمع كلام الله ثم ابلغه مامنه.
অর্থ: “যদি কোন মুশরিক ব্যক্তি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম মুবারক শুনতে পায়। তারপর তাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দাও। ” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ০৬)
উল্লেখ্য যে, খারিজীরা নিজেদের ছাড়া সবাইকে কাফির ও মুশরিক মনে করতো। সবাইকে হত্যার যোগ্য বিবেচনা করতো। সে সময় তারা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও উনার সাথীগণকে শহীদ করার জন্যই মসজিদে ঢুকেছিল। কিন্তু উনার জাওয়াব শুনে তারা লা-জাওয়াব হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর তাদের নেতা বললো, উনাকে পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে কিছু আয়াত শরীফ তিলাওয়াত শুনাও এবং উনার ঘরে নিরাপদে পৌঁছে দাও। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












