ছাহিবু ফাতহিম মুবীন, রফিকু ছাহিবুল কুদরত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আত্মত্যাগ
, ১৬ মে, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
لَايُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ نَفْسِهِ وَمَالِهِ وَوَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ.
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার কছম! যাঁর কুদরতী হাত মুবারকে আমার নূরুল আমর মুবারক অর্থাৎ প্রাণ মুবারক। তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের জান-মাল, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, ধন-সম্পদ থেকে (সমস্ত কিছু থেকে) আমাকে বেশী মুহব্বত করতে না পারবে। ” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার হাক্বীক্বী মিছদাক হলেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। উনারা উনাদের জান-মাল, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি অর্থাৎ সমস্ত কিছু থেকে বেশী মুহব্বত করতেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে। একদিন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফে এক ব্যক্তি এসে হাযির হলেন এবং বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কিছুদিন পর আমার মেয়ের বিবাহ কিন্তু আমি অনেক গরীব, আমার মেয়েকে বিবাহ দেয়ার মত আমার কোন সামর্থ্য নেই। দয়া করে আপনি আমাকে কিছু সাহায্য করুন। ”
যখন সেই ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, “আপনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কাছে গিয়ে আমার কথা বলবেন, আমি আপনাকে পাঠিয়েছি। তিনি যেন আপনাকে সাহায্য করেন। ” তখন সেই ব্যক্তি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকটে আসলেন। এসে দেখতে পেলেন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার এক ব্যবসার শরীকদারের কাছ থেকে এক পয়সার হিসাব বুঝে নিচ্ছেন।
তখন সেই ব্যক্তি মনে মনে চিন্তা করলেন, যিনি এক পয়সার হিসাব নিতে পারেন তিনি আমাকে কিভাবে সাহায্য করবেন? এই চিন্তা করে তিনি ফেরত আসলেন দরবারে নববী শরীফে। এসে বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমিতো উনার নিকট গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম তিনি কোন এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক পয়সার হিসাব বুঝে নিচ্ছেন। যিনি এক পয়সার হিসাব নিতে পারেন তিনি কিভাবে আমাকে সহযোগীতা করবেন?”
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে ব্যক্তি! আপনি উনার কাছে গিয়ে আমার কথা বলুন, তাহলে তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন। ” তখন সেই ব্যক্তি আবার সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকটে হাযির হলেন এবং বললেন, “হে জলীলুল ক্বদর ছাহাবী হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম! আমাকে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। আপনি যেন আমাকে কিছু সাহায্য করেন। ”
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “আপনি এক কাজ করুন। আপনি অমুক স্থানে গিয়ে দাঁড়ান, সেখানে কিছুক্ষণ পর দেখতে পাবেন আমার একটি উটের কাফেলা আসছে; এবং সকল উটের পিঠের উপর বোঝাই করা সম্পদ রয়েছে। সেখান থেকে আপনার যতটুকু ইচ্ছে ততটুকু সম্পদ আপনি নিয়ে যান। ” সে ব্যক্তি হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কথা অনুযায়ী সেখানে গিয়ে দাঁড়ালেন। কিছুক্ষণ পরে দেখা গেলো বিরাট এক উটের কাফেলা আসছে এবং সমস্ত উটের পিঠে বোঝাই করা সম্পদ রয়েছে।
উটের বিশাল কাফেলাটি সম্মুখে আসলে সেই ব্যক্তি হাত উঁচু করে উটের কাফেলাটিকে থামিয়ে দিলেন। তখন সেই কাফেলার যিনি সর্দার ছিলেন তিনি বললেন, “হে ব্যক্তি! আপনি কেন উটের কাফেলাকে থামিয়ে দিলেন। ” তখন সেই ব্যক্তি জবাব দিলেন, “হে কাফেলার সর্দার! আমাকে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পাঠিয়েছেন, এই উটের কাফেলা থেকে আমার যে উটটি পছন্দ হয় সে উটটিই যেন নিয়ে নেই। ” এ কথা শুনে কাফেলার সর্দার বললেন, “ঠিক আছে। আপনার যে উটটি পছন্দ হয় সে উটটি নিন। ” তখন সে ব্যক্তি সবার সামনের সবচেয়ে সুন্দর এবং সব চাইতে বেশী সম্পদ বোঝাই করা উটটিকে পছন্দ করলেন।
তখন সেই কাফেলার সর্দার বললেন, “হে ব্যক্তি! আপনাকে এই উটটি দেয়া যাবে না। কারণ হলো, উটের নিয়ম হচ্ছে, সামনের উট যেদিকে যায় পিছনের উটগুলোও তার পিছনে পিছনে সেদিকে যায়। ” সেজন্য কাফেলার সর্দার সে ব্যক্তিকে সামনের উটটিকে দিতে চাচ্ছেন না। তখন দু’জনে মিলে ফায়সালার জন্য হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কাছে গিয়ে হাযির হলেন। কাফেলার সর্দার বললেন, “হে হযরত উছমান আলাইহিস সালাম! এ ব্যক্তি আমাদের কাফেলার প্রথম উটটিকে পছন্দ করেছেন। এখন যদি এ ব্যক্তিকে সেই উটটি দিয়ে দেয়া হয় তাহলে সমস্ত উট এবং সমস্ত সম্পদও চলে যাবে। ”
তখন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার চেহারা মুবারক লাল হয়ে গেলো। তিনি বললেন, “হে কাফেলার সর্দার! এই ব্যক্তিকে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার কাছে পাঠিয়েছেন। ” কাজেই এ ব্যক্তি তো শুধু আমার উট এবং সম্পদ চেয়েছে। সে যদি আমাকেও চায় তাহলে আমাকেও তার সঙ্গে চলে যেতে হবে। ” সুবহানাল্লাহ!
তখন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নির্দেশে সে ব্যক্তি কাফেলার এক হাজার উট খাদ্য শষ্যসহ সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!
কি নজীরবিহীন ত্যাগ!!!
কাজেই সমস্ত কিছু কুরবানী করার বিনিময়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা লাভ করেছেন মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি মুবারক। সেই সন্তুষ্টি মুবারক পেতে হলে আমাদেরকেও সবকিছু কুরবানী করে দিতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












