ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২)
, ২৮ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১১ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১০ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২৬ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ফতওয়া বিভাগ
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِيْنًا
অর্থ: আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সমাপ্ত করলাম এবং তোমাদের জন্যে পবিত্র ইসলাম উনাকেই দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম। (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈমানদারগণকে লক্ষ্য করে ইরশাদ মুবারক করছেন যে-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا ادْخُلُوْا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَّلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করো। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২০৮)
অতএব প্রমাণিত হলো যে, হাক্বীক্বী মুত্তাক্বী বা ঈমানদার হতে হলে, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা শরীফ ও ক্বিয়াস শরীফ তথা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তো বলেই দিয়েছেন-
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা নিয়ে এসেছেন বা আদেশ মুবারক করেছেন, তা আঁকড়িয়ে ধরো, আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তা থেকে বিরত থাকো। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
সুতরাং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নিষেধ মুবারক মেনে চলা তথা উনার পরিপূর্ণ ইত্তেবা বা অনুসরণ করাই হচ্ছে হাক্বীক্বী তাক্বওয়া। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন আতক্বা অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ মুত্তাক্বী। অতএব যারা উনার পুঙ্খানুপুঙ্খ ইত্তেবা বা অনুসরণ করবে, একমাত্র তারাই মুত্তাক্বী হিসাবে গণ্য হবে। আর এর বিপরীত যারা করবে, তাদের পক্ষে হাক্বীক্বী মুত্তাক্বী বা ঈমানদার হওয়া কখনোই সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ جَاءَ ثَلاَثَةُ رَهْطٍ إِلَى أَزْوَاجِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أُخْبِرُوْا بِهَا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوْهَا فَقَالُوا : وَأَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهٖ وَمَا تَأَخَّرَ فَقَالَ أَحَدُهُمْ : أَمَّا أَنَا فَأُصَلِّى اللَّيْلَ أَبَدًا وَقَالَ اللْاٰخَرُ : إِنِّى أَصُوْمُ الدَّهْرَ فَلاَ أُفْطِرُ وَقَالَ اللْاٰخَرُ أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ وَلاَ أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَنْتُمُ الَّذِيْنَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا إِنِّى لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَأَتْقَاكُمْ لَهٗ لَكِنِّى أَصُوْمُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّىْ وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِىْ فَلَيْسَ مِنِّىْ
অর্থ: হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, (একবার) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইবাদত মুবারক সম্পর্কে জানার জন্যে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের নিকট তিনজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আসলেন। যখন উনাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইবাদত মুবারক সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া হলো, তখন উনারা ধারণা করলেন যে, উনার ইবাদতগুলো পরিমাণে কম। পরক্ষণে চিন্তা করে বললেন, আমরা উনার তুলনায় কোথায়? তিনি পূর্বের ও পরের সকল গুণাহখাতা থেকে পবিত্র অর্থাৎ তিনি মাছূম বা নিষ্পাপ। (কাজেই উনার অল্প ইবাদত করলেও চলবে, কিন্তু আমরা তো মাছূম নই, তাই আমাদের আরো বেশী ইবাদত করতে হবে।) সুতরাং উনাদের মধ্য হতে একজন বললেন, আমি (আজ থেকে) সারা রাত্র নামায পড়বো, ঘুমাবো না। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি সারা বৎসর রোযা রাখবো, ভঙ্গ করবো না। তৃতীয়জন বললেন, আমি আহলিয়া বা স্ত্রীর নিকট যাওয়া থেকে বিরত থাকবো। (এমন সময়) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের নিকট এসে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, আপনারা কি এরূপ কথা বলেছেন? সাবধান! মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, আপনাদের চেয়ে আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে অধিক ভয় করি এবং আমি আপনাদের চেয়েও অধিক মুত্তাক্বী। (তারপরও) আমি রাত্রে নামায পড়ি ও ঘুমাই, রোযা রাখি আবার রোযা ভঙ্গ করি এবং আমি নিসবতে আযীমাহ বা বিবাহ-শাদী করেছি। সুতরাং এগুলো আমার সুন্নত মুবারকের অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নত মুবারক থেকে ফিরে যাবে, সে আমার উম্মতের অর্ন্তভুক্ত নয়। (মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভিত্তিতে দু’টা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ১। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলেন ‘আতক্বা’ অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ মুত্তাক্বী। ২। কেউ যদি হাক্বীক্বী মুত্তাক্বী হতে চায় তবে তাকে অবশ্যই প্রতি ক্ষেত্রে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। অর্থাৎ তিনি যে দ্বীন তথা শরীয়ত নিয়ে এসেছেন, উক্ত দ্বীন বা শরীয়ত মোতাবেক চলতে হবে। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৭)
০৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫)
২০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪)
০২ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া জায়িয নয়-১
২৪ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩)
১৬ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১)
০১ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯)
২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা পালন করা ফরয
১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা পালন করা ফরয এবং ছবি তোলা হারাম
১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া নিয়ে একটি প্রশ্নের জবাব
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা ফরয এবং ছবি তোলা হারাম
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা ফরজ এবং ছবি তোলা হারাম
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)