গোসল করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (৫)
, ১২ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১২ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ১১ মে, ২০২৫ খ্রি:, ২৮ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
ওযূ বা গোসলের পর গামছা বা কাপড় দিয়ে শরীর মোছা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ كَانَتْ لَهُ خِرْقَةٌ يَتَنَشَّفُ بِهَا بَعْدَ الْوُضُوءِ.
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি গামছা বা কাপড়ের টুকরা মুবারক ছিল, যেটি দিয়ে তিনি ওযূর (বা গোসলের) পর নূরুল মুজাসসাম (মহাসম্মানিত জিসিম) মুবারক মুছতেন। (বাইহাক্বী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرتْ قَيْسِ بْنِ سَعْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ أَتَانَا النَّبِيُّ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ فَوَضَعْنَا لَهُ مَاءً فَاغْتَسَلَ ثُمَّ أَتَيْنَاهُ بِمِلْحَفَةٍ وَرْسِيَّةٍ فَاشْتَمَلَ بِهَا.
অর্থ: হযরত কায়েছ বিন সায়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের নিকট মহাসম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। আমরা উনার জন্য পানির ব্যবস্থা করলাম। তিনি মহাসম্মানিত গোসল মুবারক করলেন। তখন আমরা উনাকে খয়রী রঙের একটি চাদর এনে দিলাম। তিনি সেটি নূরুল মুজাসসাম (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জিসিম) মুবারকে জড়িয়ে নিলেন। (ফলে সেটি মহাসম্মানিত নূরুল মুজাসসাম (মহাসম্মানিত জিসিম) মুবারক উনার পানি মোছার জন্য রুমাল হিসেবে ব্যবহৃত হলো। ) (ইবনে মাজাহ শরীফ: ৪৬৬)
তবে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রয়োজন মনে না করলে কখনো কখনো ওযূ-গোসলের পরে গামছা বা কাপড় দিয়ে নূরুল মুজাসসাম (মহাসম্মানিত জিসিম) মুবারক মুছতেন না।
শরীরের পোশাক পরিবর্তনের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব:
গোসল করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। সম্পূর্ণ কাপড়বিহীন (উলঙ্গ) হয়ে গোসল করা যাবে না, যদিও তা আবদ্ধ ঘরে হোক না কেন। কমপক্ষে একটি কাপড় জড়িয়ে হলেও লজ্জাস্থান ঢেকে রাখতে হবে। কারণ মানুষের চোখের আড়াল হলেও হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও জ্বিনদের চোখের আড়াল হয় না। গোসল শেষে অত্যন্ত সাবধাণতার সাথে পোশাক পরিবর্তন করতে হবে। যাতে লজ্জাস্থান বে-আবরু না হয়ে যায়। পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে ডানদিককে প্রাধান্য দিতে হবে।
গোসলবিহীন অবস্থার হুকুম:
যার উপর গোসল ফরয হয়েছে গোসলবিহীন অবস্থায় তার জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ স্পর্শ করা, পবিত্র মসজিদে প্রবেশ করা হারাম। অবশ্য যদি করো মসজিদে পা রাখার একান্ত প্রয়োজন হয়, যেমন হয়তো পবিত্র মসজিদের হুজরা (কামরা) হতে বের হওয়ার পথই (রাস্তা) পবিত্র মসজিদের ভিতর, তাছাড়া অন্য কোনো পথ নেই, অথবা কেউ হয়তো অন্য কোথাও জায়গা না পেয়ে অপারগতাবশতঃ পবিত্র মসজিদে নিজের বিছানায় শুয়েছিলো, রাতে ইহতিলাম (গোসল ফরয) হয়ে গেছে, তখন সঙ্গে সঙ্গে তাইয়াম্মুম করে বাইরে গিয়ে গোসল করবে।
মাসয়ালা: সর্বপ্রকার মাজুর অবস্থায় তা মাসিক হোক অথবা সন্তান হওয়ার কারণে হোক সব অবস্থায়ই আহলিয়ার সাথে একান্তে অবস্থান করা হারাম।
মাসয়ালা: মাসিক মাজুরতা ও সন্তান হওয়ার কারণে মাজুরতা অবস্থায় আহলিয়ার হাতের পানি পাক; একত্রে খাওয়া বা এক গ্লাসের পানি পান করা বা এক সঙ্গে ভাত খাওয়া বা বুছা দেয়া বা কাপড়ের উপর দিয়ে আলিঙ্গন করা, এক বিছানায় শয়ন করা নাজায়িয নয়, বরং নাজায়িয মনে করা গুনাহ। এ অবস্থায় পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ তিলাওয়াত করা নাজায়িয কিন্তু পবিত্র কালিমা শরীফ বা পবিত্র দুরূদ শরীফ পড়া, মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করা নাজায়িয নয়।
মাসয়ালা: ঘুম হতে উঠে যদি পুরুষ তার লজ্জাস্থানকে উত্তেজিত অবস্থায় পায় এবং ইহতিলাম (স্বপ্নদোষ) না হয়ে থাকে শুধু পুরুষের লজ্জাস্থানের অগ্রভাগে কিছু মজি পাওয়া যায়, কাপড়ে বা শরীরে কোনো দাগ বা ভিজা না পাওয়া যায়, তবে গোসল ফরয হবে না। আর যদি কাপড়ে বা শরীরে দাগ বা ভিজা পায়, তবে গোসল ফরয হবে।
মাসয়ালা: আহাল-আহলিয়া উভয়ে এক পরিষ্কার বিছানায় শুয়েছিলো, ঘুম হতে উঠে বিছানায় দাগ দেখতে পেলো, কিন্তু কারো ইহ্তিলামের (স্বপ্নদোষের) কথা মনে নেই বা সেটা কার মনী তাও ঠিক করতে পারে না, এমতাবস্থায় উভয়ের গোসল করতে হবে।
মাসয়ালা: ফরয গোসল আদায়কালে পর্দার সাথে গোসল করতে হবে। পুরুষ সমাজে- পুরুষ এবং মহিলা সমাজে- মহিলা গোসল করবে। পুরুষ সমাজে-মহিলা বা মহিলা সমাজে-পুরুষ বেপর্দা অবস্থায় গোসল করবে না।
কেননা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَإِذَا اغْتَسَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْتَتِرْ.
অর্থ: অতএব তোমাদের কেউ যখন গোসল করবে, তখন সে যেন পর্দা করে। (নাসায়ী শরীফ: ৪০৬)
সকলের কর্তব্য হচ্ছে, উপরোক্ত সকল নিয়ম-কানুন মেনে গোসল করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক অনুযায়ী গোসল করার এবং সর্বপ্রকার আমল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তাইয়াম্মুম করার খাছ সুন্নতী তারতীব ও মাসয়ালা-মাসায়িল (৩)
১৩ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেল
১৩ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
তাইয়াম্মুম করার খাছ সুন্নতী তারতীব ও মাসয়ালা-মাসায়িল (২)
১২ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘নাবীয’
১২ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাইয়াম্মুম করার খাছ সুন্নতী তারতীব ও মাসয়ালা-মাসায়িল (১)
১১ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাদ্য ‘মাশরুম’
১১ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন- “সুন্নতী চামড়ার মোজা”
১০ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
গোসল করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (৪)
০৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
গোসল করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (৩)
০৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
গোসল করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (২)
০৭ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গোসল করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (১)
০৬ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (২)
০৫ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)