ছহিবে নিসাব প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য পবিত্র কুরবানী দেয়া ওয়াজিব (৬)
, ০৪ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০২ আউওয়াল, ১৩৯৩ শামসী সন , ০১ জুন, ২০২৫ খ্রি:, ১৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বিগত পর্বসমূহের দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে যে বিষয়গুলো প্রমাণিত হলো তার সারসংক্ষেপ:
১. মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরবানী করতে আদেশ মুবারক করেছেন। আর মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক পালন করা আবশ্যক। তাই সম্মানিত শরীয়তে সামর্থ্যবান সবার জন্য পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব করা হয়েছে।
২. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক পরিবারকে পবিত্র কুরবানী মুবারক করার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন। উনার আদেশ মুবারক পালন করাও আবশ্যক। তাই সম্মানিত শরীয়তে সামর্থ্যবান সবার জন্য পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব করা হয়েছে।
৩. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মদীনা শরীফ-এ অবস্থান মুবারককালীন প্রতি বছরই পবিত্র কুরবানী করেছেন। আর উনার নিরবিচ্ছিন্ন আমল মুবারক দ্বারাও ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়। সুবহানাল্লাহ!
৪. সামর্থ্য থাকা সত্বেও যারা পবিত্র কুরবানী করবেনা, তাদেরকে পবিত্র ঈদগাহে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! অর্থাৎ যাদের সামর্থ্য আছে তাদেরকে অবশ্যই পবিত্র কুরবানী করতে হবে। অন্যথায় তার ঈদগাহে যেয়ে নামায পড়ার কোনই প্রয়োজন নেই। এই সতর্কবাণী মুবারক দ্বারাও পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব প্রমাণিত হয়।
৫. ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়া হচ্ছে, সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব।
৬. হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এবং হযরত আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অর্থাৎ উনাদের দুটি ফতওয়ার মধ্যে মূল ফতওয়া হচ্ছে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব।
৭. এমন কি বর্তমানে যারা পবিত্র কুরবানীকে ওয়াজিব মানতে নারাজ, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পবিত্র কুরবানী না করলে কোনো গুনাহ হবেনা। না‘ঊযুবিল্লাহ! যারা এসব বক্তব্য দিয়ে থাকে। সেই সব লা-মাযহাবীদের গুরু ইবনে তাইমিয়ারও ফতওয়া হচ্ছে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব এবং পবিত্র কুরবানী হচ্ছে ‘শিয়ারুল ইসলাম’।
কাজেই উল্লেখিত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো- ছহিবে নিসাব বা সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব। কেউ যদি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পবিত্র কুরবানী না করে তাহলে সে অবশ্যই ওয়াজিব তরক করার কারণে গুনাহগার হবে। এবং কেউ যদি পবিত্র কুরবানীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তাহলে সে ঈমান হারা হবে, মুরতাদ হবে। কেউ যদি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বে পবিত্র কুরবানী না করে, সেই টাকা দান করে দেয় তাহলে সেও ওয়াজিব তরক করার কারণে গুনাহগার হবে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
উল্লেখ্য বর্তমানে কিছু লোক বের হয়েছে, যারা ছহীহ হাদীছের নামে প্রচার করে থাকে যে, কুরবানী একটি সাধারণ ইবাদত, করলে ছাওয়াব আছে, না করলে কোনো গুনাহ হবে না। না‘ঊযুবিল্লাহ! এরা মূলত দাজ্জালে কায্যাব, সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমল ধ্বংস করাই হচ্ছে এদের কাজ। এদের সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্র্ণিত রয়েছেন,
عَنْ حَضْرَتْ أبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَكُوْنُ فِيْ اٰخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُوْنَ كَذَّبُوْنَ يَأتُوْنَكُمْ مِنَ الأحَادِيْثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أنْتُمْ وَلاَ أبَائُكُمْ فَاِيَّاكُمْ وَ اِيَّاهُمْ لَا يُضِلُّوْنَكُمْ وَلاَ يُفْتِنُوْنَكُمْ
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, শেষ যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব কথা-বার্তা বলবে, যা না তোমরা শুনেছ আর না তোমাদের বাপ-দাদারা শুনেছে। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে বেঁচে থাকবে এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। যাতে তারা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে না পারে এবং ফিতনায় না ফেলতে পারে, বিপথগামী না করতে পারে। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ হাদীছ শরীফ নং ১৫৪)
যারা পবিত্র কুরবানী উনার বিরুদ্ধে বলে থাকে তারাই মূলত এই হাদীছ শরীফ উনাদের পরিপূর্ণ মিছদাক্ব। এরাই হচ্ছে, মূল দাজ্জালের চেলা অর্থাৎ মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। এদের থেকে সাবধান থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে বেশি বেশি পবিত্র কুরবানী করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের খাছ রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












