ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩)
, ০৫ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ০২ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ফতওয়া বিভাগ
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
অর্থ: যে ব্যক্তি ‘ইসলাম’ ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম তালাশ করবে, তার থেকে উহা কবুল করা হবেনা, বরং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থের অন্তর্ভুক্ত হবে। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫)
অতএব, কেউ যদি পরকালে ধ্বংস হতে নাযাত পেতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই দ্বীন ইসলাম উনার যে নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা রয়েছে, তা পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। এক কথায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ ইত্তেবা বা অনুসরণ করতে হবে। আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَنْ أَبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে যাবে একমাত্র ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে আমাকে অস্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসা করা হলো- কোন ব্যক্তি আপনাকে অস্বীকার করলো ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে অনুসরণ অনুকরণ করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে। আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করেছে অর্থাৎ আমাকে অনুসরণ-অনুকরণ করেনি সে ব্যক্তিই মূলতঃ আমাকে অস্বীকার করেছে। (মুসলিম শরীফ)
অতএব, স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা তথা মহান আল্লাহ পাক উনার ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে হলে, দ্বীন ইসলাম অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা শরীফ ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। কারণ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা শরীফ ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অনুসরণ-অনুকরণ করার অর্থই হচ্ছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ-অনুকরণ করা, যা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের পূর্বশর্ত। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
অর্থ: আমার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, তোমরা যদি মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করে থাকো, তাহলে আমাকে ইত্তেবা করো। তবেই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুণাহসমূহ ক্ষমা করবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, মানুষ আশরাফুল মাখলূকাত সত্য কথাই, তবে এই আশরাফিয়াতই নাযাত পাওয়ার জন্যে যথেষ্ট নয়, বরং নাযাত পেতে হলে সর্বপ্রথম আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত ভিত্তিক ঈমান বা আক্বীদাহ পোষণ করতে হবে।
অতঃপর তাক্বওয়া অর্জন করতে হবে। আর তাক্বওয়া অর্জন করার একটাই পথ, তা হলো- সর্বক্ষেত্রে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করতে হবে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা শরীফ ও ক্বিয়াস শরীফ অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। কাজেই দাড়ি ও গোঁফের ব্যাপারেও পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা শরীফ ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অনুসরণ করতে হবে।
মানুষ শ্রেষ্ঠ আকৃতির অধিকারী:
মহান আল্লাহ পাক তিনি মানব জাতিকে “আশরাফুল মাখলূকাত” হিসাবে সৃষ্টি করার সাথে সাথে মানব জাতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ বা সর্বোত্তম আকৃতি দান করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন যে-
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ
অর্থ: আমি মানুষকে সর্বোত্তম ছূরত বা আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)
আবার পুরুষ ও মহিলা উভয়ের মধ্যে আকৃতিগত পার্থক্য বজায় রাখার জন্যে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন কিছুটা পার্থক্য রেখেছেন। তাছাড়া যে কোন প্রাণীই হোক না কেন, তাদের মধ্যে কোনটা পুরুষ আর কোনটা মহিলা, তা বুঝার একটি লক্ষণ বা আলামত নিশ্চয়ই রয়েছে। যেমন- সিংহের পুরুষের ঘাড়ে কেশর রয়েছে, কিন্তু সিংহীর ঘাড়ে কেশর নেই।
অনুরূপ মানুষের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা পার্থক্য করার জন্যেও মহান আল্লাহ পাক তিনি বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন কিছু আলামত বা লক্ষণ দান করেছেন। তার মধ্যে একটি বিশেষ পার্থক্য ও লক্ষণ হলো- “দাড়ি ও গোঁফ”। অর্থাৎ পুরুষকে দাড়ি ও গোঁফ দান করেছেন, কিন্তু মহিলাকে তা দেয়া হয়নি। সুতরাং যাকে যে আকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেটাই তার জন্যে সর্বোত্তম আকৃতি। অতএব যে পুরুষ তার দাড়ি ও গোঁফ চেঁছে ফেললো বা মু-ণ করে ফেললো, সে মহান আল্লাহ পাক উনার দেয়া সর্বোত্তম আকৃতিকে বিনষ্ট করলো। মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার দেয়া সর্বোত্তম আকৃতিকে বিকৃত করা ইবলিস শয়তানকে অনুসরণ-অনুকরণ করারই নামান্তর। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫)
২০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪)
০২ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া জায়িয নয়-১
২৪ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২)
১০ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১)
০১ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯)
২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা পালন করা ফরয
১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা পালন করা ফরয এবং ছবি তোলা হারাম
১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া নিয়ে একটি প্রশ্নের জবাব
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা ফরয এবং ছবি তোলা হারাম
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা ফরজ এবং ছবি তোলা হারাম
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৮)
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)