দস্তরখানায় খাদ্য খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক (৫)
, ০৫ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১২ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৫ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
দস্তরখানায় খাদ্য খাওয়ার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পালনের ক্ষেত্রে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল দৃঢ়তা মুবারকঃ
আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারক কালে জেরুজালেম অর্থাৎ পবিত্র বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফ ইহুদীদের হাত থেকে মুক্ত করেন মুসলিম সেনাপতি বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবূ উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। সেখানকার ইহুদী সম্প্রদায়দের আসমানী কিতাবে বর্ণিত ছিল যে, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতগণ পবিত্র বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফ বিজয় করবেন। এমনকি সেই সময় যিনি আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন থাকবেন তিনি কি অবস্থায় আগমন করবেন সেটাও সেখানে বর্ণনা করা ছিল। তাই মুসলমানদের পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ বিজয়ের পর ইহুদীরা ফিকির করলো তবে উনারাই কি সেই সম্মানিত ক্বওম? তাই তারা কিতাবের সাথে মিলানোর জন্য হযরত আবূ উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট আবেদন করলো যে, তারা সবকিছু মুসলমানদের বুঝিয়ে দিবে। তবে যিনি আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যদি দয়া করে এখানে তাশরীফ মুবারক আনেন উনার নিকট তারা সবকিছু হস্তান্তর করবে।
তখন হযরত আবূ উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট এই বলে চিঠি লিখেন যে, পবিত্র বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফ ইহুদীদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে, তবে তাদের ইচ্ছা হলো, পবিত্র বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফ উনার চাবি যিনি আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন উনার নিকট হস্তান্তর করবে। সুতরাং অনুগ্রহপূর্বক আপনি পবিত্র বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফে তাশরীফ মুবারক আনুন।
চিঠি পেয়ে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, তখন উনার পরিধানে কোনো নতুন লিবাস মুবারক ছিলেন না। বরং উনার পরিধানে যে লিবাস মুবারকটি ছিলেন তাতে তের থেকে চৌদ্দটি পট্টি মুবারক ছিলেন। তারমধ্যে একটি পট্টি মুবারক ছিলেন চামড়ার।
হযরত আবূ উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে আহলান-সাহলান (স্বাগত) জানানোর জন্য অনেক দূর এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি উনার পোশাক মুবারকের অবস্থা দেখে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি কি আপনার পরিধেয় লিবাস বা পোশাক মুবারকটি পরিবর্তন করে নিবেন?
জবাবে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, না।
نَحْنُ قَوْمٌ اَعَزَّنَا اللّٰهُ بِالْإِسْلَامِ.
অর্থ: আমরা তো এমন সম্প্রদায়, যাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম দ্বারা সম্মানিত করেছেন। কাজেই আমাকে এরূপ অবস্থাতেই যেতে দিন। সুবহানাল্লাহ!
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সম্পূর্ণ সফরেই পর্যায়ক্রমে নিজে একবার উটের উপর সাওয়ার মুবারক হতেন, একবার উনার খাদিমকে সাওয়ার করাতেন ইনসাফের জন্য। যখন পবিত্র বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফে পৌঁছলেন তখন তিনি ছিলেন উটের লাগাম ধরা অবস্থায় নিচে আর উনার খাদেম ছিলেন উটের উপর সাওয়ার অবস্থায়। সুবহানাল্লাহ!
ইহুদীরা পবিত্র তাওরাত শরীফ কিতাবের বর্ণনার সাথে সবকিছু মিলাচ্ছিল। যখন দেখলো পবিত্র তাওরাত শরীফ কিতাবের বর্ণনার সাথে সব মিলে গিয়েছে তখন তারা উনার নিকট পবিত্র বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফ উনার চাবি হস্তান্তর করলো।
চাবি হস্তান্তরের পর ইহুদীরা আরজু করলো, হে আমীরুল মু’মিনীন আলাইহিস সালাম! আপনি এতো দূর থেকে এসেছেন; আপনার সম্মানার্থে আমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নিয়মেই কিছু মেহমানদারীর ব্যবস্থা করতে চাই, যদি আপনি সম্মতি মুবারক প্রকাশ করেন।
সম্মতি মুবারক পেয়ে ইহুদীরা মেহমানদারীর ব্যবস্থা করলো। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সকলকে নিয়ে যথাসময়ে সেখানে উপস্থিত হলেন। উনার সম্মুখে চামড়ার সুন্নতী দস্তরখানা বিছিয়ে দেয়া হলো এবং তাতে রুটি ও একটি পাত্রে গোশত দেয়া হলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি দস্তরখানা থেকে রুটি নিয়ে গোশত দিয়ে খাবার খেলেন। খাওয়া শেষে দস্তরখানায় পড়ে থাকা রুটির টুকরোগুলো টুকিয়ে টুকিয়ে খাচ্ছিলেন।
এটা দেখে জনৈক ব্যক্তি বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! এখানে অনেক রাজা-বাদশা, আমীর-উমরা উপস্থিত, আপনি যদি তাদের সম্মুখে এরূপভাবে রুটির টুকরা টুকে টুকে খান, তবে কেমন দেখা যায়? জবাবে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি জালালী তবীয়তে বলেন-
اَأَتْرُكُ سُنَّةَ حَبِيْبِيْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَجْلِ هٰذِهِ الْحُمَقَاءِ .
অর্থ: আমি কি এ সকল আহমকদের জন্য আমার মহাসম্মানিত রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক পরিহার করবো? সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ দস্তরখানায় খাদ্য খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক এবং খাওয়ার পর দস্তরখানা বা প্লেট পরিষ্কার করে খাওয়া “সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ” আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সর্বাবস্থায় সবকিছুর উপর মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিলেন সর্বাবস্থায় মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে। খাদ্য খাওয়ার সময় দস্তরখানা ব্যবহার করতে হবে এবং দস্তরখানার খাবার পড়ে গেলে তা উঠিয়ে খেতে হবে; এটাই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। এই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পালন করতে কোন লজ্জাবোধ করা যাবে না। বর্তমান সময়ে অনেকেই নিজের দুনিয়াবী শান-শওক্বত, বরত্ব প্রকাশের জন্য দস্তরখানায় নয়; বরং তারা ডাইনিং টেবিলে বেজাতীদের সাথে মিল রেখে আহার করতে পছন্দ করে। নাউযুবিল্লাহ!
অথচ, সমস্ত শান-শওক্বত, বরত-মহত্ব¡, ইজ্জত-সম্মানের মালিক হচ্ছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারাই। আর উনাদেরকে যারা ইত্তেবা করবে, আমলগুলো মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীবে করবে অর্থাৎ মু’মিনগণ উনারাও সেই ইজ্জত-সম্মান, শান-শওক্বতের অধিকারী হবেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কাল্লামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন-
وَلِلّٰهِ الۡعِزَّةُ وَلِرَسُوۡلِهٖ وَلِلۡمُؤۡمِنِيۡنَ وَلٰـكِنَّ الۡمُنٰفِقِيۡنَ لَا يَعۡلَمُوۡنَ.
অর্থ: সমস্ত ইজ্জত-সম্মান ও মর্যাদা মুবারক উনার অধিকারী মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং মু’মিন বান্দাগণ; কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ; পবিত্র আয়াত শরীফ নং: ৮)
কাজেই, মুসলমানদের জন্য দস্তরখানায় খাদ্য খাওয়ার ক্ষেত্রে এবং যাবতী মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা করার ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই হিনমন্যতায়ভোগা যাবেনা; বরং মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার আমল করতে পারাটাই হচ্ছে শান-শওক্বত ও গর্বের বিষয়।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
চুল, দাড়িতে তেল দেয়ার ও আচঁড়ানোর মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘কিস্সা’
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘কিস্সা’
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘কিস্সা’
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘কিস্সা’
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘কিস্সা’
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার কিশমিশ
০৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন বিভিন্ন প্রকারের সুন্নতী খাবার ‘খেজুর’
০৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খরগোশের গোশত খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক
০৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মাথায় ব্যবহার করার সুন্নতী ‘কেনায়া
০৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কাফির-মুশরিকদের পণ্য পরিত্যাগ করে মহাসম্মানিত সুন্নতী পণ্য ব্যবহার করতে হবে
০৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাদ্য ‘যব’
০৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)