ইলমুত তাযকিয়্যাহ
, ২০ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৯ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ০৮ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ২৪ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মানুষ আমোদ-প্রমোদ করতে গিয়ে কখনো কখনো একে অপরকে নিয়ে ঠাট্টা-কৌতুক করে থাকে, কিন্তু এতে প্রায়শ ঠাট্টাকৃত ব্যক্তির মনে ব্যথা লেগে সে ক্রোধান্বিত হয়। কাজেই এ ধরণের ঠাট্টা-কৌতুক থেকে বিরত থাকা উচিত। এ ধরণের অহেতুক কাজে সময় নষ্ট না করে নিজেকে পারলৌকিক পাথেয় সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত রাখা অপরিহার্য। স্বাভাবিকভাবেই হাসি-তামাশা এবং ঠাট্টা-বিদ্রƒপ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্রোধ উৎপাদনের কারণ ঘটায়। এ জন্যই অনিবার্যভাবে হাসি-তামাশা, ঠাট্টা-বিদ্রƒপ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। প্রত্যেকেরই মনে রাখা উচিত যে, আমি যেরূপ অমুককে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করছি, সময় ও সুযোগ মত আমাকে নিয়েও অন্য লোকেরা ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করতে দ্বিধাবোধ করবে না। অতএব কারুরই প্রতি ঠাট্টা-উপহাস করা ঠিক নয়; এরূপ আচরণ থেকে দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّنْ قَوْمٍ عَسٰى اَنْ يَكُوْنُوْا خَيْرًا مِّنْهُمْ ◌
অর্থ : “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ যেন অপরকে বিদ্রƒপ বা উপহাস না করে। কেননা অসম্ভব নয় যে, বিদ্রƒপকৃত লোকগণ (মহান আল্লাহ পাক উনার) তাদের (অর্থাৎ বিদ্রƒপকারীদের) চেয়ে উত্তম হতে পারে।” (পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কোন পাপ কাজ থেকে তওবাহ করলে তারপরেও যদি কেউ সেই পাপের কথা উল্লেখ করতঃ দুর্নাম-কুৎসা বা বিদ্রƒপ করে তবে দুর্নামকারী মৃত্যুর পূর্বে যে কোন সময়ই হোক না কেন ওই পাপে জড়িত হবে।”
কারো উদর থেকে সশব্দে বায়ু নির্গত হলে তা নিয়ে তাকে ঠাট্টা করতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, যে কাজ মানুষ নিজেও করে সে কাজের জন্য অপরকে উপহাস করবে কেন?
তিনি আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি অপরকে ঠাট্টা করে এবং হাস্যাস্পদ বানায় ক্বিয়ামত দিবসে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তাকে নিয়ে উপহাস করবেন এবং হাস্যাস্পদ বানাবেন। বেহেশতের দরজা খুলে দিয়ে তাকে বলা হবে, আসো; কিন্তু সে দরজার কাছে আসা মাত্র দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। তখন সে বেহেশতে প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে যেতে থাকবে। হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আবার দরজা খুলে দিয়ে পুনরায় তাকে ডাকবেন। সে ডাকে সাড়া দিয়ে আবার যখন দরজার কাছে পৌঁছবে হযরত ফেরেশতা আলইহিমুস সালাম উনার পুনরায় দরজা বন্ধ করে দিবেন। এরূপ বার বার হতে থাকার পর অবশেষে তার অবস্থা এরূপ হবে যে, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা যত ডাকুননা কেন সে আর বেহেশতের দিকে অগ্রসর হতে সাহসী হবে না। কেননা সে তখন পরিষ্কার বুঝে ফেলবে যে, উনারা তাকে নিয়ে ঠাট্টা করছেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বদা ঠাট্টা-বিদ্রƒপ ও কৌতুক করতে বারণ করেছেন। তবে কখনো সামান্য কিছু হাসা-কৌতুক বা খোশমেজাযী ভাব প্রকাশ করা বৈধ এবং তা সৎ স্বভাবের অন্তর্গত যখন তাতে সত্য কথা ভিন্ন অসত্য কোন কিছু প্রশ্রয় না পায়।
মোটকথা, হাস্য-কৌতুক বা ঠাট্টা-বিদ্রƒপ সত্য ব্যতীত মিথ্যা কথা প্রয়োগ করা বৈধ নয়। সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে হাস্য-কৌতুকে মগ্ন হওয়া সময়ের অপচয় এবং এতে যে অধিক পরিমাণ হাসির উদ্রেক হয়, সে হাসি মানুষের হৃদয়কে মলিন ও অসচ্ছ করে দেয়। অধিকন্তু গাম্ভীর্য এবং ব্যক্তিত্বও হ্রাস করে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, অপরকে হাসানোর লক্ষ্যে যে ব্যক্তি হাস্যাদ্দীপক বাক্য উচ্চারণ করে তা দ্বারা সে ব্যক্তি নিজের মর্যাদাকে যেন আসমানের উচ্চতা থেকে যমীনের নিম্নতায় নামিয়ে ফেলল।
তাবিয়ী হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, হাসি-ঠাট্টা করো না। কেননা হাসি-ঠাট্টা মনে হিংসা-বিদ্বেষের উদ্ভব করে এবং তার ফলে অনেক সময়ই অঘটন ঘটে যায়।
কাজেই, কোন স্থানে লোকদের সাথে একত্রে বসলে পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোচনা করবে। পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইল্মে অনভিজ্ঞ হলে নেককার আল্লাহওয়ালা উনাদের স্বভাব-চরিত্র, আমল-আখলাক্ব মুবারক সম্পর্কে আলোচনা করবে।
হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেছেন, কেউ কারো সাথে ঠাট্টা-কৌতুক করলে তার কাছে ওই ঠাট্টা-কৌতুককারীর ব্যক্তিত্ব ও গুরুত্ব কমে যায়।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পরিভাষা, শব্দ ও বানান আগ্রাসন (৯)
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হালাল হারামের কথা-১৪
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুমহান পবিত্র ২১শে শাওওয়াল শরীফ: মুবারক প্রেক্ষাপট
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দ্বীন ইসলাম উনার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিবস পালন নিয়ে বিভ্রান্তির দলীলসম্মত জাওয়াব
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল খ্বমিসাহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইলিম এবং আলিম উনাদের ফযীলত
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৩১)
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র কুরবানী ও কুরবানীদাতার ফযীলত (২)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৮)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)