ফতওয়া
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৮)
, ২৮ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২২ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ২০ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ফতওয়া বিভাগ
حِزْبُ اللهِ (হিয্বুল্লাহ) অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত দল, মত, পথ, পদ্ধতি, শরীয়ত, পন্থা, নিয়ম-নীতি ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
(২২৫)
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ. وَمَنْ يَتَوَلَّ اللهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللهِ هُمُ الْغَالِبُونَ.
অর্থ: তোমাদের বন্ধুতো মহান আল্লাহ পাক তিনি, উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মু’মিনগণ। মু’মিন উনারা ছলাত কায়িম করেন, যাকাত দেন এবং বিনয়-নম্রতা সম্পন্ন। আর যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মু’মিনগণ উনাদেরকে বন্ধুরূপে (বা অভিভাবক হিসেবে) গ্রহণ করেন, উনারাই হিযবুল্লাহ (বা মহান আল্লাহ পাক উনার দল) এবং উনারাই চির বিজয়ী। (পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫-৫৬)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ভিত্তিতে হিযবুল্লাহ উনার সংজ্ঞা নিম্নরূপ হওয়া বাঞ্ছনীয়-
“মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ণ অনুসরণ এবং হক্কানী মু’মিন তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও ইমাম-মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের চলার পথকেই ‘হিযবুল্লাহ’ বলা হয়। ” এটাই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ভিত্তিতে সঠিক সংজ্ঞা। আর ইহাই তো মাযহাব উনারও শাব্দিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা। অতএব হিয্ব্ ও মাযহাব শব্দ দুটি সমার্থবোধক শব্দ।
এখন স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে ব্যবহৃত হিয্ব্ অর্থই ছিরাত, সাবীল, মাযহাব বা সঠিক পথ ইত্যাদি।
৪. حَبْلُ اللهِ (হাবলুল্লাহ): حَبْلٌ ‘হাব্ল্’ শব্দটি মাযহাব শব্দের সমার্থবোধক। মাযহাব শব্দটির মতোই হাবলুল্লাহ বাক্যাংশ মুবারক উনার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে রজ্জু, নিয়ম-নীতি, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র দ্বীন ইসলাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মত, পথ, পন্থা, পদ্ধতি, মাযহাব, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ ইত্যাদি। আর পারিভাষিক দৃষ্টিতেও হাবলুল্লাহ বাক্যাংশ মুবারক মাযহাব শব্দের মতোই অর্থ প্রদান করে।
মহান আল্লাহ তায়ালা রব্বুল আলামীন তিনি উনার পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
(২২৬)
وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعَا وَّلَاتَفَرَّقُوْا.
অর্থ: তোমরা সকলেই মহান আল্লাহ পাক উনার রজ্জুকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)
নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, حَبْلُ اللهِ হাবলুল্লাহ হচ্ছেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং এবং উনার আনিত পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র শরীয়ত, পবিত্র দ্বীন ইসলাম, মা’রিফত ও যাবতীয় হক্ব পথ উনার হুকুমসমূহ।
অতএব, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার যাবতীয় হুকুম-আহকাম এবং আহকাম বিশেষজ্ঞগণ উনাদের পথই হচ্ছে হাব্লুল্লাহ। আর মাযহাব উনার উদ্দেশ্যও সেটাই।
এখন স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে ব্যবহৃত হাব্ল্ ও হাবলুল্লাহ অর্থই ছিরাত, সাবীল, মাযহাব বা সঠিক পথ ইত্যাদি।
৫. الاسلام (আল ইসলাম): এ শব্দটি বাবে افعال -এর মাছদার বা ক্রিয়ামূল। ইসলাম শব্দটিও মাযহাব শব্দের সমার্থবোধক। মাযহাব শব্দটির মতোই ইসলাম উনার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- অনুগত হওয়া, আত্মসমর্পণ করা, নিরাপত্তা দান, শিরোধার্য করা, বিনয় প্রকাশ করা, আনুগত্যতার সাথে আত্মসমর্পণ করা, শান্তি, ইত্তিবা, পবিত্র ইসলাম পালন করা, আছ্ ছিরাতুল মুস্তাক্বীম তথা সরল-সঠিক মত পথ মান্য করা, মাযহাব অনুসরণ করা ইত্যাদি। আর পারিভাষিক দৃষ্টিতে ইসলাম শব্দটিও মাযহাব শব্দের মতোই অর্থ প্রদান করে। শরীয়ত উনার পরিভাষায়-
(২২৭)
ان الاسلام هو الخضوع والانقياد بمعنى قبول الاحكام والاذعان بـها.
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের যাবতীয় হুকুম গ্রহণার্থে এবং ওইগুলোর প্রতি আনুগত্য স্থাপনের উদ্দেশ্যে বশ্যতা স্বীকার করাকে ‘পবিত্র ইসলাম’ বলা হয়। (শরহুল আক্বায়িদিন নাসাফিয়্যাহ ১২৮ পৃষ্ঠা)
(২২৮-২৩২)
الاسلام: فى الدر الـمختار هو تصديق سيدنا محمد صلى الله عليه وسلم فى جميع ما جاء به عن الله تعالى مـما علم مجيئه ضرورة.
অর্থ: ‘আদ দুররুল মুখতার’ কিতাবে উল্লেখ আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান রব তায়ালা উনার কাছ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন বলে জানা গেছে ওইসব কিছুর প্রতি তাছদীক্ব বা বিশ্বাস স্থাপন করা (মেনে নেয়া)কে পবিত্র ইসলাম বলে। (আত-তা’রীফাতুল ফিকহিয়্যাহ ১৭৭ পৃষ্ঠা, আদ দুররুল মুখতার শরহু তানবীরিল আবছার, লিসানুল আরব লিইবনি মানযূর ৪র্থ খ- ২০৮০ পৃষ্ঠা প্রকাশনা: দারুল মায়ারিফ, আল মু’জামুল ওয়াসীত্ব, আল মু’জামুল ওয়াজীয)
(মাসিক আল বাইয়্যিনাত থেকে সংকলিত। ) (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (৩১)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (৩০)
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৯)
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৭)
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৬)
১৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৫)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৪)
০৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৩)
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২২)
৩০ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২১)
২৬ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২০)
২৩ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (১৯)
১৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












