ফতওয়া
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (৩২)
, ১৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৯ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ফতওয়া বিভাগ
তাকলীদ তথা অনুসরণ উনার প্রকারভেদ:
তাক্বলীদ তথা অনুসরণ সাধারণত: দুই প্রকার। যথা-
১. التقليد الشرعى আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়ত সমর্থিত অনুসরণ:
পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস উনাদের দলীল-আদিল্লাহ মুতাবিক ইসলামী শরীয়ত উনার যাবতীয় হুকুম-আহকাম মেনে চলাকে ‘আত-তাকলীদুশ শারয়ী তথা শরীয়ত সমর্থিত অনুসরণ’ বলে। উনাকে ‘তাকলীদুল ইসলাম’, ‘তাকলীদুদ্ দ্বীন’ ও ‘তাকলীদুদ্ দালায়িল আরবায়াহ’ অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম উনার চারখানা দলীল উনাদের অনুসরণও বলা হয়ে থাকে।
২. التقليد غير الشرعى আত-তাকলীদু গাইরুশ্ শারয়ী তথা শরীয়ত বহির্ভূত অনুসরণ:
পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস উনাদের দলীল-আদিল্লাহ উনাদের বিপরীতে নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো শয়তান ও তাগুতী যাবতীয় বাতিল মত-পথ মেনে চলাকে ‘আত-তাকলীদু গাইরুশ শারয়ী তথা শরীয়ত বহির্ভূত অনুসরণ’ বলে। একে ‘তাকলীদুন নাফ্স’ ও ‘তাকলীদুল হাওয়া’ তথা প্রবৃত্তির অনুসরণও বলা হয়ে থাকে।
১. ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়ত সমর্থিত অনুসরণ’ উনার আলোচনা ও বিধান:
التقليد الشرعى আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়ত সমর্থিত অনুসরণ:
পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমাউল উম্মাহ ও ছহীহ ক্বিয়াস উনাদের দলীল-আদিল্লাহ মোতাবেক ইসলামী শরীয়ত উনার যাবতীয় হুকুম-আহকাম মেনে চলার জন্য কারো অনুসরণ করাকে ‘আত-তাকলীদুশ শারয়ী তথা শরীয়ত সমর্থিত অনুসরণ’ বলে। উনাকে ‘তাকলীদুল ইসলাম’, ‘তাকলীদুদ্ দীন’ ও ‘তাকলীদুদ্ দালায়িলিল আরবায়াহ’ অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম উনার চারখানা দলীল উনাদের অনুসরণও বলা হয়ে থাকে।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে এবং উলিল্ আমর তথা হযরত ইমাম মুজতাহিদ-আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে অনুসরণ করাই ‘আত-তাকলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়ত সমর্থিত অনুসরণ’।
সম্মানিত শরীয়ত সমর্থিত অনুসরণ করা ফরযে আইন। আর শরীয়ত বহির্ভূত অনুসরণ করা হারাম ও নাজায়িয। কারণ, শরীয়তসম্মত অনুসরণ করতে নির্দেশ করা হয়েছে। শরীয়ত সমর্থিত অনুসরণ করা যে ফরয-ওয়াজিব এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে যথেষ্ট আলোচনা উল্লেখ আছে। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
(২৪১)
اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ. صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ.
অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ তায়ালা! আপনি আমাদেরকে সঠিক পথ দান করুন। উনাদের পথ যাদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন। ” (পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫-৬)
(২৪২)
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম বলতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রদর্শিত পথকে বুঝানো হয়েছে। অতঃপর উনার যারা পরিপূর্ণ অনুসারী উনাদেরকে বুঝানো হয়েছে।
অতএব উনাদেরকে অনুসরণ করাই ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা সম্মানিত শরীয়ত উনার অনুসরণ’।
মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
(২৪৩)
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ
অর্থ: যখন তাদেরকে বলা হয় তোমরা ঈমান আনো, যেরকম অন্যান্য ব্যক্তিগণ ঈমান এনেছেন। (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)
এখানে আন-নাস বা ব্যক্তি বলতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ উনাদের অনুসরণে উনাদের মতো ঈমান গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। ইহাই ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা সম্মানিত শরীয়ত উনার অনুসরণ’।
মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
(২৪৪)
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا.
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার আনুগত্য করো, সাইয়্যিদুনা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরন-অনুকরণ করো এবং তোমাদের মধ্যে যাঁরা উলিল আমর অর্থাৎ যিনি বা যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পরিপূর্ণ অনুগত এবং অনুসরণ ও অনুকরণকারী উনাদের অনুসরণ করো। তোমাদের মধ্যে যদি কোন বিষয়ে মতবিরোধ হয়, তাহলে উক্ত বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে প্রত্যাবর্তন করো। অর্থাৎ যে উলিল আমর উনার পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দলীল বেশী সে উলিল আমর উনাকে ইত্বায়াত করতে হবে। যদি তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাকো। এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেوَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ অর্থাৎ আদেশদাতা উনাদেরকে অনুসরণ করার দ্বারা ইমাম, মুজতাহিদ, ওলীআল্লাহ, ফক্বীহ, মুফতী ও উলামা কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে ইত্তিবা তথা অনুসরণ করতে নির্দেশ করা হয়েছে। আর ইহাই ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা শরীয়ত সমর্থিত অনুসরণ’। সুবহানাল্লাহ!
(মাসিক আল বাইয়্যিনাত থেকে সংকলিত। ) (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (৩১)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (৩০)
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৯)
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৮)
২০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৭)
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৬)
১৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৫)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৪)
০৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৩)
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২২)
৩০ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২১)
২৬ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২০)
২৩ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












