গাজার শিশুরা নয় গাধারা স্বাগত, জার্মানির ডাবল স্ট্যান্ডার্ড
, ০২ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৬ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) বিদেশের খবর
আল ইহসান ডেস্ক:
পশ্চিম জার্মানির একটি স্থানীয় সংবাদপত্র অলগেমাইন জেইতুং তাদের নিবন্ধে প্রকাশ করেছে, ‘গাজা থেকে উদ্ধার করা ছোট গাধাগুলো ওপেনহাইমে একটি বাড়ি খুঁজে পেয়েছে।’ সংবাদটি মারাত্মক রসিকতা সহকারে প্রকাশ করলেও ঘটনাটি এমন ছিলো না। সংবাদটি প্রকাশের পর ইনস্টাগ্রামে এর বিরুদ্ধে অসংখ্য সমালোচনামূলক মন্তব্যের কারণে পোস্টের মন্তব্য বিভাগটি দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকৃত প্রেক্ষাপট কি?
জার্মানিতে প্রাণীরা স্বাগত হলেও গাজাবাসীরা নয়:
অনেকের কাছে, গাজা থেকে উদ্ধার করা এই চারটি গাধার গল্প জার্মান নেতাদের অমানবিকতারই উদাহরণ। ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে গাজা থেকে জার্মানির হাসপাতাগুলোতে ভর্তি হওয়া মানুষ নেই বললেই চলে। যদিও যুদ্ধ বা সংকট চলাকালে নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব থাকে যেকোন দেশের সরকারের উপরেই। তা সত্ত্বেও, বার্লিন গাজায় গণহত্যা চলাকালীন সময় থেকেই জার্মান পাসপোর্টধারী ফিলিস্তিনি নাগরিকদের উদ্ধারে কোন কাজ করেনি। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের অক্টোবরের পরেও গাজা অভিযানের সময়, বন্দী হওয়া ইসরায়েলিদের নাগরিকত্ব দিয়েছে জার্মানি। এছাড়াও তাদেরকে ‘জার্মান জিম্মি’ হিসেবে মুক্তির জন্যও সমর্থন জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন পশ্চিমা কিছু দেশ গাজা থেকে আহত বা অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলেও, জার্মান প্রায় কিছুই করেনি। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজার মাত্র দুটি শিশু জার্মানিতে চিকিৎসা পেয়েছে বলে মনে করা হয়। অন্যদিকে জার্মানের বেশ কয়েকটি শহর থেকে আরো শিশুকে চিকিৎসার প্রস্তাব দিয়েছিলো এবং তা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলো। তবে ফেডারেল সরকার আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতির পরেও গাজার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে এই পরিকল্পনাগুলো আটকে দিয়েছে।
এছাড়াও গাজার রোগীদের জার্মানে প্রবেশের ক্ষেত্রে এক জটিল প্রক্রিয়ার অবতারণ করেছে জার্মানের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া রোগীদের সহায়তাকারী এনজিওগুলো রোগীদের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে গ্যারান্টার হওয়ার শর্ত দেয়। অর্থাৎ যদি কোন রোগী আশ্রয় নেয় সেক্ষেত্রে এনজিওগুলোকে বছরব্যাপী আইনি প্রক্রিয়ার খরচ বহন করতে হবে।
এমনকি, অ্যালজেমাইন জেইতুং-র প্রবন্ধটিও গাজা সম্পর্কে জার্মানিদের কপটতার ডাবল স্টান্ডার্ড তুলে ধরে।
নিবন্ধটি শুরু হয়েছে ‘তারা ক্ষুধা ও দুর্দশা, মারধর এবং পরিশ্রম সহ্য করেছে।’ এখানে স্পষ্টই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, গাজার বাসিন্দারা কেবল ‘হামাস’ বা ‘ইহুদী-বিদ্বেষী’ নয় বরং তারা পশু নির্যাতনকারীও বটে। তাছাড়া নিবন্ধটির মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসী ইসরায়েলের সেনাবাহিনী কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের উপর পদ্ধতিগত নির্যাতনকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এই লেখায় গাধার প্রতি এতটাই সহানুভূতি দেখানো হয়েছে যার কারণে গত দুই বছরে মানবেতর জীবন-যাপন করা গাজার মানুষের প্রতি দেখানো সহানুভূতি উপেক্ষিত হয়েছে। কিন্তু এটি আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, নিবন্ধটিতে গাধাগুলোর ক্ষুধার জন্য- অথবা প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনিদের মানবেতর জীবনের জন্য কারা দায়ী তা উপেক্ষিত হয়েছে।
নিবন্ধটিতে আনন্দ প্রকাশ করে বলছে- ‘গাধাগুলি এতকিছু সহ্য করার পরেও তারা এখন তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে’। অর্থাৎ জার্মানের মিডিয়াগুলোতে গাজার সাধারণ মানুষের প্রতি গুরুত্ব নেই।
গণহত্যার বিরুদ্ধে জার্মানির সবুজায়ন:
তবে, তাদের স্পষ্ট নিন্দার বাইরেও আরেকটি মাত্রা রয়েছে। আর তা হচ্ছে এই গাধাগুলো কিভাবে জার্মানিতে পৌঁছেছিলো তার গল্প। গাধাগুলো ছিলো পরিত্যক্ত, তাদেরকে নির্যাতন এবং দুর্ব্যবহার করা হয়েছিলো, অথবা তাদের মৃত্যু নির্ধারিত ছিলো, অনেকটা ওপেনহেইমের চিড়িয়াখানাটির মতো। (কিন্তু কেন এগুলো পরিত্যক্ত হয়েছিলো, অথবা তাদের আসল মালিকদের কি হয়েছিলো সে সম্পর্কে এখান কোনো তথ্য নেই।)
সন্ত্রাসী ইসরায়েলের প্রাণী কল্যাণ সংস্থার মাধ্যমে প্রাণীগুলোকে উদ্ধার করা হয়েছিলো। বিশেষ একটি দল যারা গাজা থেকে ৫০টি গাধা উদ্ধার করেছে, বলে জানা গেছে। সন্ত্রাসী ইসরায়েলের একটি এনজিও কিভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে এমন কাজ করতে পারে তা স্পষ্ট না হলেও এর জন্য যে আইডিএফের সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিলো তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
গত গ্রীষ্মে, সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সন্ত্রাসী ইসরায়েলি বাহিনী ‘স্টার্টিং ওভার স্যাঙ্কচুয়ারি’ নামক একটি খামারে শত শত গাধা পরিবহন করছে। সন্ত্রাসী ইসরায়েলের মিডিয়া এটিকে প্রাণী উদ্ধার বলে অভিহিত করেছে। বেলজিয়াম সংবাদ সংস্থার মতে, সন্ত্রাসী ইসরায়েলের সাহায্যকারী সংস্থা গর্ব করে বলেছিলো তারা প্রায় ৬০০টি গাধাকে উদ্ধার করেছে।
উত্তর জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনির একটি খামারে আনা আরও চারটি গাধা সম্পর্কে আরেকটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে ‘স্টার্টিং ওভার স্যাঙ্কচুয়ারি’ সংস্থাটিকে জার্মানিতে গাধা নিয়ে আসার সাথে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে গাজায় গণহত্যার পর থেকে, গাধা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন সম্পদ। জ্বালানি সংকট এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের কারণে, আহত ও অসুস্থদের ক্লিনিকে নিয়ে যায় এই গাধাগুলো। বিমানে যেতে বা বাড়ি ফেরার সময় মানুষ ও জিনিসপত্র পরিবহন করে গাধা। এছাড়াও প্রয়োজনীয় পানি, খাবার সরবরাহে গাজার মানুষের গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী এই গাধাগুলো। তাই নির্বোধভাবে নির্যাতন করা বা মৃত্যুর জন্য ছেড়ে দেওয়া খুবই অযৌক্তিক একটি অর্থ প্রকাশ করে বরং গাজাবাসীরা অসুস্থ ও আহত প্রাণীদের চিকিৎসা ও উদ্ধারে ব্যবস্থা করে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে একটি মেডিকেল দল ৭,০০০ এরও বেশি গাধাকে উদ্ধার করেছে। এদিকে, সাংবাদিক তারেক বায়ে তার এক্স হ্যান্ডেলে উল্লেখ করেছে, জাতিসংঘের মতে, ২০২৪ সালের আগস্টের প্রথম দিকে, সন্ত্রাসী ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের ফলে গাজার সমস্ত গবাদি পশুর ৪৩ শতাংশ মারা গিয়েছিলো।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বুঝা যাবে সন্ত্রাসী ইসরায়েল গাধাগুলোকে উদ্ধার নয় বরং অপহরণ বা চুরি করেছে। আর এটি ছিলো আইডিএফে কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের সেই চলমান কৌশলেরই অংশ। যেখানে ফিলিস্তিনিদের উৎপাদন সামগ্রী- বিশেষত জমি, জলপাই গাছ - এবং পরিবহন থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্য নিহিত ছিলো। একইভাবে এটি ছিলো দখলদার বসতি স্থাপনকারীদের ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা আর ফিলিস্তিনিদের পদ্ধতিগত বাস্তুচ্যুতির কেন্দ্রবিন্দু।
আর তাদের এই কদাকার এজেন্ডাকে ঢাকতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিবেশগত যুক্তি। তবে সমালোচকরা এই যুক্তিকে পরিবেশগত যুদ্ধ হিসেবে অবহিত করেছে। তারা বলে, ইহুদী জাতীয় তহবিল (জেএনএফ) যে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমকে ‘পরিবেশ সংরক্ষণ’হিসেবে প্রচার করছে, তা আসলে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করা এবং তাদের জীবনের ভিত্তি ধ্বংস করার একটি পদ্ধতি। আর এমন করেই গাজায় গাধার প্রতীকী ‘উদ্ধার’ পর্যন্ত প্রচারণার আড়ালে লুকিয়ে থাকে বাস্তব নির্যাতনের চিত্র। জার্মান শুধু রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিকভাবেই ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূল আর গণহত্যাকে সমর্থন করছে না- তারা সন্ত্রাসী ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করছে, গাজাবাসীদের প্রতি মানবিক সহায়তাও বন্ধ করে দিচ্ছে। এখন ‘গ্রিনওয়াশিং’-এর মোড়কে জার্মান গাজা উপত্যকার মানুষের টিকে থাকার শেষ অবলম্বনকেও ধ্বংস করে দিচ্ছে। বলা যায়, গাজার মজলুম মুসলমানদেরকে এক প্রকার কটাক্ষ করছে সন্ত্রাসী জার্মানী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
৫০ দিনে ৬০০ বার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে ইসরাইল
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘ভারত সমর্থিত’ সাত সন্ত্রাসীকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ভারতে মুসলিম সহযাত্রীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে আতঙ্ক ছড়ালো এক হিন্দুত্ববাদী
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয়তার সর্বনিম্ন পর্যায়ে ট্রাম্প
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দক্ষিণ খোরাসান: সুপ্ত সম্পদের ভা-ার ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
থাইল্যান্ডে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৭৭
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীর ‘জনবল সংকট’ থেকে সৃষ্টি হচ্ছে নানামুখী সংকট
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পাকিস্তানের দুটি শহরে ১৪৪ ধারা জারি
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পাকিস্তানের দুটি শহরে ১৪৪ ধারা জারি
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
অবৈধ অভিবাসীদের পোশাক ও মুখ তল্লাশি করতে পারবে যুক্তরাজ্যের পুলিশ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইমরান খানের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা জানালো তার ছেলে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইরানের স্বর্ণের বিশাল মজুদ আবিষ্কার
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












