পবিত্র হজ্জ ও পবিত্র উমরা সম্পর্কে-
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৮)
, ১৭ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৮ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসে পবিত্র কুরবানী ঈদের নামায পড়তে হবে, পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাসে পবিত্র রোযার ঈদের নামায পড়তে হবে, পবিত্র তারাবীহর নামায পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে পড়তে হবে। কিন্তু সময়টা সূর্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। বিশেষ করে-
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْـحَرْ
পবিত্র নামায আদায় করো, পবিত্র কুরবানী করো। যিনি খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক ও রেযামন্দী মুবারকের জন্য। পবিত্র কুরবানীর ঈদ, পবিত্র রোযার ঈদ। এই পবিত্র কুরবানীর ঈদ সম্পর্কে বলা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ نَافِعٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ أَنَّ عَبْدَ اللّٰهِ بْنَ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ كَانَ يَقُوْلُ الْأَضْحٰى يَوْمَانِ بَعْدَ يَوْمِ الأَضْحٰى.
হযরত নাফে’ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, পবিত্র কুরবানীর ঈদ হচ্ছে পবিত্র কুরবানীর দিন এরপর আরো দু’ দিন। দশ, এগারো, বারো।
এর মধ্যে নামায পড়তে হবে, পবিত্র ঈদুল আদ্বহার নামায। এরপর পবিত্র কুরবানী করতে হবে। এখানে আগে কেউ যদি পবিত্র কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী হবে না। এরপর নামায পড়লেও সেটা হবে না।
কাজেই চাঁদের সাথে যেমন সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তদ্রƒপ সূর্যের সাথেও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। পবিত্র হজ্জের প্রত্যেকটা বিষয় যেমন, পবিত্র কুরবানীর বিষয়গুলিও তেমন। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব করে দিয়েছেন।
يَا اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّ عَلٰى كُلِّ اَهْلِ بَيْتٍ فِـيْ كُلِّ عَامٍ اُضْحِيَّةٌ
হে মানুষেরা! জেনে রাখো, প্রত্যেক যারা আহলে বাইত তথা যারা ছাহিবে নিসাব রয়েছে প্রত্যেকের জন্য বৎসরে একবার পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব।
এখন এই পবিত্র কুরবানীর বিষয়টা তথা মাসটা হচ্ছে, চাঁদের সাথে আর সময়টা হচ্ছে সূর্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। হজ্জের বিষয়গুলি ঠিক একই রকম। মাসটা হচ্ছে চাঁদের সাথে, কিন্তু আমলগুলি হচ্ছে সূর্যের সাথে। এখন উক্বূফে আরাফাহ করবে। কখন করবে? এটা নয় তারিখ সূর্য ঢলার পর থেকে দশ তারিখ ছুবহি ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। এখন এর আগে পরে কেউ যদি করে তাহলে কিন্তু পবিত্র হজ্জ হবে না। হজ্জের তিনটা ফরয রয়েছে, ইহরাম বাঁধা, উকূফে আরাফাহ, তাওয়াফে যিয়ারত। এই ফরযের একটা বাদ গেলে তার হজ্জ আদায় হবে না। এখন তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উকূফে আরাফাহ। এখন দেখা যাচ্ছে, সউদী ওহাবী সরকার এরা কিন্তু চাঁদ আগেই গণনা করে। আমরা কিন্তু সেটা প্রতি মাসে দৈনিক আল ইহসান শরীফে ব্যানার হেডিং দিয়ে থাকি। এ বৎসরেও তারা চাঁদ নিয়ে প্রতারণা করেছে। এরা চাঁদ না দেখেই ঈদ করে ফেলেছে। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ শেষ করে দিয়েছে। পবিত্র রমাদ্বান শরীফের শুরুতে তারা সেটা করেছে, প্রতি মাসে তারা চাঁদ হেরফের করে থাকে। এখন উক্বূফে আরাফাহ হচ্ছে নয় তারিখ সূর্য ঢলার পর থেকে ১০ তারিখ ছুবহে ছাদিক্বের পূর্ব পর্যন্ত। এখন তারা যদি একদিন আগে নিয়ে যায় তাহলে সেটা আট তারিখ হয়ে যায়। আট তারিখে কেউ যদি উকূফে আরাফাহ করে তাহলে তার হজ্জ কখনই হবে না। এ বিষয়টা কিন্তু মুসলমানদেরকে ফিকির করতে হবে। আমরা যেটা বারবার বলি, তাক্বীদ করে থাকি। আসলে এরা পবিত্র হজ্জ নষ্ট করে থাকে। আসলে এরা আগে যেটা করতো সেটা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতে গিয়েছে, অন্যান্য আর্টিক্যালে গিয়েছে। কাফির মুশরিকগুলি এই সউদী ওহাবী সরকারের পূর্বে যা করতো সেটা হচ্ছে, কাফিলায় হামলা করতো যাতে মানুষ পবিত্র হজ্জ করতে আসতে ভয় পায়। কিন্তু এখনতো তারা কাফিলায় যায় না তাহলে সেটা কি করে করবে। তাই তারা চাঁদের তারিখ পরিবর্তন করে দেয়। এই কাজটা অর্থাৎ চাঁদ নিয়ে প্রতারণা করা শুরু হয়েছে সে সম্পর্কে আমরা তাহক্বীক্ব করেছি, আমাদের তাহক্বীক্ব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে ১৯৪৮ সাল থেকে তারা চাঁদের তারিখ পরিবর্তন করে যাচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ! ঐ বৎসরেই কিন্তু পরগাছা ইসরাইলকে তারা সেখানে বসিয়েছে এবং আমেরিকার যে সিআইএ গোয়েন্দা সংস্থা, সেটাও প্রতিষ্ঠিত করে সে বৎসর। তখন থেকে তারা চাঁদের তারিখ হেরফের করে যাচ্ছে। এর আগে তারা কাফিলাকে আক্রমণ করতো মানুষ যাতে হজ্জে আসতে না পারে। কাজেই চাঁদের বিষয় ইলম অর্জন করা ফরয। আর ইলম ব্যতীত পবিত্র হজ্জও হবে না, অন্যান্য ইবাদত বন্দেগীও হবে না। পবিত্র শবে বরাত যদি একদিন আগে করে সেটাতো হবে না। পবিত্র শবে ক্বদর যদি বিজোড় রাতে না করে জোড় রাতে করে সেটাও হবে না। পবিত্র পহেলা রজব মুবারকের গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে সেটা যদি সে একদিন আগে পালন করে তবে সে ফযীলত সে পাবে না। পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাতের গুরুত্ব রয়েছে সে যদি একদিন আগে করে সেটার সে ফযীলতও পাবে না। পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ সেটাও সে পাবে না। কাজেই চাঁদ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয় ইলম অর্জন করা ফরয। চাঁদ বিষয়ে ইলম অর্জন করা প্রত্যেকের জন্য ফরয। যদিও বলা হয়েছে যে, সমষ্টিগতভাবে এ বিষয় ইলম অর্জন করা ওয়াজিব ও ফরযে কিফায়া। তবে অনেক লোকের জন্য সেটা শেখা প্রয়োজন রয়েছে। এখন চাঁদের সম্পর্কে কোন ইলমই মানুষের নেই। যার জন্য এরা মুফতী মুহাদ্দিছ মুফাসসির শাইখুল হাদীছ অনেক কিছু দাবি করেও দেখা যাচ্ছে, এরা অজ্ঞ ও মুর্খ লোকের মতো কথা বলে থাকে। এরা বলে থাকে যে, চাঁদ সউদী আরবেই উঠবে। নাউযুবিল্লাহ! আবার কিছু লোক রয়েছে, যারা সারা পৃথিবীতে একদিনে সমস্ত ঈদ বা এই সমস্ত অনুষ্ঠান করতে চায়। নাউযুবিল্লাহ! এদেরও জ্ঞানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে তারাও অজ্ঞ ও মূর্খ। কারণ পৃথিবীতে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ১১, ১২, ১৩ ঘন্টা ১৪ ঘণ্টা পার্থক্য হতে পারে অবস্থাভেদে। এখন ১২ ঘন্টা যদি পার্থক্য ধরে নেই তাহলে যেখানে চাঁদ দেখলো সেখানে যদি তারা ঈদ করে ফেলে অর্থাৎ মাগরিবের সময় চাঁদ দেখে ঘোষণা দিলো। এখন সকাল বেলা আরেক দেশে পার্থক্য হচ্ছে ১২ ঘন্টা তাদেরতো ফজর হয়ে গেছে। এদের ফজর হয়ে গেছে তারা পবিত্র রোযা রাখতেছে। তাদেরতো রাত এখনও আসেনি। তাহলে দেখা যাচ্ছে, রাত ঘুরে এসে সকালে তারা ফজরের সময় ফজর বা ঈদের ওয়াক্তে ঈদের নামায পড়বে। অথবা কোন দেশ যদি রোযার ঈদের চাঁদ দেখে ঘোষণা দেয় মাগরিবের সময়। সে ঘোষণা অনুযায়ী কিছু লোক সকাল বেলা নাস্তা খেয়ে ফেলেছে তাহলে তারা রোযা রাখবে কখন। এটা ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক কখনো সম্ভব নয়। এরা বলে থাকে, পবিত্র জুমুয়ার দিনতো সবাই একসাথে পবিত্র জুমুয়ার নামায পড়ে থাকে। হ্যাঁ, পবিত্র জুমুয়ার দিনতো পড়েই। পহেলা শাওওয়াল শরীফেতো সবাই ঈদ করে থাকে। পহেলা রমাদ্বান শরীফ থেকে সবাই রোযা শুরু করে থাকে। এটা মনে রাখতে হবে। পবিত্র জুমুয়ার দিন সবাই পবিত্র জুমুয়ার নামায পড়ে, পবিত্র যুহরের ওয়াক্তে পবিত্র যুহরের নামায পড়ে ও পবিত্র জুমুয়ার নামায পড়ে, পবিত্র আছর ওয়াক্তে পবিত্র আছর নামায পড়ে। তবে সেটা ওয়াক্ত হতে হবে। সেই জিনিসটা বুঝতে হবে। তাদের চাঁদের বিষয় ইলম না থাকার কারণে তারা এগুলি বলে থাকে। এ বিয়য়টা অত্যন্ত জরুরী বিষয়। চাঁদের ইলম অর্জন করা ফরয।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত আব্বাদ ইবনে বিশর ইবনে ওয়াকাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (১)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর (২)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বেপর্দা সর্বপ্রকার অনিষ্ট ও ফিতনা-ফাসাদের মূল
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে মুসলমান যে বিজাতীয় সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখবে, তাদের সাথেই তার হাশর নশর হবে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করার অপরিসীম ফযীলত
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দুরূদ শরীফ দৈনিক বাদ ইশা ও বাদ ফজর ১০০ বার করে পাঠ করা সকলের জন্য আবশ্যক
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৫)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত- প্রাণীর ছবি হারাম
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












