স্থাপত্য-নিদর্শন
ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদ (১)
, ২০ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ৩০ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৯ মে, ২০২৪ খ্রি:, ১৫ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) স্থাপত্য নিদর্শন

ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদের অবস্থান মিশরের রাজধানী কায়রোতে। এই ঐতিহাসিক মসজিদটির নির্মাণকাল ৩৫ হিজরীতে। যা আফ্রিকা মহাদেশে নির্মিত প্রথমদিকের মসজিদ। এই ঐতিহাসিক মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার সঙ্গী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। এই ঐতিহাসিক মসজিদটি ফুসতাত মসজিদ নামেও পরিচিত।
ফুসতাত (আরবী শব্দ: الفسطاط, al-Fustat)। ফুসতাত বর্তমান মিশরের একটি প্রাচীন নগরী। পবিত্র দ্বীন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে বিশিষ্ট ছাহাবী ও সেনাপতি সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মিশরে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আলো ছড়িয়ে দিতে ও কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদের নেতৃত্বে ছিলেন। হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে ৬৪১ খৃ: মুসলমানদের মিশর বিজয়ের পর রাজধানী স্থাপনের উদ্দেশ্যে নীলনদের তীরবর্তী স্থানে এই শহরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রায় দুই শত বছর এটি মিশরের রাজধানী ছিল। এটি এখন মাসর্ আল-আতিক্বাহ নামীয় পুরাতন কায়রো নগরীর অন্তর্ভুক্ত একটি এলাকা।
ফুসতাত নাম বুৎপত্তি:
একটি ঘটনা থেকে ফুসতাতের নাম উদ্ভব হয়। মিশর বিজয়ের সময় সেনাপতি হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আলেকজান্দ্রিয়া যাত্রা করার আগে একটি কবুতর উনার তাবুতে ডিম পাড়ে। এসময় রোমান দুর্গের উত্তরে তিনি শিবির স্থাপন করেছিলেন। একারণে হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁবুটিকে অক্ষত রাখার নির্দেশ দেন এবং জিহাদের জন্য রওয়ানা হন। জিহাদে বিজয়ের পর তিনি মুসলমান সৈনিকদেরকে উনার তাবুর চারপাশে তাঁবু স্থাপনের নির্দেশ দেন এবং নতুন রাজধানীর নাম দেন মিশর আল-ফুসতাত বা ফুসতাত মিশর। যথার্থ অনুবাদ না হলেও একে “তাবুর শহর” বলে ডাকা হয়।
রাজধানী ফুসতাতের পরিচিতি:
হাজার বছর ধরে বিভিন্ন শাসকদের শাসনামলে মিশরের রাজধানী থিবস ও মেমফিসসহ বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তরিত হয়েছে। ৩৩১ খৃ: পূর্বে আলেকজান্ডার মিশর জয় করার পর ভূমধ্যসাগরের উপকূলে তার নামে নামকরণ করা আলেকজান্দ্রিয়া নতুন রাজধানী হয়। প্রায় এক হাজার বছর পর্যন্ত এই অবস্থা অক্ষুণœ থাকে। ৬৪১ খৃ: পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার খলিফা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে মুসলমানরা এই অঞ্চল বিজয় করেন। তিনি একটি নতুন রাজধানী স্থাপন করার জন্য সেনাপতি সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নীলনদের পূর্ব তীরে নতুন রাজধানী স্থাপন করার জন্য নির্দেশ মুবারক করেন।
বর্তমানে ফুসতাত নগরীর রাজধানী যুগের অল্প কিছু দালান এখনো টিকে রয়েছে। প্রতœতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে এখানকার অনেক ভূগর্ভস্থ নিদর্শন উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক নিদর্শন কায়রোর ইসলামী শিল্প জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। মিশর ও আফ্রিকায় নির্মিত প্রথম মসজিদ “ফুসতাত মসজিদ” এখানে অবস্থিত। ফুসতাত মসজিদ “সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস মসজিদ” নামেও পরিচিত।
ফাতেমীয় শাসনামলে ফুসতাত সিরামিক পণ্য উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। সিরামিকের অনেক পুরাতন স্থপতি ফুসতাতে পাওয়া গেছে।
ফুসতাত তার সমৃদ্ধি, ছায়াময় রাস্তা, বাগান ও বাজারের জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে উঠে। এখানে বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ভবন ছিল। এর মধ্যে কিছু ভবন সাত তলা পর্যন্ত উঁচু ছিল এবং এসব ভবনে কয়েকশত মানুষ থাকতে পারত। অন্যদিকে ১১শ শতাব্দীর শুরুর দিকে পারস্যের পর্যটক নাসির খসরু কিছু ভবন ১৪ তলা পর্যন্ত উঁচু বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এসব ভবনের ছাদে বাগান ছিল বলে তিনি লিখেছেন।
ফুসতাত শহরের বাজারে বিক্রি হতো নাসির খসরু এমন সুন্দর ও মনোরম পণ্যের কথা লিখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মাটি ও স্ফুটিকের তৈরি পণ্য এবং নানারকম ফুল ও ফল। শীতকালেও এসব ফুল ও ফল পাওয়া যেত। ৯৭৫ থেকে ১০৭৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ফুসতাত ছিল ইসলামী শিল্প ও স্ফুটিক উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী শহর। একটি সূত্র অনুযায়ী ফুসতাতের দৈনিক করের পরিমাণ ছিলো বর্তমান মূল্যমানে প্রায় ১,৫০,০০০ মার্কিন ডলার ছিল। আধুনিক প্রতœতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে ফুসতাতে স্পেন, চীন ও ভিয়েতনামের মত দূরবর্তী স্থানের শৈল্পিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। খননের মাধ্যমে বসতবাড়ি ও রাস্তার জটিল পরিকল্পনা কাঠামো খুঁজে পাওয়া গেছে। (চলবে)
-মুহম্মদ নাঈম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুসলমানদের শিল্পকলার এক অনন্য নিদর্শন ইসলামী মৃৎপাত্র
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দিল্লীর কুতুব মিনার গড়ে উঠেছিলো যে ঐতিহাসিক মসজিদকে ঘিরে
০৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমানদের শাসনামলে কাঠ শিল্প
২৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদের নগরী ঢাকার ঐতিহাসিক ৪টি মসজিদ
২৬ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঐতিহ্যবাহী গোর-এ-শহীদ ঈদগাহ ময়দান
২১ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক বদর আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরগাহ (২)
১৪ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক বদর আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরগাহ (১)
০৭ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
২০০ বছরের প্রাণ ৪০০ মণ আম!
০১ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বন্দরের ঐতিহাসিক নিদর্শন বাবা সালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ
৩০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আরবের লিপিশিল্প: আরবি লিপিশিল্পে ব্যবহৃত উপকরণ, কলাকৌশল ও বৈশিষ্ট্য
২১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুঘল আমলের নিরাপত্তা নিদর্শন হাজীগঞ্জ দুর্গ
০৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রাচীন মসজিদের অজানা ইতিহাস
০৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)