খাযিনু কামালিল্লাহ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল মুহব্বত মুবারক
, ১৩ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৩ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ১২ মে, ২০২৫ খ্রি:, ২৯ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
لَايُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ نَفْسِهِ وَمَالِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
“তোমাদের মাঝে কেউ মু’মিন-মুসলমান হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার পিতা-মাতা, আল-আওলাদ, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, জান-মাল এবং সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে সবচাইতে বেশী মুহব্বত না করতে পারবে। ” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
এই হাদীছ শরীফকে বলা হয়, উম্মুল হাদীছ শরীফ। এই হাদীছ শরীফের কথা চিন্তা করেই সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ফানা-বাক্বা হয়েছেন। কি রকম ফানা-বাক্বা হয়েছেন তার বহিঃপ্রকাশ উনাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা জীবনী মুবারকে রয়েছে। যা কুল মুসলিম উম্মাহর জন্য ইবরত-নছীহত।
মূলত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত কিছু থেকে এমনকি নিজের জীবন থেকেও বেশী মুহব্বত করা প্রতিটি ঈমানদার ব্যক্তির জন্য ফরজে আইন। যা মু’মিন হওয়ার পূর্বশর্ত। আর ফরজ এ জন্যই; কেননা সবচাইতে বেশী মুহব্বত না করলে ঈমানদারই হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যদি তাই হয়, তাহলে অন্যান্য আমলের ফায়দা কি? এজন্য অন্যান্য ফরজের উপরে ফরজে আইন হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উনার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা। শুধু মুহব্বত করাই নয়; অন্যান্য সমস্ত মুহব্বতের বিষয়বস্তু থেকে উনাদের মুহব্বতকে প্রাধান্য দেয়া।
যে ব্যক্তি নিজের জীবন থেকে সাইয়্যিদুল কাওনাইন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেশী মুহব্বত করতে পারেনি সে মু’মিন নয়।
ফখরে মওজুদাত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজের জীবন থেকে বেশী মুহব্বত করার প্রকৃত নজির দেখিয়েছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা।
হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি প্রকাশ্যে সম্মানিত ইসলাম প্রচার করার অনুমতি চাইলেন। প্রথমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুমতি দেননি, পরে হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বারবার অনুরোধে অনুমতি মুবারক দিলেন। হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র কা’বা গৃহে হাজির হয়ে খুৎবা শুরু করেন। খুৎবা শুরু হতেই চতুর্দিক থেকে কাফিররা উনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কাফিরদের আক্রমণে উনার চেহারা মুবারকসহ সবকিছু রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। তাদের আক্রমণের শিকার হয়ে তিনি বেহুঁশ হয়ে যান। এই খবর শুনে বণী তাঈমের লোকেরা এসে হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে নিয়ে যায়। অনেকেরই ধারণা ছিলো যে, তিনি আর বাঁচবেন না। সন্ধ্যা পর্যন্ত হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন। সন্ধ্যার সময় উনার হুঁশ মুবারক ফিরে আসার পর সর্বপ্রথম কথা এই ছিলো- “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি অবস্থায় আছেন?” উপস্থিত লোকজন বললো, “যাঁর জন্যে এই অবস্থা, হুঁশ শক্তি ফিরে আসার পর সেই নবী উনার নাম!” এটা শুনে সকলেই চলে গেলো। উনার মাতা কিছু খাবার তৈরী করলেন। করে দুধ ও কিছু খাবার খেতে বললেন, কিন্তু হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার একই কথা। “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অবস্থা কি? তিনি কেমন আছেন?” তিনি কি ভাল আছেন?” উনার মা বললেন, “বাবা আমি জানি না তিনি কি অবস্থায় আছেন?” তিনি বললেন, “ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার ভগ্নী উম্মে জামীলের নিকট গিয়ে জেনে আসুন। ” উনার মা শেষ পর্যন্ত উম্মে জামীলের নিকট গিয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হালত জিজ্ঞাসা করলেন। উম্মে জামীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নিজে গিয়ে হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে বলবেন বিধায় তিনি উনাকে নিয়ে আসলেন। তিনি হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। উম্মে জামীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ভাল আছেন এবং দ্বারে আরকামে আছেন। ” হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “কসম খোদার! আমি ঐ পর্যন্ত কিছুই খাবো না, পানও করবো না, যে পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাক্ষাৎ না হয়। ” কসম শুনে উনার মা বাধ্য হয়ে হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে দ্বারে আরকামে নিয়ে আসেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখে হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ধরে কাঁদতে থাকেন এবং সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও কাঁদতে লাগলেন। হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ইনি আমার মা, আমার মাকে ঈমানের দাওয়াত দিন এবং হিদায়েতের জন্যে দোয়া করুন,” ছহিবুল বারাকাত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দাওয়াত দিলেন ও দোয়া করলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঈমান কবুল করে মুসলমান হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ্!
এই ছিলো প্রকৃত মুহব্বত ও প্রকৃত মু’মিনের নিদর্শন। যারা ধন-সম্পদ, পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র, ভাই-বোন এমনকি নিজের জীবনের চাইতেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেশী মুহব্বত করতেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে উসওয়াতুন্ হাসানাহ, ছহিবুল ইহসান, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ন্যায় হাক্বীক্বী মুহব্বত করে হাক্বীক্বী ঈমানদার হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












