তা’লীমুল মাসায়িল (২)
, ২৩ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২০ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৯ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ০৪ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
অজু করার তরতীব
অজু করার জন্য পবিত্র পাত্রে পাক-পবিত্র পানি নিতে হবে অথবা পাক-পবিত্র পানির স্থানে যেতে হবে। ক্বিবলামুখী হয়ে উঁচু জায়গায় বসতে হবে। পানির পাত্রের আকার যদি এরূপ হয় যে, পাত্রটি তুলে পানি ঢালা সম্ভব, তাহলে পানির পাত্রটি বাম পাশে রাখতে হবে। অন্যথায় পানির পাত্র বা উৎস ডান দিক থাকবে। অজু করার পূর্বে মিসওয়াক করা সুন্নত।
ক) মিসওয়াক করার নিয়ম :
মিসওয়াক করতে হলে ডান হাতের শাহাদাত, মধ্যমা এবং অনামিকা আঙ্গুল মিসওয়াকের উপরে রেখে এবং বৃদ্ধাঙ্গুল ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল মিসওয়াকের নিচে রেখে মিসওয়াকের মাঝামাঝি ধরতে হবে। মিসওয়াক করতে হলে ডান পাশের উপরের দাঁত, বাম পাশের উপরের দাঁত তারপর ডান পাশের নিচের দাঁত, তারপরে বাম পাশের নিচের দাঁত মিসওয়াক করতে হবে। অতঃপর উপরের ডান পাশের ভিতরে তারপর উপরে বাম পাশের ভিতরে, তারপর নিচের ডান পাশের ভিতরে, তারপর নিচের বাম পাশের ভিতরে ভালোভাবে মিসওয়াক করতে হবে। অতঃপর জিহ্বা পরিষ্কার করতে হবে। মিসওয়াক করার পর অজুর জন্য দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করতে হবে।
খ) দু’হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করার নিয়ম :
দু’হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা সুন্নত। প্রথমে মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু হয়ে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পাঠ করতঃ অজু শুরু করার দু’আ পাঠ করতে হবে। অতঃপর ডান হাতের তালুতে পানি ঢেলে উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ভালোভাবে ধৌত করতে হবে। নখের ভিতরও পানি পৌঁছাতে হবে, যাতে হাতের কোনো স্থানে শুষ্কতা না থাকে।
বাম হাতের আঙ্গুলগুলো ডান হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ করিয়ে এবং ডান হাতের আঙ্গুলগুলো বাম হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ করিয়ে আঙ্গুল খিলাল করতে হবে। অতঃপর কুলি করতে হবে।
গ) কুলি করার নিয়ম :
কুলি করা সুন্নত। অজু করার পূর্বে মিসওয়াক করা যেমন সুন্নত, তেমনি দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করার পর কুলি করার পূর্বে সংক্ষিপ্তকারে মিসওয়াক করাও সুন্নত। মিসওয়াক না থাকলে মিসওয়াকের বিকল্প স্বরূপ ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারাও মিসওয়াকের কাজ সেরে নেয়া যায়। তবে মিসওয়াক দ্বারা মিসওয়াক করা হোক বা ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করা হোক অর্থাৎ দাঁত পরিষ্কার করা হোক, উভয়ক্ষেত্রেই উপরে বর্ণিত মিসওয়াক করার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। মিসওয়াক করা শেষ হলে ডান হাত দ্বারা পানি নিয়ে গড়গড়ার সাথে তিনবার কুলি করতে হবে। তবে রোযাদার ব্যক্তি উনাদের জন্য গড়গড়ার সাথে কুলি করা নিষিদ্ধ। কুলি করার পর, নাকে পানি দিতে হবে।
ঘ) নাকে পানি দেয়ার নিয়ম :
নাকে পানি দেয়া সুন্নত। ডান হাত দ্বারা তিনবার নাকে পানি দিতে হবে। পানি দেয়ার পর প্রতিবারই বাম হাতের কনিষ্ঠা ও বৃদ্ধাঙ্গুলী দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে হবে। যাতে নাকের ভিতরে শুকনা বা আঠালো কোনো ময়লা না থকে। অতঃপর মুখম-ল ধৌত করতে হবে।
ঙ) মুখম-ল ধৌত করার নিয়ম :
অজুর ফরযের মধ্যে মুখম-ল ধৌত করা অন্যতম ফরয। মুখম-ল বলতে চুলের গোড়া বা চুল পয়দা হওয়ার স্থান হতে থুতনীর নিচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি হতে অপর কানের লতি পর্যন্ত বুঝায়। মুখম-ল ধৌত করা যেহেতু ফরয, সেহেতু খুব ভালোভাবে মুখম-ল তিনবার ধৌত করতে হবে। মুখম-ল ধৌত করার সময় মহিলাদেরকে কানের ও নাকের অলঙ্কার নাড়াচাড়া করে পানি পৌঁছাতে হবে। যাতে কোনো স্থান শুকনা না থাকে। দাড়িওয়ালা পুরুষদের দাড়ি খিলাল করতে হবে।
ঙ.১) দাড়ি খিলাল করার নিয়ম :
দাড়ি ঘন হলে খিলাল করা ফরয। আর দাড়ি পাতলা হলে খিলাল করা মুস্তাহাব। দাড়ি খিলাল করতে হলে ডান হাতে পানি নিয়ে দাড়িতে দিতে হবে। প্রথমে ডান গাল, তারপর থুতনীর নিচে, তারপরে বাম গালে পানি দিতে হবে। এভাবেই তিনবার পানি দিতে হবে। তবে দাড়ি অধিক ঘন হলে ঘন দাড়ির স্থানে তিনবারের অধিক বেজোড় সংখ্যকবার পানি দেয়া যেতে পারে। আর পানি দেয়ার পর প্রতিবারই ডান হাতের ভিতরাংশ দ্বারা দাড়ির গোড়াতে পানি পৌঁছানোর পাশাপাশি আঙ্গুলসমূহ স্বাভাবিক ফাঁক রেখে অগ্রভাগ দ্বারা দাড়ির গোড়া থেকে শুরু করে সামনের দিকে খিলাল করতে হবে।
এক্ষেত্রে আঙ্গুলসমূহের ভিতরাংশ নিচের দিকে থাকবে। (স্মরণীয় বাম হাত দিয়ে বা ডান হাতের পেট নিজের দিকে এবং পিঠ বাহির দিকে রেখে দাড়ি খিলাল করা সুন্নত উনার খিলাফ। ) দাড়ি খিলাল করার পর দুই হাত কুনই পর্যন্ত ধৌত করতে হবে।
চ) কনুই পর্যন্ত দুই হাত ধৌত করার নিয়ম :
অজুর মধ্যে কনুই পর্যন্ত দুই হাত ধৌত করা ফরয। প্রথমে ডান হাতে পানি নিয়ে আঙ্গুল হতে কনুইর দিকে পানি ঢেলে দিতে হবে। এরূপ তিনবার করতে হবে। কনুইর উপর চার আঙ্গুল পর্যন্ত ধৌত করা মুস্তাহাব। শরীরে তেল মাখানোর ন্যায় পানি ঘষে দিলে অজু হবে না। তবে শীতকাল বা শুষ্ক আবহাওয়ার সময় পানি প্রবাহিত করার পাশাপাশি বাম হাত দ্বারা ডান হাতকে ঘষে দিতে হবে। যেন একটি পশমও শুকনা না থাকে। অতঃপর ডানের ন্যায় বাম হাতও ধৌত করতে হবে। হাত ধৌত করার সময় আংটি, চুড়ি, বালা এবং অনুরূপ কিছু থাকলে তা ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে সর্বত্র পানি পৌঁছাতে হবে। দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করার পর মাথা মাসেহ করতে হবে।
ছ) মাথা মাসেহ করার নিয়ম :
মাথা এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা ফরয। আর মাথা সম্পূর্ণ মাসেহ করা সুন্নত। ভেজা হাত কোন অঙ্গের উপর সঞ্চালন করাকে মাসেহ বলে।
মাথা মাসেহ করতে হলে প্রথমে মাথার টুপি, পাগড়ী বা অন্য কোনো আবরণ থাকলে, তা খুলে ফেলতে হবে। মাথার আবরণ খোলার পর ডান হাতে ও বাম হাতে পানি নিয়ে ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলের মাথা বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলের মাথার সাথে, ডান হাতের অনামিকা আঙ্গুলের মাথার সাথে বাম হাতের অনামিকা আঙ্গুলের মাথার সাথে এবং ডান হাতের মধ্যমা আঙ্গুলের মাথা বাম হাতের মধ্যমা আঙ্গুলের মাথার সাথে আড়াআড়ি বা কোণাকোণি লাগাতে হবে। দুই হাতের শাহাদাত ও বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় উঁচু করে রাখতে হবে। এরূপ অবস্থায় তিন আঙ্গুল চুল পয়দা হওয়ার স্থান হতে মাথার পিছন দিক বা চুলের শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। দুই হাত মাথার পিছন দিকে নেয়ার সময় শুধুমাত্র তিন আঙ্গুল মাথার সাথে লাগবে, হাতের তালু মাথার সাথে লাগানো যাবেনা। অতপর দুই হাতের তালু মাথায় লাগিয়ে মাথার পিছন দিক হতে দুই হাত টেনে চুল পয়দা হওয়ার স্থান পর্যন্ত আনতে হবে। অতঃপর কান মাসেহ করতে হবে।
ছ. ১) কান মাসেহ করার নিয়ম :
কান মাসেহ করা সুন্নত। কান মাসেহ করার প্রথম নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে দুই হাতের শাহাদাত আঙ্গুলের মাথা দুই কানের লতি থেকে শুরু করে উপরের দিক হয়ে কানের প্যাচ ঘুরিয়ে কানের ছিদ্র বরাবর এসে থামবে। তারপর দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের পেট দিয়ে দুই কানের পিঠের দিকের লতি থেকে শুরু করে উপর দিকে শেষ পর্যন্ত মাসেহ করবে। অতঃপর দুই হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের মাথা দুই কানের ছিদ্রে প্রবেশ করাতে হবে।
কান মাসেহ করার দ্বিতীয় নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে দুই হাতের শাহাদাত আঙ্গুলের মাথা দুই কানের লতি থেকে শুরু করে উপরের দিক হয়ে কানের প্যাচ ঘুরিয়ে কানের ছিদ্র বরাবর এসে থামবে। অতঃপর দুই হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের মাথা দুই কানের ছিদ্রে প্রবেশ করাতে হবে। তারপর দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের পেট দিয়ে দুই কানের পিঠের দিকের লতি থেকে শুরু করে উপর দিকে শেষ পর্যন্ত মাসেহ করবে। অতঃপর ঘাড় মাসেহ করতে হবে। গলার বিপরীত দিককে ঘাড় বলা হয়। ঘাড় মাসেহ করতে ডান হাতের আঙ্গুলের মাথা বাম হাতের আঙ্গুলের মাথার সাথে মিলিয়ে দুই হাত ঘাড়ের মাঝামাঝি রাখতে হবে। অতপর ঐ বরাবর সোজাভাবে ডান হাত ডান দিকে এবং বাম হাত বাম দিকে টেনে নিতে হবে। হাতদ্বয় সোজাসুজি টানা না হলে বরং বাঁকা করে নিচের দিকে টেনে নিলে গলা মাসেহ হয়ে যাবে, তবে তা বিদয়াত হবে। মাথা, কান এবং ঘাড় মাসেহ করা হলে দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করতে হবে।
জ) পা ধৌত করার নিয়ম :
দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা অজুর মধ্যে ফরয। প্রথমে ডান পা তিনবার ধৌত করতে হবে। প্রতিবারই পানি দিয়ে বাম হাত দ্বারা পা ঘষতে হবে।
অতঃপর বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা ডান পায়ের কনিষ্ঠা আঙ্গুল হতে শুরু করে বৃদ্ধাঙ্গুল পর্যন্ত খিলাল করতে হবে। খিলাল করার সময় প্রতিবারই বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল ডান পায়ের তলা হতে আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে উপরের দিকে তুলতে হবে। আঙ্গুল খিলাল করা হলে ডান পায়ের কনিষ্ঠা আঙ্গুল হতে বৃদ্ধাঙ্গুল পর্যন্ত আঙ্গুলের গোড়ায় বাম হাতের কণিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা টান দিতে হবে। অতঃপর এ নিয়মেই বাম পা তিনবার ধৌত করতে হবে। তবে খিলাল ও সংশ্লিষ্ট কাজগুলো বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল হতে কনিষ্ঠা আঙ্গুল পর্যন্ত করতে হবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












