ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫)
, ১১ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২১ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ০৮ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ফতওয়া বিভাগ
বিধর্মীদের অনুসরণ করা হারাম:
মূলতঃ দাড়ি চেঁছে ফেলা ও গোঁফ লম্বা রাখা বিধর্মীদের অনুসরণ হওয়ার শামিল, যা শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ فِطْرَةِ الْإِسْلاَمِ أَخْذُ الشَّارِب، وَإِعْفَاءُ اللِّحَى، فَإِنَّ الْمجُوسَ تُعْفِي شَوَارِبَهَا وَتُحْفِي لِحَاهَا، فَخَالِفُوهُمْ، فَحُفُّوا شَوارِبَكُمْ وَاعْفُوا لِحَاكُمْ
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “গোঁফ কাটা (ছোট করা) ও দাড়ি লম্বা করা ইসলামী ফিতরাতের অর্ন্তভুক্ত। কেননা মজুসীরা (অগ্নি উপাসকরা) গোঁফ লম্বা রাখে ও দাড়ি চেঁছে ফেলে। অতএব, তোমরা (মুসলমানরা) মজুসীদের বিরুদ্ধাচরণ করো, গোঁফ ছোট রাখো ও দাড়ি লম্বা করো। (ইবনে হিব্বান)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দাড়ি চেঁছে ফেলা ও গোঁফ লম্বা রাখাকে মজুসীদের (অগ্নি উপাসকদের) শেয়ার বা বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর দাড়ি লম্বা করা ও গোঁফ ছোট রাখা ইসলামী শেয়ার বা বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ وَفِّرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ
অর্থ: হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “তোমরা (মুসলমানরা) মুশরিকদের বিপরীত করো, অর্থাৎ দাড়ি লম্বা করো ও গোঁফ ছোট করো। (বুখারী শরীফ)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, দাড়ি চেঁছে ফেলা ও গোঁফ লম্বা রাখা মুশরিকদের আমল বা শেয়ার। সুতরাং যারা দাড়ি চেঁছে ফেললো ও গোঁফ লম্বা রাখলো, মূলতঃ তারা মুশরিক, মজুসী তথা বিধর্মীদের অনুসরণ-অনুকরণ করলো। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে অসংখ্য স্থানে বিধর্মী তথা ইহুদী-নাছারা, মজুসী, মুশরিকদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَنْ تَرْضٰى عَنْكَ الْيَهُوْدُ وَلَا النَّصَارٰى حَتّٰى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ قُلْ إِنَّ هُدَى اللهِ هُوَ الْهُدٰى وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُمْ بَعْدَ الَّذِي جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيرٍ
অর্থ: ইহুদী ও নাছারারা কখনোই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, আপনি তাদের (ইহুদী-নাছারার) ধর্মের (নিয়ম-নীতির) যতক্ষণ পর্যন্ত অনুসরণ না করবেন। বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার হিদায়েতই প্রকৃত হিদায়েত। আপনার নিকট ইলিম (অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম) আসার পর যদি (কেউ) ইহুদী-নাছারাদের নিয়ম-নীতির অনুসরণ-অনুকরণ করে, তবে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে কোন অভিভাবক এবং সাহায্যকারী পাবে না। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১২০)
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে এ প্রসঙ্গে আরো ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهٗ مِنْهُمْ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত হবে। (পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫১)
আর এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِيْنَ أَتَاهُ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ إِنَّا نَسْمَعُ أَحَادِيْثَ مِنْ يَّهُوْدَ تُعْجِبُنَا أَفَتَرٰى أَنْ نَكْتُبَ بَعْضَهَا فَقَالَ أَمُتَهَوِّكُوْنَ أَنْتُمْ كَمَا تَهَوَّكَتِ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارٰى لَقَدْ جِئْتُكُمْ بِهَا بَيْضَاءَ نَقِيَّةً وَلَوْ كَانَ حَضْرَتْ مُوسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ حَيًّا مَا وَسِعَهٗ إِلَّا اتِّبَاعِيْ
অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, (ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আমরা ইহুদীদের থেকে কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্যবোধ করি, সেখান থেকে কিছু আমরা লিখে রাখবো কি? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আপনারাও কি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন? যে রকম ইহুদী-নাছারারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে? অবশ্যই আমি আপনাদের নিকট পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল ও পরিষ্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তিনিও যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তবে উনাকেও আমার অনুসরণ করতে হতো। (মুসনাদে আহমদ, বায়হাক্বী শরীফ) (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২২)
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১)
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯)
২৬ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৮)
১৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৭)
০৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪)
১১ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় (১০)
৩১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় (৯)
২৪ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৭)
০৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪)
০২ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া জায়িয নয়-১
২৪ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩)
১৬ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)