ফতওয়া
খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৬)
গবেষণা কেন্দ্র: মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
, ১৮ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০২ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১৬ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র হাদীছ শরীফ, শুরুহাত বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ, তাফসীর, ফিক্বাহ্, ফতওয়া ও সীরাতগ্রন্থসমূহ হতে এ ব্যাপারে অকাট্য দলীলসমূহ পেশ করা হলো-
(১-৩)
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَلْبَسُ الْقَلَنْسُوَةَ الْبَيْضَاءَ. (المختصر الوفاء- مرقاة المفاتبح- الطبرانى)
অর্থ: হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাদা রংয়ের টুপি পরিধান করতেন। (আল্ মুখতাছারুল ওফা, মিরকাতুল মাফাতীহ্, আত্ তবারানী)
(৪)
عَنْ حَضْرَتْ اَبِى هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَلَنْسُوَةً بَيْضَاءَ شَامِيَةً (المختصر الوفاء)
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল হুদা মুুবারকে (মাথা মুবারক) শাম দেশীয় সাদা রংয়ের টুপি দেখেছি। ” (আল মুখতাছারুল ওফা)
(৫-৭)
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَلْبَسُ الْقَلَانِسَ تَحْتَ الْعَمَائِمِ وَبِغَيْرِ الْعَمَائِمِ (ابن عساكر- تاريخ الخميس. مرقاة المفاتيح ৮ صفه ২৪৬)
অর্থ: “হযরত ইব্নে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাগড়ীর নীচে টুপি মুবারক পরিধান করতেন এবং পাগড়ী ব্যতীত শুধু টুপিও পরিধান করতেন। ” (ইবনে আসাকির, তারীখুল খামীস, উনারকাতুল মাফাতীহ্ ৮ম খ- পৃষ্ঠা-২৪৬)
(৮-১১)
عَنْ حَضْرَتْ أُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ كَانَتْ لَهٗ كُمَّةٌ بَيْضَاءُ.
অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার টুপি মুবারক ছিল সাদা গোল। (আদ্ দিমিয়াত্বী, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া লিল্ কুস্তলানী, শরহে মাওয়াহেব লিয্ যুরকানী, তাহ্ক্বীকুল মাসায়েল)
(১২-২০)
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي كَبْشَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ كِمَامُ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بُطْحًا
অর্থ: হযরত আবূ কাব্শা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের টুপি মুবারক ছিল, গোল যা ভালরূপে মাথার সাথে লেগে থাকতো। ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা মুন্কার। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খ-, ৫৭৯ পৃষ্ঠা, মিরকাতুল মাফাতীহ্ ৮ম খ-, ২৪৬ পৃষ্ঠা, শরহুত্ ত্বীবী ৮ম খ-, ২১৫ পৃষ্ঠা, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ ৪র্থ খ-, ৩৮৬ পৃষ্ঠা, আশয়াতুল লুময়াত ৩য় খ-, ৫৪৩ পৃষ্ঠা, মুযাহিরে হক্ব ৩য় খ-, ৫৩৩ পৃষ্ঠা, মিরআতুল মানাজীহ্ ৬ষ্ঠ খ-, ১০২ পৃৃষ্ঠা)
স্মর্তব্য যে, উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফের একজন রাবী অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি জঈফ হওয়ার কারণে হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফকে মুনকার বা জঈফ বলেছেন, অথচ সকলের মতে তিনি জঈফ নন। কারণ কেউ কেউ উনাকে ছেক্বাহ বলেও উল্লেখ করেছেন। যেমন তিরমিযী শরীফের মশহুর শরাহ তোহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খ- ৪৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَقَالَ فِي الْخُلَاصَةِ: ضَعَّفَهُ الْقَطَّانُ وَالنَّسَائِيُّ والدّارَقُطْنِيُّ وَوَثَّقَهُ اِبْنُ حِبَّانَ
অর্থ: খোলাছা কিতাবে বলা হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ইয়াহ্ইয়া বিন সাঈদ, নাসাঈ ও দারে কুতনী রহমতুল্লাহি আলাইহি জঈফ বলেছেন, আর হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ছেক্বাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন।
অতএব প্রমাণিত হলো যে, উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা জঈফ হওয়ার ব্যাপারে সকলে একমত নন। তাছাড়া জঈফ হাদীছ শরীফ দ্বারাও যে মুস্তাহাব-সুন্নত প্রমাণিত হয়, তা সংশয় নিরসনে দলীলভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, উপরোল্লিখিত বর্ণনাগুলোর মধ্যে তিনটি শব্দ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। (১) (بَيْضَاءُ) বাইদা, (২) (كُمَّةٌ) কুম্মাতুন, (৩) (بُطْحًا) বুত্হা। অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের টুপি মুবারক কিরূপ ছিল, তা বুঝানোর জন্য উল্লেখিত শব্দত্রয় উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে (بَيْضَاءُ) ‘বাইদা’ শব্দ দ্বারা প্রমাণিত হয যে, সাদা রংয়ের টুপিই হচ্ছে খাছ সুন্নত। কাজেই কালো, সবুজ, খয়েরী ইত্যাদি রংয়ের টুপি পরিধান করলে কস্মিনকালেও সুন্নত আদায় হবে না। আর পবিত্র হাদীছ শরীফে সুন্নতী টুপির ব্যাপারে (كُمَّةٌ) ‘কুম্মাতুন’ শব্দ উল্লেখ আছে, আর ‘কুম্মাতুন’ শব্দ দ্বারা মূলতঃ গোল টুপিকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন ‘কুম্মাতুন’ শব্দের ব্যাখ্যায় নিম্মোক্ত কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে যে-
(২১-২২)
(كِمَامٌ) بِكَسْرِ الْكَافِ جَمْعُ كُمَّةٍ بِالضَّمِّ كَقِبَابٍ وَقُبَّةٍ وَهِيَ الْقَلَنْسُوَةُ الْمُدَوَّرَةُ سُمِّيَتْ بِهَا لِأَنَّهَا تُغَطِّي الرَّأْسَ . قَالَ الْجَزَرِيُّ فِي النِّهَايَةِ..... يَعْنِي أَنَّهَا كَانَتْ مُنْبَطِحَةً غَيْرَ مُنْتَصِبَةٍ وقال فى القاموس الْكُمَّةُ بِضَمِّ الْقَلَنْسُوَةُ الْمُدَوَّرَةُ (تحفة الاحوذى ج ه صفه ৪৭৯)
অর্থ: কাফের নীচে যের দিয়ে কিমাম (كِمَامٌ) হচ্ছে কুম্মাতুন (كُمَّةٌ)- শব্দের বহুবচন, যেমন ‘ক্বিবাব’ শব্দটি ‘কুব্বাতুন’ শব্দের বহুবচন। আর ‘কুম্মাতুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে গোল টুপি। যেহেতু তা মাথাকে ঢেকে রাখে, তাই এ নামকরণ করা হয়েছে। ইমাম জাযরী উনার নেহায়া ইব্নুল আছীরে বলেন, .............. অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের টুপি মাথার সাথে মিলিত থাকতো, উঁচু হয়ে থাকতো না, আর ‘ক্বামূসে’ বলা হয়েছে- কুম্মাতুন (كُمَّةٌ) হলো গোল টুপি। ” (তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খ-, ৪৭৯ পৃষ্ঠা)
(২৩)
(كِمَامٌ) بكسر الكاف جمع كمة بالضم كقباب وقبة وهى قلنسوة المدورة سميت بها لانها تغطى الرأس. (مرقاة المفاتيح ج৮ صفه ২৪৬)
অর্থ: “কাফের নীচে যের দিয়ে কিমাম (كِمَامٌ) শব্দটি ‘কুম্মাতুন’ (كُمَّةٌ) শব্দের বহুবচন যেরূপ ক্বিবাব কুব্বাতুন- শব্দের বহুবচন। আর ‘কুম্মাতুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে গোল টুপি। যেহেতু তা মাথাকে ঢেকে ফেলে, তাই এ নামকরণ করা হয়েছে। ” (মিরকাতুল মাফাতীহ্, ৮ম খ- ২৪৬ পৃষ্ঠা)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












