স্থাপত্য-নিদর্শন
ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদ (৪)
, ২৩ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০২ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ৩০ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ১৬ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) স্থাপত্য নিদর্শন
আব্দুল আযীয ইবনে মারওয়ানের নেতৃত্বে মসজিদ পুনঃনির্মাণ ও সম্প্রসারণ:
৬৯৬-৯৭ খৃ: আব্দুল আযীয ইবনে মারওয়ান, আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নির্মিত এই মসজিদের পুনঃনির্মাণ ও সম্প্রসারণ করেন। (অধিকাংশ আরবী ঐতিহাসিকগণের মতে আব্দুল-আযীয ইবনে মারওয়ান পুনঃনির্মাণ ও সম্প্রসারণ এই তারিখে কার্যকরী হয়) এই মসজিদের সম্মুখে ‘রাহাব’ নির্মাণ করেছিলেন আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উনার সম্প্রসারণের ফলে তা এখন মসজিদের অভ্যন্তরীণ অংশে পরিণত হয়। মসজিদের সম্প্রসারণ পশ্চিম দিকেও (অর্থাৎ দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে) হয়েছিলো, তবে পূর্বদিকে (অর্থাৎ দক্ষিন-পশ্চিম দিকে) আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাসভবন ছিলো।
বাইতুল মাল সংযোজন:
ফুসতাত মসজিদের ৭১৮ খৃ: বাইতুল মাল নির্মাণ করা হয়ের্ছিলো। এই বাইতুল মাল কে নির্মাণ করেছিলেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে এটি মিশরের গভর্ণর কুররাহ ইবনে শারীক আবার কারো মতে মিশরের কর পরিচালক উসামা ইবনে যায়েদ আত-তনূখী নির্মাণ করেছিলেন। এই বাইতুল মাল মসজিদের সম্মুখে স্তম্ভের উপর নির্মিত হয়েছিল এবং এর মধ্যে মই দ্বারা উঠানামা করা হতো বলে জানা যায়। ইবনে রুস্তার বর্ণনা অনুযায়ী এটা দামেস্কে মসজিদের বাইতুল মালের ন্যায় নির্মিত হয়েছিল। বাইতুল মালে ৯৮৯ খৃ: একটি ঝর্ণা সংযোজন করা হয়েছিলো।
৫৬৪ হিজরীতে খৃষ্টানরা যখন বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফসহ পার্শ্ববর্তী মিশরের মুসলিম অধ্যুষিত বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা করলো, তখন তারা যে জঘন্য কর্মটি সবখানে করতে লাগলো, তা ছিল বেছে বেছে মুসলমানদের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ঐতিহ্যবাহী ইমারতগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিত। নাউযুবিল্লাহ! সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা মিশরের ঐতিহ্যবাহী ফুসতাত নগরীও আগুনে ভষ্মিভূত করে, যাতে মসজিদে আমর ইবনুল আসও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতঃপর সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিরোচিত প্রতিরোধের মুখে খৃষ্টানরা যখন শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে পালিয়ে গেল এবং মিশর পুনরায় ইসলামী সালতানাতের অন্তর্ভুক্ত হলো। তখন সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মসজিদে হযরত আমর ইবনুল আস উনার পুনঃনির্মাণের নির্দেশ দেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয় ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার স্মৃতি বিজড়িত বিধায় সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এটি পুণঃনির্মাণে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছেন।
ইতিহাস তথা কালের পরিক্রমায় বিশ্বখ্যাত অনেক মনীষী ও ইসলামী চিন্তাবিদ এই মসজিদে খতীব ও ইমামের দায়িত্ব পালন করেছেন। উনাদের কেউ কেউ আবার তাফসীর ও হাদীছ শরীফের দরস দান করেছেন এই মসজিদে বসে তেমনি উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন-
১. শাফেয়ী মাযহাবের প্রবক্তা ও যুগশ্রেষ্ঠ ফিকাহ্বিদ হযরত ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহম্মদ ইবনে ইদরীস আল শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
২. প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত লাইস ইবনে সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি।
৩. হযরত আবু তাহের আস সালাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
৪. হযরত ইয ইবনে আব্দুস সালাম রহমতুল্লাহি আলাইহি।
৫. বিখ্যাত সীরাত গ্রন্থ ইবনে হিশামের রচয়িতা ইমাম আবু মুহম্মদ আব্দুল মালিক ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি।
৬. শায়েখ মুহম্মদ আল গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
৭. শায়েখ আবু ইসহাক আল হুয়াইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
৮. শায়েখ ইয়াসের আল বুরহামী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
৯. শায়েখ সাইদ আব্দুল আযীম রহমতুল্লাহি আলাইহি
১০. শায়েখ আব্দুর রহমান আব্দুল খালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি। (চলবে)
-মুহম্মদ নাঈম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খেজুরের পাতায় লিখা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
অনন্য নিদর্শন সভ্যতার স্বর্ণযুগে গ্রন্থবাঁধাই (৫)
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অনন্য নিদর্শন সভ্যতার স্বর্ণযুগে গ্রন্থবাঁধাই (৪)
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অনন্য স্থাপত্যের নজির বাংলাদেশে: মসজিদে নববী শরীফ উনার হুবহু নকশায় রাজারবাগ শরীফে সুন্নতী জামে মসজিদ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ মহাসম্মানিত ১২ই শরীফে
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
অনন্য নিদর্শন সভ্যতার স্বর্ণযুগে গ্রন্থবাঁধাই (৩)
০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন খাগড়াছড়ির সবচেয়ে পুরনো ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদ
১৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অনন্য নিদর্শন সভ্যতার স্বর্ণযুগে গ্রন্থবাঁধাই (২)
১৩ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন ঐতিহাসিক চন্দনপুরা তাজ মসজিদ (২)
১১ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন ঐতিহাসিক চন্দনপুরা তাজ মসজিদ (১)
১০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদ (৫)
০৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বাবা আদম শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ ও মসজিদ
২৭ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইউরোপে মুসলিম সভ্যতার অন্যন্য এক নিদর্শন “বিবি-হায়েবাত মসজিদ”
২৪ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)