বুলন্দী শান মুবারক
ছহিবু ক্বাবা ক্বওসাইনি আও আদ্না, ছহিবুল মি’রাজ, সাইয়্যিদুছ ছাক্বালাইন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি বিশেষ ঘটনা মুবারক ও পবিত্র মু’জিযা শরীফ
, ১২ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৭ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১১ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে এক সফরে ছিলাম।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সফর শুরু করলেন। লোকেরা উনাকে পিপাসার কষ্টের কথা জানালেন। তিনি সেখানেই অবতরণ করলেন, অতঃপর এক ব্যক্তিকে ডাকলেন। (রাবী) হযরত আবু রজা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ঐ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু হযরত আওফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তা উল্লেখ করেননি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকেও ডাকলেন। তারপর উভয়কেই তিনি পানি খুঁজে আনতে বললেন। উনারা পানির সন্ধানে বের হলেন। উনারা পথে এক মহিলাকে দুই মশক পানি উটের উপর করে নিতে দেখলেন। উনারা জিজ্ঞেস করলেন পানি কোথায়? তিনি বললেন, গতকাল এমন সময়ে আমি পানির নিকটে ছিলাম। আমার গোত্র পিছনে রয়ে গেছে। উনারা বললেন, এখন আমাদের সঙ্গে চলুন। মহিলা বললেন, কোথায়? উনারা বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে। মহিলা পুনরায় বললেন, উনার কাছে যাকে সাবিঈ (ধর্মত্যাগী) বলা হয়? নাঊযুবিল্লাহ! উনারা বললেন, হ্যাঁ, আপনি উনার কাছে চলুন। উনারা মহিলাকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আসলেন এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। হযরত ইমরান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, লোকজন মহিলাটিকে উনার উট থেকে নামালেন।
তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি পাত্র আনতে বললেন, এবং উভয় মশকের মুখ খুলে তা থেকে কিছু পানি ঢাললেন এবং সেগুলোর মুখ বন্ধ করে দিলেন। তারপর সেই মশকের নীচের মুখ খুলে দিয়ে সমস্ত সৈন্যবাহিনীকে পানি পান করার এবং উনাদের বাহনগুলিকে পানি পান করানোর নির্দেশ মুবারক দিলেন। ইচ্ছেমতো উনারা সবাই পানি পান করলেন এবং সমস্ত প্রাণীকে পানি পান করালেন। অবশেষে একজনের গোসলের দরকার ছিল, উনাকেও এক পাত্র পানি দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এ পানি নিয়ে যান এবং গোসল করুন। ঐ মহিলা দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছিলেন যে উনার পানির প্রতি কী ব্যবহার করা হচ্ছে। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! যখন উনার থেকে পানি নেয়া শেষ হলো তখন আমাদের মনে হলো, মশকগুলো পূর্বাপেক্ষাও অধিক ভর্তি হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ!
তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এ মহিলার জন্য আপনারা কিছু হাদিয়া একত্র করুন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সেই মহিলার জন্য আজওয়া (উন্নত মানের খেজুর), আটা ও ছাতু এনে একত্র করতে লাগলেন। যখন উনারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্য একত্রিত করলেন, তখন তা একসাথে করে কাপড়ে বেঁধে মহিলাকে উটের উপর সওয়ার করালেন এবং উনার সামনে কাপড়ে বাঁধা পুটলিটি রেখে দিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তুমি তো দেখতে পেরেছ যে, আমরা তোমার পানি মোটেই কম করিনি। বরং মহান আল্লাহ পাক তিনিই আমাদের পানি পান করিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর মহিলা উনার পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন। উনার বেশ দেরী হয়েছিল। পরিবারস্থ লোকজন দেরী করার কারণ জিজ্ঞেস করলো। উত্তরে তিনি বললেন, একটা আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছে! দুজন লোকের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। উনারা আমাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর সেখানে দেখা সমস্ত ঘটনা তাদের শুনালেন। অতঃপর তিনি এই বলে মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে আসমান ও যমীনের দিকে ইশারা করে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তিনি বাস্তবিকই মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!
এ ঘটনার পর মুসলমানগণ ঐ মহিলার গোত্রের আশ পাশের সমস্ত মুশরিকদের উপর হামলা করতেন, কিন্তু মহিলার সাথে সম্পর্কযুক্ত গোত্রের কোনো ক্ষতি করতেন না। একদিন মহিলা নিজের গোত্রকে ডেকে বললেন, আমার মনে হয় উনারা ইচ্ছা করেই আমাদের নিষ্কৃতি দিচ্ছেন। এসব দেখে কি তোমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি আকৃষ্ট হবে না? তখন উনারা সবাই মহিলাটির কথা মেনে নিলেন এবং মহিলাসহ সকলেই সম্মানিত দ্বীন ইসলামে দাখিল হয়ে মুসলমান হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ ১ম খ- বাবুচ্ছয়ীদুত্তয়্যিবু অযুউল মুসলিমীন ইয়াকফিহি মিনাল মায়ি)
-আল্লামা হাফিযুল হাদীছ মুহম্মদ ফযলুল হক।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












